সমস্যা ছিল জমি জট। প্রায় দেড় বছর পরে সেই সমস্যা মিটতেই পুরোদমে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন এবং ওভারহেড জলাধার তৈরির কাজ শুরু করলেন কলকাতা পুরকর্তৃপক্ষ।
আগামী বছরের মাঝামাঝি এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, এমনটাই দাবি পুরকর্তৃপক্ষের। কলকাতার মেয়র তথা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র (কেএমডিএ) ভাইস চেয়ারম্যান শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ধাপা জলপ্রকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য পাটুলির ওভারহেড জলাধার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমি জটে আটকে থাকায় কিছু দেরি হয়েছে ঠিকই। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। এই জমি নিয়ে আইনগত কোনও জটিলতা আর নেই।”
|
ধাপা জলপ্রকল্প তৈরি হওয়ার পর প্রতি দিন যে পরিমাণ পানীয় জল উৎপন্ন করা হবে তা পাইপলাইনের মাধ্যমে ১২টি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনে সরবরাহ করা হবে। এই জলাধারগুলি থেকে বাইপাস সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সরবরাহ করা হবে। এই জলাধারগুলির মধ্যে মাত্র একটি জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলাধার এবং বাকি সব ক’টিতেই ওভারহেড জলাধার তৈরির পরিকল্পনা করেছে পুরসভা। বাকিগুলিতে কাজও শুরু হয়েছে বছরখানেক আগেই।
এই জমি নিয়ে কী সমস্যা ছিল?
পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল বিভাস মাইতি জানান, এই প্রকল্পের জন্য যে জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল সেটি কেএমডিএ-র। পুরসভা তাদের কাছে এই জমি চাইলে তারা পুরসভাকে দিতে রাজি হয়। তার পরেই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সঙ্গে কেএমডিএ-র এই জমিকে কেন্দ্র করে আইনি জটিলতা তৈরি হয়। এ দিকে, এই এলাকায় অন্য কোনও জমি না থাকায় পুরসভা এই প্রকল্প শুরু করতে পারেনি। আইনি জটিলতা মিটতেই মাস দু’য়েক আগে থেকেই কাজ শুরু হয়েছে বলে বিভাসবাবু জানান।
কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানান, এই জমিটি কেএমডিএ কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রককে শর্তসাপেক্ষে হস্তান্তর করেছিল অনেক বছর আগেই। কথা ছিল সংশ্লিষ্ট দফতর এই জমিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও প্রকল্প না করলে তারা এই জমিটি ফিরিয়ে নেবে। অভিযোগ, ওই মন্ত্রক এই জমিতে তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প তৈরি না করে জমিটি ফেলে রাখায় কেএমডিএ জমিটি ফেরত চায়। এই নিয়েই আইনি জটিলতা তৈরি হয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই কেএমডিএ এই জমি ফেরত পায় এবং পুরসভাকে জলপ্রকল্প তৈরির জন্য জমিটি হস্তান্তর করে। |
কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী চৌধুরীমোহন জাটুয়া বলেন, “সেই সময় কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে জমিটি ফেরত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। আদালত কেএমডিএ-র পক্ষেই রায় দেন। পরে, জমিটির ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা দায়ের করা হয়েছিল।”
কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানান, এই মুহূর্তে এই জমি নিয়ে কোথাও কোনও মামলা নেই। আইনি জটিলতা থাকলে এই জমিতে জলপ্রকল্পের জন্য পুরসভাকে দেওয়া যেত না এবং কোনও কাজ করাও সম্ভব হত না।
পুরসভা সূত্রে খবর, ধাপা জলপ্রকল্প থেকে প্রত্যেক দিন ৩০ লক্ষ গ্যালন পানীয় জল উৎপন্ন করা হবে। তার মধ্যে এই নির্দিষ্ট বুস্টার পাম্পিং স্টেশন থেকে প্রত্যহ ৫ লক্ষ গ্যালন বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হবে। এই জল সরবরাহের ফলে কলকাতা পুরসভার ১১০ এবং ১১১ ওয়ার্ড ছাড়াও আশপাশের অনেক এলাকাই উপকৃত হবে।
অন্য দিকে, ধাপা থেকে জল সরবরাহের জন্য প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি বাইপাসের ধার দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এর পর মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজও ঘোষণা করা হয়। সেই কারণে পাইপলাইন পাতায় সমস্যা হয়। বাইপাস সম্প্রসারণের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাইপলাইন পাতার কাজ শুরু করা যায়নি। সেই কাজও এখন দ্রুত শুরু হয়েছে বলে জল সরবরাহ দফতর থেকে জানানো হয়েছে। |