অঞ্জন-ব্যঞ্জন
স্বপ্নের রুপো-রেখা
কোথা থেকে শুরু করি? পদ্মাপার না গঙ্গাধার? সূচনা যেখানেই হোক, কাব্য কাব্যই। বিশেষত, সে যদি হয় মাছের রানি ইলিশের প্রণয়গাথা! এই একটি ব্যাপারে মাওয়াঘাট কি কোলাঘাট একাকার। আজ ২০১৩ সালে দাঁড়িয়েও, আমি যেন এক অবিভক্ত বাংলার স্বাদ পাই। বিশ্বাস করুন, যখন ঢাকায় যাই, তখনও পাতে ইলিশ পেলে মনে হয়, আরেঃ, একেই লেক মার্কেটে দেখেছিলাম না! ইলিশের কোনও বিএসএফ বা বিডিআর নেই। ইলিশ কোনও সীমানা মানে না। স্বপ্নে দেখি বেনাপোল বর্ডার। সার দিয়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। আর ট্রাক ভর্তি করে ঠাসা বাঙালির প্রাণ ইলিশ।
আমার ছোটমামার গল্প বলি। খাওয়ার পর যিনি সবার হাত শুঁকতেন। হুঙ্কার ছেড়ে বলতেন: “দেখি, কেমন ইলিশ খাইছস?” এই একটি মাছ, যার শুধু ভুবনজয়ী স্বাদ নয়, ইন্দ্রিয় মাতাল করা সৌরভও আছে। ইলিশ নিয়ে আরও অসংখ্য গল্প আছে। টেনুয়ালোসা ইলিশ নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলির পঞ্চতন্ত্রে উল্লেখ আছে।
ইলিশের নানা নামও। পার্সিরা যাকে বলে ‘বিম’, গুজরাতিরা ‘মদার’। স্বাস্থ্যগুণে লা-জবাব এই মাছ। ব্রেন, নার্ভ, হার্ট সবই থাকে কুশল মঙ্গল।
গুণাগুণ গেয়ে কী লাভ? বরং দোষের কথায় ফিরি। আর দোষ তো একটাই, ইলিশ লোভ। যে লোভের শিকার হননি, এমন বঙ্গসন্তান বিরল। এ এক এমন ফাঁদ যাতে ধরা দিয়েছেন অবাঙালি, এমনকী অভারতীয়রাও। অ্যামস্টারডম এয়ারপোর্টের লাউঞ্জ। ফ্লাইট লেট। সবে একটু লাঞ্চ বক্সটা ফাঁক করেছি, অমনি কোথা থেকে এক লালমুখো সাহেব এসে হাজির। “স্মেলিং হিলসা?” আগেই বলেছি, ইলিশ সীমানা না-মানা এক প্রাণী। সাহেব তো সাহেব, সেই যে এক পেটুক বাঙালিকে নিয়ে গল্প আছে না, এক কেজি সোনা না কি দু’কেজি ওজনের একটা আস্ত ইলিশ, কোনটা সে চায়। বলা বাহুল্য, দ্বিতীয় অপশনটিতেই সে চিরটাকাল টিক দিয়ে এসেছে।
সব গল্পের যেমন একটা শুরু থাকে, তার সমাপ্তিও অবশ্যম্ভাবী। ইলিশের শেষের সে দিন সামনে কি না, তা ভাবতেও কষ্ট হয়। যে হারে ‘ক্যাচ দেম ইয়ং’ হচ্ছে, তাতে বাজারে এখন ইলিশের ওজন মেরেকেটে আটশো। কোথায় হারিয়ে গেল কিলো কিলো ইলিশের সে দিন। বললে, তা শুধুই গল্প বলে ভুল হয়। মোহনবাগান জোড়া গোল খেলেও এখন আর ততটা আনন্দ হয় না, ভাবি তেমন জোড়া ইলিশ তো আর পাব না! ইলিশবেঙ্গল তাই এখন এক বিষাদ-কাব্য।
শেষপাতে দু’টি ইলিশ-রেসিপি, আমার প্রিয় পাঠক-পাঠিকা (বা পাচক/পাচিকাদের) জন্য দেওয়া রইল। পরীক্ষা প্রার্থনীয়।

ধনে-রসুনের ইলিশ
উপকরণ: ইলিশ ফিলে: ১/৪ পিস,
লেবুর রস: ২ চা-চামচ,
নুন: পরিমাণমতো,
আদা বাটা: ১/২ চা-চামচ,
রসুন বাটা: ১/৪ চা-চামচ,
কাঁচালঙ্কা বাটা: ১/২ চা-চামচ,
রিফাইন্ড অয়েল: ৮ চা-চামচ,
কাটা রসুন: ১/২ চা-চামচ,
কাটা আদা: ১/২ চা-চামচ,
কাটা কাঁচালঙ্কা: ১/৪ চা-চামচ,
ধনে বাটা: ২ চা-চামচ,
কাজুবাদাম বাটা: ১ চা-চামচ, ক্রিম: ১০ চা-চামচ,
মাখন: ১ চা-চামচ, ইলিশ স্টক: ১০ চা-চামচ।
প্রণালী: ইলিশ ফিলেগুলোকে লেবুর রস, নুন,
আদা বাটা,রসুন বাটা ও কাঁচালঙ্কা বাটা দিয়ে
১০-১৫ মিনিট ম্যারিনেট করে নিন। কড়াইতে
রিফাইন্ড অয়েল ঢালুন। গরম করুন। তার পর
তাতে গোটা জিরে, কাটা রসুন, কাটা আদা,
কাটা কাঁচালঙ্কা ও ধনে বাটা দিয়ে একটু
সাঁতলে নিন, যত ক্ষণ না সেটা সোনালি
রং নিচ্ছে। তাতে ইলিশের স্টকটা ঢেলে দিন।
নাড়াচাড়া করে গ্রেভি করে নিন। গ্রেভিতে
কাজুবাদাম বাটা, ক্রিম ও মাখন মিশিয়ে অল্প
আঁচে একটু নেড়ে নিন। তাতে কাঁটা ছাড়ানো মাছ
ঢালুন ও কড়াইয়ের মুখ বন্ধ করে কিছু ক্ষণ
সিমে রাখুন। গ্রেভির সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

বরিশালের ইলিশ ভাজা
উপকরণ: ইলিশ ফিলে ১/৪ পিস,
লেবুর রস: ২ চা-চামচ, নুন পরিমাণমতো,
কাঁচালঙ্কা বাটা: ১/২ চা-চামচ,
আদা বাটা: ১/২ চা-চামচ,
রসুন বাটা: ১/২ চা-চামচ,
ওনিয়ন পাউডার: ১ চা-চামচ,
রসুন পাউডার: ১ চা-চামচ,
গরমমশলা: ১/৬ চা-চামচ,
জিরেগুঁড়ো: ১ চা-চামচ,
রিফাইন্ড অয়েল: ১০ চা-চামচ,
লঙ্কাগুঁড়ো: ১/৪ চা-চামচ,
পেঁয়াজকুচো: ২ চা-চামচ,
কাঁচালঙ্কা: ১/৪ চা-চামচ,
ধনে বাটা: ১/২ চা-চামচ,
ময়দা: ১/২ চা-চামচ,
কর্নফ্লাওয়ার: ১/২ চা-চামচ, ডিম: একটি।
প্রণালী: ইলিশ ফিলেগুলোকে লেবুর রস,
নুন, আদা বাটা, রসুন বাটা ও কাঁচালঙ্কা
বাটা দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ম্যারিনেট করে নিন।
সেকেন্ড ম্যারিনেশন তৈরি করুন ওনিয়ন
পাউডার, রসুন পাউডার, গরমমশলা,
জিরে পাউডার, রিফাইন্ড অয়েল ও চিলি
ফ্লেক দিয়ে। এ বার মাছটাকে ম্যারিনেট করুন
ওপরের মিক্সচারটার অর্ধেকের সঙ্গে। রান্না হয়ে
যাওয়া ফিশ ফিলে থেকে কাঁটা বেছে বাদ দিন। মশলা
মিক্সচারের বাকি অর্ধেকে পেঁয়াজ কুচো,
কাঁচালঙ্কা কুচো ও ধনে বাটা মেশান। সঙ্গে দিন
পরিমাণমতো নুন, লেবুর রস, ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার
ও ডিম এবং ব্যাটারটি তৈরি করে নিন। কাঁটা
বাছা মাছের ফিলেগুলো তাতে ডুবিয়ে নিয়ে
তাওয়া ফ্রাই করে নিন।
গরম গরম পরিবেশন করুন।

ছবি: শুভেন্দু চাকী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.