প্রধান নির্বাচনে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে বিডিও ও যুগ্ম বিডিওকে প্রায় সাত ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখলেন তৃণমূলের কয়েকশো সদস্য সমর্থক। শুক্রবার সালানপুরের বাসুদেবপুর-জেমারি পঞ্চায়েতের ঘটনা। এই পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল এ দিন। তৃণমূলের অভিযোগ, ব্লক প্রশাসন সঠিক পদ্ধতি মেনে সিপিএমের প্রধানকে নির্বাচন করেননি। ফলে নির্বাচন বাতিল করতে হবে। চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত দাবি মেনে নেন বিডিও।
সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে এই পঞ্চায়েতের দশটি আসনের মধ্যে পাঁচটি করে আসন পায় তৃণমূল ও সিপিএম। এই পরিস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন হওয়ার কথা। সেইমতো দুপুর ১২টা নাগাদ সালানপুরের যুগ্ম বিডিও অঞ্জন চৌধুরী পঞ্চায়েত কার্যালয়ে দু’পক্ষের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে বসেন। প্রথমে তিনি উভয়পক্ষকে তাঁদের মনোনীত প্রধানের নাম জানাতে বলেন। প্রসঙ্গত, এই পঞ্চায়েতের প্রধান পদটি এবার তপসিলি জাতি মহিলা প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। প্রধান হিসেবে সিপিএমের পক্ষ থেকে কবিতা বাউড়ি এবং তৃণমূলের তরফ থেকে রিঙ্কু বাউড়ির নাম প্রস্তাব করা হয়। অঞ্জনবাবু উভয় প্রার্থীকেই তাঁদের তপশিলি জাতি সংক্রান্ত শংসাপত্র জমা দিতে বলেন। সিপিএমের প্রার্থী কবিতা বাউড়ি শংসাপত্র জমা দিতে পারলেও তৃণমূল প্রার্থী রিঙ্কু বাউড়ি তা জমা দিতে পারেননি। রিঙ্কুদেবী যুগ্ম বিডিওকে জানান, তিনি শংসাপত্র বাড়িতে রেখে এসেছেন। তাঁকে সেটি আনার সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু অঞ্জনবাবু জানান, বৈঠকে বসার আগেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, প্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও সদস্যকেই বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। তবে রিঙ্কুদেবী বারবার বলায় দু’মিনিটের মধ্যে তাঁকে শংসাপত্র বাড়ি থেকে নিয়ে আসার সুযোগ দেওয়া হয়। রিঙ্কুদেবী কার্যালয় ছেড়ে বেরিয়ে যান। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এরপরে মিনিট পনেরো পেরিয়ে গেলেও রিঙ্কুদেবী ফিরে না আসায় ব্লক প্রশাসন একতরফা সিপিএমের কবিতা বাউড়িকে প্রধান মনোনীত করেন। উপ-প্রধান নির্বাচনের জন্য উভয়পক্ষের মনোনীত সদস্যদের মধ্যে লটারি করা হয়। নির্বাচিত হন তৃণমূলের বীরেন্দ্র শ্রীবাস্তব। নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে তপশিলি জাতি শংসাপত্র নিয়ে সেখানে হাজির হন তৃণমূলের মনোনীত প্রধান পদপ্রার্থী রিঙ্কু বাউড়ি। |
সরকারি ভাবে প্রধান ও উপ-প্রধানের নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূলের সদস্য সমর্থকেরা। যুগ্ম বিডিওকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। তৃণমূল নেতা মুকুল উপাধ্যায়ের অভিযোগ, “যুগ্ম বিডিও সঠিক পদ্ধতি মেনে প্রধান নির্বাচন করেননি। চক্রান্ত করে সিপিএমের প্রার্থীকে জিতিয়ে দিয়েছেন।” তাঁর দাবি, প্রধানের নাম বাতিল না হলে তাঁরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। কয়েকশো সদস্য সমর্থকের বিক্ষোভের জেরে এলাকায় ব্যপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সালানপুরের বিডিও প্রশান্তকুমার মাইতি। তাঁকেও ঘেরাও করে রাখেন তৃণমূলের সদস্য সমর্থকেরা। শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ চাপের মুখে ফের নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেহাই পান বিডিও।
আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “এখনই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাই না। তবে বিডিও এই নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিল করার পরে ঘেরাও তুলে নেওয়া হয়েছে। সাত দিন পরে আবার নির্বাচন প্রক্রিয়া হওয়ার কথা।”
এছাড়া এ দিন দেন্দুয়া, সামডি, ফুলবেড়িয়া-বোলকুণ্ডা ও সালানপুরে সিপিএমের প্রধান এবং আছড়া ও বারাবনি ব্লকের পাঁচগাছিয়া, নুনি, ইটাপাড়া, জামগ্রাম, পানুড়িয়া ও দোমহানি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। |