মাওবাদী সন্দেহে ধৃত জড়বুদ্ধি কিশোরের মুক্তি
মাওবাদী সন্দেহে এক জড়বুদ্ধি সম্পন্ন কিশোরকে ধরেছিল পুলিশ। ইউএপিএ-সহ একাধিক ধারায় মামলা করার তিন বছর পরেও মাওবাদী যোগের কোনও তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। তাই শালবনি থানা এলাকার রঞ্জার জঙ্গল লাগোয়া দুলি গ্রামের রামেশ্বর মুর্মু নামে ওই কিশোরকে স্বাধীনতা দিবসের পরের দিন অর্থাত্‌ শুক্রবার জেল থেকে মুক্তির নির্দেশ দিলেন মেদিনীপুরের সিজেএম অজয়েন্দু ভট্টাচার্য।
২০১০ সালের ১৬ জুন রাতে রঞ্জার জঙ্গলে পুলিশ ও মাওবাদীদের গুলির লড়াই চলে। সেই লড়াইয়ে ৮ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়। তারপরই জঙ্গল ও জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে জোর তল্লাশি চালায় পুলিশ। দুলি গ্রাম থেকে পুলিশ রামেশ্বরকে গ্রেফতার করে। সেই সময়ই রামেশ্বরের বাবা বঙ্কিমবাবু ও মা মণিদেবী জানান, তাঁদের সন্তান জড়বুদ্ধি সম্পন্ন। মৃগী রোগও রয়েছে। মৃগী না হলে হেঁটে চলে বেড়াতে পারে। তবে ভাল ভাবে কথা বলতে পারে না। তার সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও সম্পর্কই নেই। এমনকী সেই সময় ২০০৬ সালের এক চিকিত্‌সককে দেখানো প্রেসক্রিপশনও দেখিয়েছিলেন বঙ্কিমবাবু। এদিন আদালতে বঙ্কিমবাবু বলেন, “পুলিশ তখন আমাদের কথা শুনল না। শেষ পর্যন্ত তো আমাদের কথাই সত্য হল। পুলিশ যদি সেদিন আমাদের কথা শুনত, তাহলে আমাদের এই জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ছেলেকে কষ্ট করে জেলে কাটাতে হত না।”
রামেশ্বর মুর্মু। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
কী কী অভিযোগ আনা হয়েছিল রামেশ্বরের বিরুদ্ধে?
রামেশ্বরের আইনজীবী মৃণাল চৌধুরী জানান, রামেশ্বরের বিরুদ্ধে ১৪৮/১৪৯/৩০৭/৩৫৩/১৮৬/১২১ / ১২১এ/১২২/১২৩/১২৪এ ধারায় মামলা হয়েছিল। আর ছিল ২৫/২৭ অস্ত্র আইন। সঙ্গে ১৬/১৮/২০ ইউএপিএ। মৃণালবাবু বলেন, “পুলিশ একগুচ্ছ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছিল। কিন্তু কোনও বিষয়েই কিছু তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি। রামেশ্বর কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। পুলিশ ভেবেছিল ও কট্টর মাওবাদী। তাই কোনও কথা বলছে না।” রামেশ্বরকে নানা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা, বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে তল্লাশি করাসবদিক দিয়েই চেষ্টা করেছিল পুলিশ। কিন্তু এমন ছেলের কাছ থেকে কী বা তথ্য পাবে। এমনকী এই ঘটনায় দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তিকে গ্রেফতার পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ। অবশেষে পুলিশও বুঝেছিল, ধৃত কিশোর আসলে জড়বুদ্ধি সম্পন্ন। তাই ভাল চিকিত্‌সার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছিল আলিপুর জেলে। এই ঘটনায় অন্য কোনও তথ্য সংগ্রহ করতে না পারায় চলতি বছরের ১৮ জুলাই পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ওই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, ধৃত রামেশ্বরের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য মেলেনি। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে কোনও তথ্যপ্রমাণ মিললে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করার আবেদনও চাওয়া হয় আদালতের কাছে। তা জানতে পেরেই রামেশ্বরের আইনজীবী মৃণালবাবু ১ অগস্ট আদালতে আবেদন জানান, তা হলে রামেশ্বরকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হোক ও মুক্তি দেওয়া হোক। আদালতের নির্দেশেই এ দিন তাকে হাজির করে ওই মামলা থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়। বাবার সঙ্গে এদিনই বাড়ি ফিরে গিয়েছে রামেশ্বর।
সরকারি পক্ষের আইনজীবী নাজিম হাবিব বলেন, “অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণ না মেলায় তাঁকে এই মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।” এই ঘটনায় বেজায় ক্ষিপ্ত এপিডিআর। এপিডিআর-এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক বসু বলেন, “একটি নিরীহ, গরিব ও মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে কী ভাবে পুলিশ ৩ বছর আটকে রাখল। নিন্দার ভাষা নেই।” এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশনে যাওয়ার জন্যও এপিডিআরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে দীপকবাবু জানান।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.