ওড়নায় মুখ আড়াল করে লড়াই চালাচ্ছেন মোকিমা
দু’বছরেও লড়াই শেষ হয়নি তার।
মুর্শিদাবাদের সুতির হারোয়া গ্রামে অ্যাসিডে দগ্ধ কিশোরীর লড়াই এক দিকে যেমন আদালতে দোষীর কঠোর শাস্তির জন্য, অন্য দিকে তেমনই অপরিসীম শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নিজের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
দু’বছরেও তার কোনওটাই করে উঠতে পারেনি সে। তবু লড়াই থামাতে রাজি নন তিনি। তাঁর বিশ্বাস, মানুষ যেমন নির্মম হতে পারে, তেমনও এখনও ভাল মানুষেরও অভাব নেই সংসারে। এই লড়াইতে সে পাশে পেয়েছে জঙ্গিপুরের কিছু আইনজীবীকে। পেয়েছে তার স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকদেরও। সেই সাহায্যের হাত জুগিয়েছে তার মনের জোর ও সাহস। কিন্তু চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরতে তার দরকার বিশাল অর্থের। এবং এখানেই দিনমজুর পরিবারের মেয়ে মোকিমা খাতুনের লড়াইটা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে।
সুতির হারোয়া গ্রামের মেয়ে মোকিমা। মা ও মেয়ের সংসারে ফেরি করে কোনও রকমে দিন গুজরান হয়। অথচ অল্প বয়স থেকেই প্রতিবেশী এক কিশোরের সঙ্গে মেলামেশার মাঝে কখন গড়ে উঠেছিল ভালবাসার সম্পর্ক। তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মোকিমা। কিশোর-কিশোরী দুজনেই সিদ্ধান্ত নেয়, সময় হলেই ভালবাসার বিয়ে সেরে নেবে তারা। এ দিকে, এই মেলামেশার কথা জানাজানি হতেই বেঁকে বসে বিত্তশালী কিশোরের পরিবার। নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হয় কিশোরী ও তার মা’কে। কিন্তু মেলামেশা তাতেও বন্ধ হয় না। তখন কথায় কাজ না হওয়ায় এক দিন গভীর রাতে নিজেদেরই বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা কিশোরীর মুখে ঢেলে দেওয়া হয় অ্যাসিড। মাস কয়েক কলকাতার এক হাসপাতালে কাটিয়ে কিশোরী যখন গ্রামে ফেরে, তখন তার অ্যাসিডে দগ্ধ মুখ দেখে আঁতকে ওঠেন গ্রামবাসীরা। লজ্জায় নিজের ওড়নায় মুখ ঢাকে কিশোরী। কিশোরীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার ঘটনায় তত দিনে সুতি পুলিশ গ্রেফতার করেছে সেই কিশোরের মা হাসনেয়া বিবিকে। ৫০ দিন জেল হেফাজতে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছে সে।
ইতিমধ্যে কেটে গেছে দু’বছর। মোকিমার কথায়, “২০১১ সালের ১০ জুন আমায় অ্যাসিড মারল। সেই থেকেই তীব্র শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি। বারবার আদালতে গিয়েছি। সরকারি আইনজীবীদের হাতেপায়ে ধরেছি। কিন্তু দু’বছর পেরোলেও এখনও পর্যন্ত আদালতে বিচারই শুরু করা যায়নি। যাকে ভালবেসে এত কাণ্ড, মুখ ফিরিয়েছে সেও।”
তবে সে পাশে পেয়েছে, স্কুলের শিক্ষকদের। কিন্তু তার চিকিৎসা করাবে কে? হাসপাতাল খরচের বহর বলেছে সানে চার লক্ষ টাকা। কে দেবে?
হারোয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সারোয়ার হোসেন বলেন, “যে অমানবিক ঘটনার শিকার হয়েছে ওই ছাত্রী, তার নিন্দার ভাষা নেই। তবু এত কষ্টের মধ্যেও পড়াশোনা চালু রেখে সে এখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। অত্যন্ত সাহসী মেয়ে বলেই এ ভাবে লড়াই করতে পারছে। আমরা তার পাশে থেকে আশ্বাস দিয়েছি সাধ্যমতো সাহায্যের। কিন্তু চিকিৎসার খরচটা যে বিশাল অঙ্কের!”
হারোয়া গ্রামেরই পূর্বতন আরএসপি বিধায়ক জানে আলম মিঞা বলেন, “অভিযুক্ত পরিবার ক্ষমতাশালী বলেই হয়তো পার পেয়ে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের উচিত, এই কিশোরীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দোষীকে কঠোর শাস্তি দেওয়া।” সুতির বিধায়ক কংগ্রেসের ইমানি বিশ্বাসও বলেন, “অত্যন্ত মর্মান্তিক ও দুঃখজনক এই ঘটনা। আদালতের বিচারে দোষীরা শাস্তি পাবে কি না জানি না। কিন্তু সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির উচিত, অত্যাচারিত কিশোরীর পাশে দাঁড়ানো।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.