বাস চালকদের জন্য আলাদা একটি সংগঠন গড়া নিয়ে ফের বাঁকুড়া শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিল। আজ, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া বাসস্ট্যান্ডে ‘বাঁকুড়া জেলা বাস চালক কল্যাণ সমিতি’ নামের ওই সংগঠনের উদ্বোধন করার কথা বাঁকুড়ার তৃণমূল বিধায়ক মিনতি মিশ্রের। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা বাঁকুড়া পুরসভার পুরপ্রধান শম্পা দরিপার। দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ ওই সংগঠনকে ‘অরাজনৈতিক’ বলে দাবি করলেও, সংগঠনের সভাপতির পদে বসানো হচ্ছে বাঁকুড়া পুর তৃণমূলের সভাপতি সিন্টু রজককে। তৃণমূলের একাংশের দাবি, আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত বাস ওয়াকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষমতা খর্ব করার জন্যই বাস চালকদের নিয়ে ওই নতুন সংগঠন তৈরি করছে তৃণমূলের অন্য অংশ।
এই ধরনের সংগঠন কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে দলের অন্দরে। দলেরই একাংশের নেতাদের অভিমত, তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠী এই সংগঠন গড়ে তুলছেন। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত বাস ওয়াকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভানেত্রী হলেন বাঁকুড়ার উপপুরপ্রধান অলকা সেনমজুমদার। তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, অলকাদেবীর সংগঠনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী এই বাসচালক কল্যাণ সমিতি গড়েছে। এর পিছনে তাঁরা অলকাদেবীর বিরুদ্ধ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের মদত রয়েছে বলে দাবি করেছেন। অলকাদেবীর অভিযোগ, “বাসকর্মীদের একটি সংগঠন আমাদের রয়েছে। তার পরেও বাস চালকদের জন্য আলাদা সংগঠন গড়ার কী মানে বুঝে উঠতে পারছি না। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা দেবে।” গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, “এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।” তবে নতুন সংগঠনে তৃণমূলের কিছু লোকজন থাকায় অনেকেই এর মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত পাচ্ছেন।
বাসচালক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিন্টু রজক দাবি করেন, “প্রায় ৪০০ জন বাস চালক এই সংগঠনে নাম লিখিয়েছেন। বাসস্ট্যান্ড চত্বরেই একটি অফিস করা হয়েছে। ওঁরাই আমাকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। আমি তাঁদের অনুরোধে সমিতিতে যোগ দিয়েছি। এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন।”
শম্পাদেবীর অবশ্য বক্তব্য, “আমি বিষয়টি ভাল করে জানি না। আর কারও পিছনে লাগার মতো মানসিকতা বা সময় আমার নেই। বাসস্ট্যান্ডে বাস চালকদের একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সময় পেলে যাব।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “এই সংগঠনের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগাযোগ নেই। কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরও ব্যাপার নেই। এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন।”
অলকাদেবীর সুরেই সিটু অনুমোদিত বাঁকুড়া জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক উজ্বল সরকার বলেন, “এই ধরনের সংগঠন শ্রমিক স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে একতা নষ্ট হবে ও বিভেদ সৃষ্টি হবে।” |