বর্ষার ভরা পদ্মা গিলতে বসেছে বিএসএফের নারুখাকি আউটপোস্টকে। পদ্মাপাড় থেকে ৩০০ মিটার দূরে অবস্থান ওই আউটপোস্টের। পদ্মা তার পাড় ভাঙতে ভাঙতে একেবারে ওই আউটপোস্টের নাকের ডগায় হাজির হয়েছে। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে গোটা তিরিশেক বাড়ি। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বড় কর্তারা জানাচ্ছেন, গুরুত্বপূর্ণ নিমতিতা সীমান্তের এই আউটপোস্ট যাতে ভাঙনের কবলে না পড়ে তার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোন তরফেই ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। |
সীমান্তবাসীর কাছে ভাঙন বড় চেনা দৃশ্য। গত এক মাস ধরে চলতে থাকা পদ্মার ভাঙনে নারুখাকির চর এলাকার ৬০০ পরিবার চরম সংকটে পড়েছে। কৃষিকাজই প্রধান পেশা এলাকার লোকজনের। কিন্তু ভাঙনের ফলে তলিয়ে গিয়েছে চাষের জমি। ফলে জীবিকা হারিয়েছে বহু পরিবার। প্রায় ৪০টি বসতবাড়িও পদ্মায় তলিয়ে গিয়েছে। ঘরহারা লোকজন এ দিক সে দিক কোনওরকমে মাথা গুঁজে রয়েছে। প্রবীন গোপী মণ্ডল নামে এক এলাকাবাসী বললেন, “গত দু’বছর ধরে পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। মাস খানেক ধরে তা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বহু বাড়ি ও চাষের জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। মূলত পদ্মার পূর্বপাড়ের ভাঙন কবলিত ভিটেমাটিহীন বাসিন্দারা এখন পশ্চিমে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কতটা শেষরক্ষা হবে, বোঝা যাচ্ছে না।” অন্যদিকে ভাঙনের ভ্রুকুটি থেকে আউটপোস্টকে রক্ষার আর্জি জানিয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছেন বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় এডিজি বংশীধর শর্মা। গত সপ্তাহে তিনি জেলায় এসে বিএসএফের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। বুধবার নিমতিতা বিএসএফ ক্যাম্পে সাংবাদিক বৈঠক করেন ২০ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কোম্পানি কম্যান্ড্যান্ট অরবিন্দ ঘিরদিয়াল। তিনি বলেন, “পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে নারুখালি আউটপোস্টের কাছে হাজির হয়েছে। পদ্মা থেকে ওই আউটপোস্টের দূরত্ব দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ মিটার। এই সীমান্ত চৌকি থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের দূরত্ব সাকুল্যে ৩৫০ মিটার। ভাঙনের তীব্রতা দেখে মনে হচ্ছে, মাসখানেকের মধ্যে এই চৌকি পদ্মাগর্ভে চলে যাবে। গত এক মাসে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সেচ দফতরে একাধিক চিঠি দিয়েও কোনও কাজ হয়নি। বিষয়টি জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও।”
ভাঙন রুখতে স্থানীয় স্তরে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে? নারুখালি গ্রাম থেকে পঞ্চায়েতের বিজয়ী সদস্য তৃণমূলের মকবুল হোসেন বলেন, “ভাঙনের কথা বিডিওকে জানাতে কিছু ত্রান মিলেছে মাত্র। ভাঙন রুখতে কেউ কোনও তৎপরতা দেখায় না।” ভাঙন পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক তা স্বীকার করেছেন রাজ্য সেচ দফতরের মুর্শিদাবাদের ইঞ্জিনিয়ার অনীশ ঘোষও। তিনি বলেন, “ভাঙনের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। ১৯ অগস্ট দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা ভাঙন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে নারুখাকিতে যাবেন। তারপর রিপোর্ট প্রস্তুত করে তা পাঠানো হবে রাজ্য দফতরে। তবে বর্ষার ভরা পদ্মার উপর কোনও কাজ করা যাবে না। পুজোর পর ভাঙন রোধের কাজ শুরুর চেষ্টা করা হবে।” |