বাসচালক অনবরত হর্ন দিচ্ছেন। কিন্তু সামনের গাড়ি নড়ছে না। কারণ, চালক বেপাত্তা। এ ভাবেই চলল বেশ কিছু ক্ষণ। তত ক্ষণে পিছনে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে। হর্ন আর চিৎকারে কান পাতা দায়। অবশেষে চালক ফিরলেন। গাড়ি এখানে রেখেছেন কেন? তাঁর উত্তর: “কী করব, রাখব কোথায়?” মাঝেমধ্যে নয়, ইএম বাইপাসের কাছে বেলেঘাটা বাজার মোড়ে এমনটা প্রায়ই ঘটে।
কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর বরোর অন্তর্গত বেলেঘাটা, ফুলবাগান এবং কাঁকুড়গাছি এলাকায় দীর্ঘ দিন পার্কিং নিয়ে নানাবিধ সমস্যা চলছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনে দিনে সমস্যা বাড়লেও প্রশাসনের তরফে পার্কিং লট বা পার্কোম্যাট তৈরির কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ভোট এলে প্রতিশ্রুতির অভাব হয় না। তার পরে যে-কে-সেই। যদিও কলকাতা পুরসভার কর্তারা জানান, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পার্কিং লটের ব্যবস্থা করা হবে। |
পরে পার্কোম্যাট তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে। যদিও এই সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে এমন আশ্বাস তাঁরা দিতে পারেননি।
ফুলবাগানের বাসিন্দা তপন মজুমদার বলেন, “আট ফুট চওড়া রাস্তায় পাঁচ তলা বাড়ি। ফুটপাথে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। পথচারীরা বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটেন।” ইএম বাইপাস মোড় থেকে কাঁকুড়গাছি মোড় পর্যন্ত ফুটপাথের অনেকটা চলে গিয়েছে বাজার ও দোকানের দখলে। একটি জায়গায় ফুটপাথ জুড়ে পুরসভার ভ্যাট। গাড়ি ফুটপাথ ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে পথচারীদের রাস্তা দিয়ে যেতে হয়।
ফুলবাগান মোড়ে মেট্রোর কাজ চলায় সেখান থেকে কাদাপাড়ার রাস্তায় শুধু অটো চলে। বাকি গাড়ি অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ফুলবাগান মোড়ের চার দিকেই রয়েছে অটোর স্ট্যান্ড। ফুলবাগান মোড় থেকে বেলেঘাটা যাওয়ার রাস্তার ধার জুড়ে ম্যাটাডর দাঁড়িয়ে থাকে। কাঁকুড়গাছি থেকে ফুলবাগান যাওয়ার রাস্তা, বেলেঘাটা মেন রোডেরও একই ছবি। মানিকতলা মেন রোডেও বেশ কিছু দোকান, অফিসের সামনেও পার্কিং দেখা যায়। |
সমস্যা বেশি অলিগলিতেই। যে সব গলিতে স্কুল, অনুষ্ঠান বাড়ি আছে সেখানে পার্কিংয়ের জন্য হামেশাই যানজট হয়। বেলেঘাটার বাসিন্দা শুভেন্দু সরকার বললেন, “কোনও অনুষ্ঠান থাকলে কেজি বোস সরণি, পঞ্চানন মিত্র লেন, কবি সুকান্ত সরণি-সহ বেলেঘাটা, ফুলবাগানের গলিগুলি থেকে গাড়ি নিয়ে বেরোতে পারবেন না।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েকটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করালে কিছু যুবক এসে পার্কিং স্লিপ ধরাচ্ছে। কিন্তু সেই স্লিপে কলকাতা পুরসভার উল্লেখ নেই। তাঁদের দাবি, বরো এলাকায় কলকাতা পুরসভার পার্কিং লট নেই। তা হলে কারা এ ভাবে পার্কিংয়ের নামে টাকা তুলছেন? তাঁদের দাবি, সরু রাস্তায় বহুতলের অনুমতি দেওয়া বন্ধ হোক। পাকোর্ম্যাট তৈরি হোক।
অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সিপিএমের রাজীব বিশ্বাস বলেন, “এ সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এলাকায় পুরসভার পার্কিং লট না থাকায় কতগুলি জায়গায় বেআইনি ভাবে পার্কিং হয়। কেউ কেউ টাকাও তুলছেন। ক্রমশ সমস্যা বাড়ছে। বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন। পুরসভাকে বার বার জানিয়েও কাজ হয়নি।” যদিও কলকাতা পুরসভার পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের একাংশ জানান, তিন নম্বর বরোর তরফে এমন কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে পার্কিংয়ের জন্য বিশেষ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁরা স্বীকার করেন। মেয়র পারিষদ (পার্কিং) রাজীব দেব বলেন, “পুরনো পার্কিংয়ের বিষয়ে আগে খোঁজ নিতে হবে। তার পরে নতুন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।”
|