কাজে অখুশি কিছু মুসলিম নেতা, ডেকে নালিশ শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী
ক্ষমতায় আসার ১২ মাসের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৯০% কাজই করে ফেলেছে তাঁর সরকার। সেই সরকার এখন সাতাশ মাসে। মুসলিম নেতাদের একটি প্রভাবশালী অংশের ক্ষোভ, মুখ্যমন্ত্রীর ওই দাবি ‘নেহাতই কাগুজে’। বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁর কথার কোনও মিল নেই। ক্ষোভ প্রশমিত করতে সম্প্রতি এই নেতাদের সঙ্গে একান্তে আলোচনায় বসতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁদের মন রাখতে এ বছরেই উচ্চশিক্ষায় সংখ্যালঘু-সংরক্ষণ চালুর প্রতিশ্রুতিও দিতে হয়েছে।
রেড রোডে ঈদের নমাজে গত বারের মতো এ বারেও হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। হাজার হাজার মুসলিমকে সে দিন নমাজ পড়ানোর দায়িত্বে ছিলেন ক্বারী ফজলুর রহমান। বিস্তীর্ণ রেড রোড জুড়ে ছিল মাইকের ব্যবস্থা। নমাজ পড়ানোর পরেই সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উগরে দিতে থাকেন ক্ষুব্ধ ক্বারী সাহেব। তাঁর অভিযোগ ছিল, মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়নে রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরে গত বছর ১০ দফা দাবি সনদ পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু তার ৬টিই মানা হয়নি। না-মানা দাবিগুলি কী কী? এই ধর্মীয় নেতা পরে জানান,
• রাজ্যের সব মুসলিমকে সরকার ওবিসি হিসাবে ঘোষণা করেনি।
• চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলিমদের সংরক্ষণ কার্যকর হয়নি।
• রাজারহাটের মতো নতুন শহরে ২৫% বসবাসের জমি মুসলিমদের জন্য চিহ্নিত করা হয়নি। অথচ এখানকার বেশির ভাগ জমিই নেওয়া হয়েছে মুসলিমদের কাছ থেকে।
• আইটিআইয়ে সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ হয়নি।
•‘সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান’-এর স্বীকৃতি পায়নি বহু মুসলিম সংগঠন।
• মুসলিমদের জন্য কলকাতা পুরসভা ৫০০০ ফ্ল্যাট তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তার কাজ শুরু হয়নি।
এই না-মানা দাবিগুলির উল্লেখ করে রেড রোডের ওই অনুষ্ঠানে ফজলুর সাহেব সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “মুসলিমদের উন্নয়ন নিয়ে রাজ্য সরকার টালবাহানা করছে। কোনও সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মুসলিমরা। উন্নয়নের কথা যা বলা হচ্ছে, তার বেশির ভাগই নেহাত কাগজে-কলমে।” ক্বারী সাহেবের আরও অভিযোগ, “সাচার কমিটির সুপারিশের ১০০% কাজ করে ফেলার দাবি করছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাস্তবে কী হয়েছে, তা তিনি জানেনই না।” তৃণমূলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে ওরা জিতেছে। কিন্তু ভোটের বলি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ৭০% মুসলিম। তাঁদের জন্য কিছু করার দায়িত্ব বর্তায় তৃণমূল দল ও সরকারের।”
ফজলুর সাহেবের বক্তৃতার সময়ে রেড রোডের পুলিশ ক্যাম্পে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নমাজ শেষে বক্তৃতায় তিনি ফের দাবি করেন, “সাচার কমিটির সুপারিশের ১০০% কাজই রূপায়িত হয়েছে রাজ্যে।” মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “২০১৪ সাল থেকে রাজ্যে উচ্চশিক্ষায় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ চালু হয়ে যাবে।” এর পরে তিনি ফজলুর সাহেব-সহ কয়েক জন ধর্মীয় নেতাকে একান্ত আলোচনায় ডেকে নেন। সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ এবং মন্ত্রী জাভেদ খান। সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রীও মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। তিনি জানতে চান, কোন কোন দাবি পূরণ করেনি সরকার। মুসলিম নেতাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের কোনও প্রস্তাব থাকলে সরাসরি আমাকে দিন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” ক্বারী সাহেব পরে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন। আমরাও ওঁর বক্তব্য শুনেছি। কোন কোন প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি, তা-ও ওঁকে জানিয়েছি।”
মুসলিম নেতাদের ক্ষোভ ও অভিযোগ নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানও কিছু বলতে চাননি। তবে সুলতান আহমেদ বলেছেন, “ফজলুর সাহেব কলকাতার মানুষ। গ্রামাঞ্চলে কী বিপুল কাজ হচ্ছে, তা তিনি জানেন না।”
ফজলুর সাহেবের অভিযোগ ছিল, “ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষণ থাকলেও মুসলিমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার সুযোগ পায় না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে চুক্তিতে লোক নেওয়া হচ্ছে, সেখানেও মুসলিমরা তেমন নজরে পড়ে না। রাজ্যের সব মুসলিমকে ওবিসি-র আওতায় আনার দাবিও পুরণ হয়নি।” এর জবাবে সুলতান আহমেদ দাবি করেন, “৮০% মুসলিমই ওবিসি-র আওতায় চলে এসেছে। এখন সরকারি চাকরিতে যাঁরা যোগ দিচ্ছেন, ক্ষেত্র বিশেষে তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মুসলিম। তবে কলকাতায় সংখ্যালঘুদের আবাসন তৈরির কাজটি জমির সমস্যায় এগোয়নি।” কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “পুরসভার উদ্যোগে কলকাতায় মুসলিমদের পৃথক আবাসন তৈরির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।”
ক্বারী সাহেব বলেন, “আমরা বহু আগেই দাবির তালিকা মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে এসেছিলাম। কাজ বিশেষ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী চাওয়ায় আরও এক বার সেগুলি তাঁকে দেওয়া হল। এর পরে দেখা যাক সরকার কী করে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.