চুলগুলো পুরো পেকে গেছে। কোমরের দিকটা আগের চেয়ে অনেক ফোলা। গোঁফটা নেই। এমনকী অটোগ্রাফটাও বদলে গেছে এই পঁচিশ বছরে। স্যর রিচার্ড হ্যাডলি-র নিজের কিন্তু মনেই হচ্ছে না কিছু বদলেছে বলে। শনিবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পা রাখার অধৈর্য অপেক্ষায় তিনি। আন্দাজ করছেন স্টেডিয়ামে পা রাখা মাত্র গভীর নস্ট্যালজিয়া গ্রাস করবে তাঁকে। এ দিন জে ডব্লিউ ম্যারিয়টের লবিতে আনন্দবাজারকে এ বারের ভারত সফরে তাঁর একমাত্র একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন হ্যাডলি।
প্রশ্ন: পঁচিশ বছর আগে চিন্নাস্বামীতেই আপনার বিশ্বরেকর্ড। মনে পড়ছে?
হ্যাডলি: ভাবা যায় না পঁচিশটা বছর যেন একটা স্ট্রোকে কেটে গেল। মনে হচ্ছে এই তো সে দিন এখানকার মাঠ থেকে ওয়ার্ল্ড রেকর্ডটা তুললাম। ইন ফ্যাক্ট এদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এই যে কেএসসিএ-র পঁচাত্তর বছরে এলাম তার একটা কারণ নিশ্চয়ই অনিল কুম্বলেকে ফেরাতে না পারা। কুম্বলে টেস্টে শুধু ৬১৯ উইকেটই পায়নি, মানুষ হিসেবেও খুব সম্মাননীয়। দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই জীবনের মোহময় মাঠটায় আবার ফিরতে চাওয়া। এমনিতে ভারতে আমি বছরে দু’তিন বার করে আসতেই থাকি। হয় কোনও নিউজিল্যান্ডের কর্পোরেট যারা ভারতে ব্যবসা করতে চাইছে। বা আমার দেশের ট্রেড ডেলিগেশন নিয়ে। বেঙ্গালুরুও এসেছি। কিন্তু পঁচিশ বছর হয়ে গেল চিন্নাস্বামী আর যাওয়া হয়নি।
প্র: খেলোয়াড় জীবনে আপনি নিয়মিত আগাম ভিসুয়ালাইজ করতেন। এখনও করেন?
হ্যাডলি: এখন জীবনে অত চাপ নেই। বাষট্টি বছর বয়স হল। সেমি রিটায়ার্ড। জীবনের উদ্দেশ্যগুলো অন্য বাঁকে চলে গিয়েছে। অত কঠিন ফোকাস-টোকাস আর নেই।
প্র: কী বলছেন ফোকাস নেই? এটা একেবারেই রিচার্ড হ্যাডলিচিত হল না!
হ্যাডলি: ঠিকই বলছি। ওটা ছিল স্পোর্টসম্যান হ্যাডলির জীবন। যেখানে সাঙ্ঘাতিক রোমাঞ্চ, উত্তেজনা আর টেনশন ছড়ানো। স্পোর্টস একটা বিপজ্জনক দুনিয়া। যে কোনও কিছু যে কোনও সময় হতে পারে। সেটা এক বন্য ঘোড়া। তাকে পোষ মানানোর জন্য আসুরিক, সর্বাত্মক প্রস্তুতি চাই। আমরা জীবনকে আর সেই স্ট্রেসে ফেলতে চাই না।
|
গভীর নস্ট্যালজিয়া
আনন্দবাজারে প্রকাশিত তাঁর পঁচিশ বছর আগের ছবি ল্যামিনেশন করে
এ দিন স্যর রিচার্ড হ্যাডলিকে উপহার দিল আনন্দবাজার পত্রিকা। ছবি: উৎপল সরকার |
প্র: চিন্নাস্বামীতে আপনার ৩৭৪তম উইকেট নিয়ে গড়া বিশ্বরেকর্ড পরে ভেঙে গেলেও ওটা প্রবাদসদৃশ হয়ে যায়। নানা কাহিনি ছড়িয়ে ছিল তা থেকে। যাকে বলা যায় মূল গল্পের শাখা উপশাখা।
হ্যাডলি: যেমন?
প্র: যেমন শোনা যায় ক্রাইস্টচার্চের বাড়িতে বসে আগেই আপনি গোটা সিকোয়েন্সটা ছকে নিয়েছিলেন। ভিসুয়ালাইজেশনে আপনি বিশ্বরেকর্ড দেখতে পান। তবে আপনি দেখেছিলেন শ্রীকান্তকে আউট করে ওটা গড়ছেন। বাস্তবে ওটা হয় অরুণলালকে আউট করে। তার কারণ আপনার কল্পনায় শ্রীকান্তের হেলমেট ছিল সাদা। সে দিন হঠাৎ করে শ্রীকান্ত নীল হেলমেট ব্যবহার করায় আপনার স্বপ্নটা ধাক্কা খেয়ে গিয়েছিল ক্ষণিক।
হ্যাডলি: যা বললেন পুরোপুরি সত্যি। শুধু শ্রীকান্তের হেলমেট বর্ণনায় ভুল আছে। ও সব সময় নীল হেলমেট পরত। সে দিন হঠাৎ করে কালার চেঞ্জ করে সাদা পরেছিল।
প্র: আপনি যতই বলুন, রিটায়ার্ড লাইফে আর স্ট্রেস নিতে ভাল লাগে না। হ্যাডলি মানেই তো অ্যাড্রিনালিন রাশ। আর নিজেকে পিটিয়ে পিটিয়ে এগিয়ে যাওয়া। সেটা বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্বাস করব?
হ্যাডলি: অ্যাড্রিনালিন ঝরে। তবে গল্ফ কোর্সে। আগে আমার সমস্যা ছিল ক্রিকেট বলকে ঠিকমতো সুইং করানো। এখনকার সমস্যা হল গল্ফে ক্লাবটাকে ঠিকমতো সুইং করানো (হাসি)। গল্ফে ভুল করলে নিজের ওপর প্রচণ্ড ক্ষেপে যাই। আমি থাকিও তো একটা গল্ফ কোর্সের ভেতর।
প্র: কোথাও বার হয়নি তো?
হ্যাডলি: হয়তো বার হয়নি। কিন্তু এটাই ঘটনা যে একটা এইটিন হোল গল্ফ কোর্সের ফিফটিন্থ হোলে দশটা নতুন বাড়ি উঠেছে। ক্রাইস্টচার্চ থেকে কিছু দূরে। আমি এখন সেখানেই থাকি।
প্র: কপিলের সঙ্গে কখনও গল্ফ খেলেছেন?
হ্যাডলি: হ্যাঁ, এক বার দিল্লিতে খেলেছিলাম। সেটা অবশ্য আগের কথা। তখন আমার হ্যান্ডিক্যাপ ছিল সিক্সটিন। এখন ওটা কমে হয়েছে নাইন।
প্র: আপনাদের সেই সময়কার বিশ্বসেরা চার অলরাউন্ডারের মধ্যে যোগাযোগ আছে? কপিল-ইমরান-বোথাম-আপনি?
হ্যাডলি: ইমরানের খবর তো টিভি থেকেই পাওয়া যায়। কপিলের সঙ্গে ঠিক দেখা হয়ে যায় এ দিক-ও দিক। আর বোথাম আর আমি একসঙ্গে এখন চ্যাট শো করছি।
প্র: তাই?
হ্যাডলি: হ্যাঁ। আমি-বোথাম-ভিভ। প্রোগ্রামটার নাম নাইট অব নাইটস। অ্যান্টিগাতে গত বছর পালিত হল ভিভের ষাটতম জন্মদিন। তখন আমাদের প্রোগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন আরও দু’জন নাইট। স্যর গারফিল্ড সোবার্স আর স্যর এভার্টন উইকস। বিশ্বে আর কখনও এমন হয়নি যে মঞ্চের ওপর পাঁচ জন নাইট একসঙ্গে! ভাবতে পারেন?
প্র: ‘নাইট অব নাইটস’ নিয়ে আপনারা কখনও ভারতে আসবেন না?
হ্যাডলি: ইচ্ছে তো আছে। খুবই ইচ্ছে আছে ভারতে এসে শো করার।
প্র: ভারতে এলে একটা প্রশ্নের সামনে কিন্তু অবধারিত পড়তেন। যা প্রশ্ন থেকে এখন জাতীয় বিতর্ক। আপনাকে জিজ্ঞেস করা হত সতেরো বছরের যে ছেলেটাকে নব্বই সিরিজে বল করেছিলেন, তার কি এখন অবসর নেওয়ার সময় হয়েছে?
হ্যাডলি: শুনুন ভাই, এটা সচিন তেন্ডুলকরের ব্যক্তিগত ব্যাপার যে সে কখন ছাড়বে বা ছাড়বে না? কত বয়স হয়েছে সচিনের? চল্লিশ। ঠিক আছে। আমি পেস বোলার হয়েও খেলা ছাড়ি ঊনচল্লিশ বছর বয়সে। আর ও তো ব্যাটসম্যান।
প্র: ধোনির আধুনিক ভারতের খেলা দেখেন?
হ্যাডলি: টিভিতে দেখি যেটুকু দেখতে পাই। ধোনি সম্পর্কে এটুকুই বলতে পারি, ও কেবল ভারতীয় ক্রিকেটেরই দারুণ সাফল্য নয়, আধুনিক সময়ের ও এক সেরা পাওনা। |