বোর্ড গঠনের লড়াইয়ে ভোটদানে বিরত থেকে দু’টি ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত বিজেপি-র কাছে হাতছাড়া করল সিপিএম। আবার বিজেপি-র সঙ্গে জোট করে একটি ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত হাতে এল তৃণমূলের। পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার প্রথম দিন এমনই সব চিত্র ধরা পড়ল বীরভূমে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে চারটিতে তৃণমূল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তিনটি পঞ্চায়েত (কুণ্ডলা, ময়ূরেশ্বর ও দাসপলশা) ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ছিল। শুক্রবার সেগুলিরই প্রধান ও উপপুরপ্রধান নির্বাচনের দিন ছিল। নির্বাচনে কুণ্ডলা পঞ্চায়েতে ১৬টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৭, সিপিএম ৬ ও তৃণমূল ৩টি আসন দখল করে। ১৬ আসনের ময়ূরেশ্বর পঞ্চায়েতে বিজেপি ৭, সিপিএম ৬, তৃণমূল ২ ও নির্দল ১টি আসন পায়। আর দাসপলশা পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনে তৃণমূল ৬, সিপিএম ৪ ও বিজেপি ৩টি আসনে জয়ী হয়। ত্রিশঙ্কু ওই পঞ্চায়েত তিনটির বোর্ড গঠনকে ঘিরেই কৌতূহল তৈরি হয়েছিল এলাকার রাজনৈতিক মহলে। |
গত বার বিজেপির দখলে থাকা কুণ্ডলা পঞ্চায়েতে এ বারে ৬টি আসনে জয়ী হলেও প্রধানের সংরক্ষিত পদেই হেরে যায় সিপিএম। এ দিন ভোটাভুটির পরে সেখানে প্রধান নির্বাচিত হলেন বিজেপি-র সন্যাসী হাজরা। উপপ্রধান হয়েছেন বিজেপিরই অমল ব্যাপারী। আগে সিপিএমের দখলে ছিল ওই পঞ্চায়েত। নিদর্ল প্রার্থী মমজান আলিকে উপপ্রধান করে এ বারও ময়ূরেশ্বর পঞ্চায়েত দখল করল বিজেপি। সেখানে বিজেপি-র ফুলমণি মাড্ডি প্রধান হয়েছেন। অন্য দিকে, জোট গড়ে দাসপলশায় তৃণমূলের আসিয়া বিবিকে প্রধান ও বিজেপির কল্পনা কোনাইকে উপপ্রধান করে বোর্ড গড়েছে তৃণমূল-বিজেপি। তিনটি ক্ষেত্রেই সিপিএম ভোটাভুটিতে হাজির হয়নি। কারণ হিসেবে সিপিএমের ময়ূরেশ্বর জোনাল সম্পাদক অরূপ বাগ বলেন, “কোনও দলকে সমর্থন করা বা কোনও দলের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গড়া আমাদের দলের নীতি নয়। তাই দলের রাজ্য স্তরের সিদ্ধান্ত অনুসারে যে সব পঞ্চায়েতে আমাদের নিরঙ্কুশ অথবা একক বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, সেই সব পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে আমরা ভোটাভুটিতে যোগ দিইনি।” অন্য দিকে, বিজেপি-র ময়ূরেশ্বর মণ্ডল কমিটির সভাপতি তমাল মণ্ডল বলেন, “ওই পঞ্চায়েতগুলিকে আমরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বোর্ড গড়েছি। প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে কারও সমর্থনের দরকার হয়নি। নির্বাচন পূর্ববর্তী জোট রাজনীতির শর্তে দাসপলশাই আমরা তৃণমূলের সঙ্গে।”
এ দিনই সিউড়ি ১ ব্লকের ৭টির মধ্যে ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হয়। সেখানে টসে জিতে ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকা খটঙ্গা পঞ্চায়েত পেল সিপিএম। সেখানে সিপিএম ও তৃণমূল ৩টি করে আসন পেয়েছিল। এ দিন ভোটাভুটিতে টাই হওয়ার পরে টস হয়। ৮টি আসনেই জয়ী হয়ে নগুরি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করেছে সিপিএমই। বোর্ড গঠনের ভোটে জিতে তিলপাড়া ও মল্লিকপুর পঞ্চায়েত দখল করল তৃণমূল। শেষ দু’টি পঞ্চায়েতেই ভোটদানে বিরত থেকেছে সিপিএম। এ দিকে মহম্মদবাজারের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি পঞ্চায়েতের বোর্ডও এ দিন গঠন হয়েছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় দেউচা, পুরনো গ্রাম, অঙ্গারগড়িয়া ও ভুতুড়া পঞ্চায়েত দখল করেছে সিপিএম। আর ভোটে জিতে মহম্মদবাজার ও চড়িচা পঞ্চায়েত দু’টির বোর্ড দখল করল সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তৃণমূল।
অন্য দিকে, রামপুরহাট মহকুমায় তৃণমূল ও সিপিএম উভয় দলই বিরত থাকায় নলহাটি ২ ব্লকের ভদ্রপুর ১ পঞ্চায়েতটি কংগ্রেসের দখলে এসেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের ৫, তৃণমূলের ২ ও সিপিএমের ৩ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। একই ব্লকের শীতলগ্রামে পঞ্চায়েত বামফ্রন্টের দখলে এসেছে। যদিও এ দিন প্রধান নির্বাচনের পরে পঞ্চায়েতের ভেতরে থাকা রাজীব গাঁধী সেবা কেন্দ্রের ফলক ভাঙার অভিযোগ উঠেছে বামেদের বিরুদ্ধে।
তৃণমূল ও কংগ্রেসের সমর্থনে ১৯ আসন বিশিষ্ট রামপুরহাট ২ ব্লকের বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েতেটি সমাজবাদী পার্টি দখল করেছে। সেখানে দলগত অবস্থান ছিল তৃণমূল ৬, বামফ্রন্ট ৫, কংগ্রেস ২, সমাজবাদী পার্টি ২, বিজেপি ২, নির্দল ২। এখানেও সিপিএম ভোটদানে বিরত থেকেছে। এ দিন বোলপুরে এ দিন ৫টি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হয়েছে। একমাত্র সিয়ান-মুলুক পঞ্চায়েতেই বোর্ড গঠনের জন্য ভোট হয়েছে। সেখানে এক নির্দল প্রার্থী প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এ দিকে সিঙ্গি পঞ্চায়েতে নির্দলেরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তৃণমূলের প্রধান ও নির্দলদের উপপ্রধান হয়েছে। বাকি বাহিরী-পাঁচশোয়া, কঙ্কালীতলা ও রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েত তিনটিতে তৃণমূলই বোর্ড গঠন করেছে। |