বছর কয়েক আগে বাঁশ ও লাঠি দিয়ে কুড়ি ফুট মই বানিয়ে হাওড়া জেল থেকে এক বন্দি পালানোর পরে নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। আঁটোসাঁটো করা হয়েছিল জেলের ভিতর ও বাইরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু সেই ব্যবস্থা যে কতটা ঠুনকো, তা ফের প্রমাণিত হল গত মঙ্গলবার, জেলের পিছন দিকে এক মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে ডাকাতির মামলায় ধৃত স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে হাওড়া জেলে গিয়েছিলেন বছর পঁচিশের এক মহিলা। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুমতি না থাকায় তাঁকে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেননি জেল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, অসহায় ওই মহিলাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে কয়েক জন যুবক তাঁর সঙ্গে ভাব জমায়। স্বামীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবে বলে মহিলাকে জেলের পিছন দিকে পাঁচিলের পাশে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় তারা। পুলিশ জানায়, বনবিহারী বসু রোড ও পি কে ব্যানার্জি রোডের মোড়ে আবর্জনা ভরা জায়গায় গিয়ে উঁচু পাঁচিলের ওপাশে জেলের দোতলা ভবনে থাকা স্বামীর সঙ্গে সে দিন কথা বলেন ওই মহিলা, টাকাও চান। ওই মহিলা পরে পুলিশকে জানান, তাঁর স্বামী তাঁকে পরের দিন ওই জায়গায় টাকা নেওয়ার জন্য আসতেও বলেন। কিন্তু তার আগেই ওই চার যুবক তাঁকে ধর্ষণ করে সেখানেই ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। |
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, রাতভর জখম অবস্থায় পড়ে থাকার পরে বুধবার সকালে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। সুস্থ হওয়ার পরে পুলিশকে পুরো ঘটনাটি জানান ওই মহিলা। হাওড়া স্টেশন এলাকার ঝুপড়ির বাসিন্দা ওই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে হাওড়া জেল সংলগ্ন মল্লিক ফটক এলাকা থেকে বাবলু দাস, রাজু দাস, রাজু মুর্মু ও সূর্য দেবনাথ নামে চার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।
হাওড়া জেলের পিছনে পাঁচিলের গায়ে এই ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই কয়েকটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রশ্ন হল, বন্দিরা জেলের ভিতর থেকে পাঁচিলের ওপাশে থাকা আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে এ ভাবে কথা বলতে পারেন কি? নাকি জেলের বাইরে থেকে এ ভাবে সরাসরি কথা বলা যায়?
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, হাওড়া জেলের পাশেই রয়েছে মর্গ। সেই মর্গের পিছনে জল আর আবর্জনায় ভরা ওই নির্জন জায়গা। ওই জলা জায়গার কিছুটা দুরে ছড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি ঝুপড়ি ঘর, খাটাল। আর তার পাশেই রয়েছে জেলের উঁচু পাঁচিল। ওই সব ঝুপড়ির বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্জন জায়গা হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই ওই পাঁচিলের উপর দিয়ে ছুড়ে পাচার করা হয় মাদক থেকে মোবাইল সব কিছুই। টাকার বিনিময়ে এ কাজটি করে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী।
কিন্তু এ ভাবে জেলের বাইরে থেকে অবাধে সাক্ষাৎকার, মাদক-মোবাইল ঢোকা কি জেলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় না? হাওড়া জেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক আরশাদ হাসান ওয়ারসি বলেন, “জেলের পিছন দিক দিয়ে এমন ঘটছে, এটা আমরা জানতাম না। জেল সুপারের সঙ্গে কথা বলব। এটা অবশ্যই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।”
হাওড়া জেল সুপারের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
তবে জেলের বাইরের নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্ব যেহেতু হাওড়া পুলিশের, তাই হাওড়ার ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা কী করে হচ্ছে, তা আমরা তদন্ত করে দেখব। জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলব।” |