কুবের উবাচ
সুনন্দা মিত্র (২৪) • মা (৫২)
বেসরকারি সংস্থার কর্মী • চাকরিতে ঢুকেছেন সবে দু’মাস • থাকেন মায়ের সঙ্গে • নিজেদের বাড়ি
• চান মায়ের স্বাস্থ্যবিমা • ২০১৫ সালে বিয়ের জন্য জমাতে চান দু’লক্ষ টাকা
• একই কারণে লগ্নি করতে চান সোনাতেও
• লক্ষ্য, ২০১৬ সালে বাড়ি কেনা • পছন্দ কর বাঁচিয়ে ঝুঁকিহীন প্রকল্পে টাকা রাখা

মাসে নিট আয়
২৫,০০০
খরচ (মাসে)
• সংসার চালাতে: ১০,০০০
• শিক্ষা ঋণ: ৭,৪৪১
টাকা রাখেন (মাসে)
• পিএফ: ৩,১৮৪

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
সুনন্দা সবে চাকরিতে ঢুকেছেন। সামনে এখন অনেক সময় পড়ে রয়েছে। কিন্তু দেখে ভাল লাগল যে, এখন থেকেই তিনি সঞ্চয়ে রীতিমতো আগ্রহী এবং তার থেকেও বড় কথা, নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন। নিজের কথা বলতে পারি, কাজের জগতে ঢোকার ৩-৪ বছর পর আমি সঞ্চয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছিলাম। সেই তুলনায় এখন অনেকেই চাকরিতে ঢোকার পর থেকেই সম্পদ গড়ে তুলতে চাইছেন। পাশাপাশি, মনে করিয়ে দিতে চাই, যত তাড়াতাড়ি লগ্নি শুরু করবেন, তত সফল ভাবে সম্পদ গড়ে তুলতে পারবেন।

ঝুঁকির রকমফের
লগ্নি করাটা অনেকটা ‘ডায়েট চার্ট’ মেনে চলার মতোই। একটি শিশুর পুষ্টির জন্য যে-ধরনের খাবার প্রয়োজন, যৌবনে তার চাহিদা বদলে যায়। আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগ শরীরে দানা বাঁধতে থাকে। ফলে সেই সময়ে প্রয়োজন হয় কঠোর খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে থাকা। লগ্নির ক্ষেত্রেও চাকরি পাওয়ার পরেই যে-ঝুঁকি এক জন নিতে পারবেন, সংসারের এবং নিজের পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ার পর তা হয়তো সম্ভব হবে না। আবার জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে দরকার হবে একেবারেই কম ঝুঁকির প্রকল্পে লগ্নি। যাতে বার্ধক্য স্বচ্ছন্দে কাটতে পারে।
নিজের চিঠিতে সুনন্দা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তিনি কম ঝুঁকির বা ঝুঁকিহীন প্রকল্পে লগ্নি করতে চান। এই প্রসঙ্গে কিছু কথা বলে রাখা ভাল। কম মেয়াদে শেয়ার বাজারে লগ্নি করলে অনেক সময়েই ঝুঁকি নিতে হয়। সেখানে শেয়ার দর পড়ে গেলে টাকা খোয়ানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু কেউ যদি দীর্ঘ মেয়াদে (১৫-২০ বছর) অল্প অল্প করে শেয়ারে লগ্নি করেন, তা হলে নির্দিষ্ট সুদ মেলে এমন লগ্নি প্রকল্পের তুলনায় যথেষ্ট ভাল রিটার্ন (কর বাদ দিয়ে) পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নির্দিষ্ট সুদের প্রকল্পগুলিতে হয়তো লগ্নির সুরক্ষা মেলে। কিন্তু তাদের রিটার্নের হার তেমন চড়া নয়। ফলে আগামী দিনে মূল্যবৃদ্ধি বাড়লে আপনার লগ্নির বেশির ভাগটাই কিন্তু তার পেটে চলে যাবে। ধরুন ডাকঘরে ৫ বছরের জন্য ৮.৫০% সুদে টাকা রেখেছেন আপনি। কর (ধরছি ৩০%) বাদে আপনার প্রকৃত সুদ হবে ৮.৫০%-(৮.৫০ শতাংশের ৩০% বা ২.৫৫%)=৫.৯৫%। কিন্তু এ বার ধরছি ওই পাঁচ বছরে মূল্যবৃদ্ধি ৭%। অর্থাত্‌ প্রতি বছর আপনার লগ্নির প্রায় ১.০৫% অর্থ স্রেফ মুছে যাচ্ছে।
শেয়ার বাজারের ওঠা-পড়া সরাসরি আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু, মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব লগ্নির ক্ষেত্রে দেখা যায় না বলে, এই বিষয়টি আমরা সম্পূর্ণ ভুলে থাকি। তাই প্রত্যেকটি লগ্নির আগে তার রিটার্ন কত হবে তা দেখে নিয়ে এবং মূল্যবৃদ্ধি যাচাই করে তবেই বিনিয়োগ করুন।

মায়ের স্বাস্থ্যবিমা
সুনন্দার মায়ের বয়স ৫২। শুধু তাঁর জন্য বিমা না-করে, দু’জনের ফ্যামিলি ফ্লোটার করুন। দু’জনের ৩ লক্ষ টাকার বিমা করলে বছরে প্রিমিয়াম পড়বে প্রায় ১২,০০০ টাকা। মায়ের বয়স বেশি হওয়ার কারণে প্রিমিয়াম তুলনায় বেশি পড়বে। তবে যত তাড়াতাড়ি বিমা করবেন, তত খরচ কম হবে।

দু’বছর পর বিয়ে
২০১৫ সালে বিয়ের জন্য সুনন্দার চাই ২ লক্ষ টাকা। কিন্তু এত স্বল্প সময়ে ওই টাকা সঞ্চয় হবে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। যেহেতু কম সময়ে ওই টাকা প্রয়োজন, তাই ঝঁুকি নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার রেকারিং চালু করুন। ৯% সুদ ধরে ২ বছরে সেখানে প্রায় ১.৩০ লক্ষ টাকা জমবে। এই খাতে আরও বেশি টাকা রাখা যেত। কিন্তু তা হলে অন্যান্য লক্ষ্যগুলি পূরণ করা যাবে না। তাই আগামী দিনে বেতন বাড়লে অবশ্যই সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ান।

বিয়ের জন্য সোনা
বিদেশে লগ্নির মাধ্যম হিসেবে সোনার কদর কমা, দেশে সোনা আমদানির নিয়ম কঠোর হওয়া এবং ডলার-টাকার দামে ওঠা-নামার জেরে গত কয়েক মাসে সোনার দামে বেশ ওঠা-পড়া দেখা গিয়েছে। কিন্তু সুনন্দাকে বিয়ের জন্য এখন থেকে গয়নার বন্দোবস্ত করতে হবে। তাই আমার মতে, প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা করে কোনও গোল্ড ফান্ড বা গোল্ড ইটিএফে এসআইপি (সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) পদ্ধতিতে লগ্নি শুরু করুন।

কর বাঁচানোর টোটকা
৮০সি ধারায় করছাড় পাওয়া ১ লক্ষ টাকার মধ্যে পিএফের মাধ্যমে সুনন্দার বেশ কিছু টাকা জমছে। কিন্তু তার সঙ্গেই একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট চালু করুন। আপাতত তাতে ৭৫০ টাকা করে রাখুন। ফলে সব মিলিয়ে বছরে ৪৭,২০৮ টাকা জমবে। কিন্তু বেতন বাড়লে পিপিএফে আরও বেশি টাকা রেখে (সর্বোচ্চ ১ লক্ষ) কর বাঁচাতে পারবেন। তবে এর সঙ্গেই ৮০ডি ধারায় স্বাস্থ্যবিমার জন্য এবং ৮০ই ধারায় শিক্ষাঋণের সুদের উপর করছাড়ের সুবিধা নিতে পারেন আপনি।

বাড়ি কিনতে সঞ্চয়
২০১৬-য় বাড়ি সুনন্দা কিনতে চাইলেও, তা সম্ভব নয়। কারণ রেকারিং বা এসআইপি-র টাকা তাঁর বিয়েতে খরচ হবে। ফলে বাড়ির ডাউনপেমেন্টের জন্য তাঁর হাতে কোনও টাকা থাকছে না। বিয়ের পর লগ্নি বন্ধ হলে তাঁর হাতে যে-টাকা থাকবে, তা নতুন করে কোনও ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নি করে রাখবেন। পাশাপাশি, ২০২০ সালে শিক্ষাঋণ শেষ হওয়ার পর তাঁর হাতে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা থাকবে। ফলে সেই সময়ে বাড়ি কেনার কথা ভাবতে পারেন। তাই বাড়ি কিনতে ২০১৬-র বদলে ২০২০ সালকে লক্ষ্যমাত্রা ধরুন।

জীবনের সুরক্ষা
সুনন্দা সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাই অবশ্যই তাঁর একটি টার্ম পলিসি করে রাখা উচিত। তবে এখনই এই খাতে টাকা ঢালতে অসুবিধা হবে। আগামী দিনে বেতন বাড়লে প্রথমেই একটি ভাল টার্ম পলিসি কিনুন। এতে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত পাবেন না। মিলবে শুধুমাত্র জীবনের সুরক্ষা। যে কারণে এর প্রিমিয়ামও অন্যান্য জীবন বিমা প্রকল্পের তুলনায় অনেকটাই কম।

বর্তমানে সুনন্দার বেতন অনুসারে তাঁকে দিশা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আশা করব আগামী দিনে তিনি সফল ভাবে সঞ্চয় করতে ও পরিবার চালাতে পারবেন। সে জন্য শুভেচ্ছা রইল।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.