বেলা তখন ১১ টা। শুনসান সেবক করোনেশন সেতুতে দাঁড়িয়ে সিকিম যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন পাঁচজন। কিন্তু গাড়ি পাচ্ছেন না। সময় কাটাবার জন্য চা খেতে সামনের একটি দোকানে এসে অর্ডার দিয়েছেন। একটি দোকানে চা পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু বসার জায়গা নেই। সামান্য একটা ঝাঁপ আধখোলা।
বেলা ১২ টা। সেবক বাজারে ঝাঁপ, দরজা অল্প খুলে খদ্দেরের আশায় বসে আছেন কয়েকজন। কিন্তু এলাকায় জনমানুষ নেই।
বেলা ১টা। সেবক কালীবাড়ির নিচে পরিচিত ভিড়টা নেই। কয়েকজন উপরে উঠবেন কি উঠবেন না তাই ভেবে চলেছেন। চারপাশের থমথমে অবস্থা দেখে তারা খানিকটা গুটিয়ে রয়েছেন। এই ছবি শিলিগুড়ি সংলগ্ন সেবকের। মোর্চার ডাকা জনতা কার্ফুর প্রথম দিনের ছবিটা ছিল এরকমই। |
সুনসান সেবকের বাজার এলাকা। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল। |
মোর্চার ফতোয়ার বাধ্য হয়ে ১০ দিন ধরে বন্ধ রেখেছেন দোকান পাট। ব্যবসা বন্ধ, তাই ভাঁড়ারও শূন্য। তাই বিপদ হতে পারে জেনেও মোর্চার জারি করা জনতা কার্ফুর মধ্যেও দোকানের ঝাঁপ খুলে রেখেছেন শিলিগুড়ি সংলগ্ন সেবকের দোকানিরা। যদিও চট করে দেখে বোঝা যাবে না দোকান খোলা না বন্ধ। সেখান থেকেই চলছে কেনা বেচা। যদিও তাতেও কোনও লাভ হচ্ছে না। কারণ এলাকায় লোকই তো নেই। তাই সারাদিনে এক একটি দোকান যেখানে স্বাভাবিক দিনে প্রায় আট থেকে দশ হাজার টাকা আয় হয়, এখন তা হাজারও পৌঁছাচ্ছে না। কেউ কেউ তো খাতাই খুলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। তবে সকলেই প্রায় এক বাক্যে স্বীকার করলেন তাঁরা আর বনধ চান না। পাল্টা প্রশ্ন তাঁদের একজনের, আপনারা বলতে পারেন, “কবে উঠবে বনধ? কবে স্বাভাবিক হবে পাহাড়?” |
চালু চা বাগান ও বাড়ির কাজে ব্যস্ত মহিলারা। |
মোর্চার ডাকা জনতা কার্ফুতে ঘরেরে বাইরে বেরনোর উপরেও ফতোয়া জারি করেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তার ভয়ও রয়েছে ষোল আনা। কারণ ফতোয়া না মানলে দোকানপাট ভাঙচুর থেকে আরও বড় ধরণের শাস্তি হতে পারে। তবু শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে দোকান খুলেছেন তাঁরা। বাইরের দিকের জানালা বা একটা ঝাঁপ তুলে নিজেরা বাইরে বসে রয়েছেন কোনও খদ্দের যদি পাওয়া যায় সেই আশায়। তা সত্বেও লোকজনের দেখা না পাওয়ার হতাশা গ্রাস করেছে তাঁদের। এলাকার সৌরেন প্রাধান বললেন, “বনধ যেদিন থেকে শুরু হয়েছে সেই দিন থেকেই আমাদের ব্যবসা বন্ধ। আমাদের এটাই একমাত্র রোজগার। এতদিন ধরে বন্ধ থাকায় আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে।” সুরেশ লিম্বুর প্রশ্ন, “কোনও দাবি থাকলে সবাই মিলে দিল্লি গিয়ে বন্ধ করুক। এখানে আমাদের মত সাধারণ মানুষের রুজিতে টান দিয়ে। সেবক বাজারের সুনয়না শেরপা নিজেই ডেকে জানালেন, “আমরা বনধ চাইনা। আমরা খেতে চাই, শান্তিতে থাকতে চাই।” |
কার্শিয়াঙে বিশ্বরূপ বসাকের ছবি। |