ধরা পড়ে অস্ত্র কারবারির হুমকি, থানাতেও পাঠাচ্ছি
ল্যাণী থানার টহলদারি পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া একটি রিভলভারের খোঁজে নেমে আস্ত এক অস্ত্র ভাণ্ডারের হদিস পেল পুলিশ। সঙ্গে উপরি পাওনা, প্রায় দু’ বছর ধরে সিআইডি’র ‘মোস্ট ওয়ান্ডেট’ তকমা আঁটা এক দুষ্কৃতী, রাজু মণ্ডল। সীমান্তে অস্ত্র পাচার থেকে বেশ কয়েকটি খুন, জাল নোটের কারবার থেকে ডাকাতি, তার বিরুদ্ধে সিআইডি এবং জেলা পুলিশের অভিযোগের পাহাড় জমে ছিল। তবে, ধরা পড়লেও মচকায়নি রাজু। এ দিনও গ্রেফতারের পরে সে পুলিশকে হুঁশিয়ারি ছুড়ে দেয়, “বহু নেতা মন্ত্রী আমাকে ভালই চেনেন। আমাকে ধরে লাভ নেই। বরং কিছু অস্ত্র লাগলে বলুন পাঠিয়ে দেব।’’
রাজু মণ্ডল।
—নিজস্ব চিত্র
মঙ্গলবার রাতে হরিণঘাটার পূর্বপাড়ায় মাজিরুল ইসলাম মণ্ডল ওরফে রাজুকে গ্রেফতারের পরে নদিয়া জেলা পুলিশ তাই স্পষ্টই খুশি। জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “সিআইডি’র পাশাপাশি জেলা পুলিশও রাজুর খোঁজ করছিল। প্রায় দু’বছর পরে শেষ পর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখলাম আমরা।”
তবে, পুলিশের ওই .৩৮ বোরের ওয়েবলি স্কট রিভলভারটির খোঁজ মেলেনি। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “রাজু এবং তার শাগরেদদের জেরা করে পুলিশের ওই হারানো অস্ত্র উদ্ধারই এখন মূল লক্ষ্য।”
যদিও ওই অস্ত্রের খোঁজে নেমেই এ দিনের রাতভর অভিযানে পাওয়া গিয়েছে বিহারের মুঙ্গেরে তৈরি একটি ৯ এমএম রিভলভার, অন্তত ৫টি ওয়ান শটার, বেশ কিছু পাইপ গান, ৬ রাউন্ড কার্তুজ এবং বোমা তৈরির অন্তত ৫০ কেজি মশলা। রাজুর বাড়িতে একটি লেদ মেশিনেরও খোঁজ মিলেছে। সেটি যে অস্ত্র তৈরির কাজেই ব্যবহার করা হত পুলিশের জেরায় রাজু তা স্বীকার করেছে। মঙ্গলবার রাতে ধরা পড়ার পরে পুলিশের জেরার মুখে তাকে নির্দ্বিধায় বলতে শোনা যায়, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্রায় সাড়ে চার হাজার পাইপগান পাঠিয়েছি উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায়। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে শাসক দলের লোক বলে পরিচিত অনেকেই আমার কাছে অস্ত্র কিনেছে।’’
গত কয়েক দিন ধরেই নদিয়া জেলা পুলিশের কাছে খোঁজ ছিল, হরিণঘাটা-চাকদহ এলাকায় প্রায়ই আসছে রাজু। ওই দিন রাতে কল্যাণীর এসডিপিও চন্দ্রশেখর বর্ধনের নেতৃত্বে কল্যাণী-পুলিশের একটি বড় দল হানা দেয় মিত্রপুর পূর্বপাড়ায়। পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তাঁরা বাড়ি ঘিরে ফেলার পরেই ওই দুষ্কৃতী বুঝতে পেরেছিল, বাড়ি ঘিরেছে পুলিশ। ছাদে উঠে সে পাশের পুকুরে লাফ দিতে যায়। কিন্তু সেখানেও পুলিশ দেখে এ বার পাশের বাড়ির ছাদ টপকে পালানোর চেষ্টা করে। তবে সেখানেও পুলিশ মোতায়েন থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি।
রাজুকে ধরার পরে তাকে নিয়ে ওই রাতেই পুলিশ একের পর এক দুষ্কৃতীদের গোপন ডেরায় হানা দিতে থাকে। চাকদহের উত্তরলালপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় রাজুর ঘনিষ্ঠ ‘সুপারি কিলার’ শুভব্রত রায় ওরফে রায় বাপিকে। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে পাঁচটা খুন ও অস্ত্র পাচারের অভিযোগ। তবে ওই যুবককে ধরতে গিয়ে বাধা পায় পুলিশ। রায় বাপির প্রহরায় থাকা জনা কয়েক দুষ্কৃতী পুলিশকে লক্ষ করে বোমা ছুড়তে গেলে পুলিশ অবশ্য তাদের ধরে ফেলে। বাপি গ্রেফতারের পরে, রাতেই পুলিশ ছোটে চাকদহের বেলঘরিয়া এলাকায়। সেখান থেকে অস্ত্র কারবারের সঙ্গে যুক্ত রাহিদুল হোসেন নামেও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বাপির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কয়েকটি ছবি ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেয়েছে। পাওয়া গিয়েছে বেশ কয়েকটি দামী মোবাইল, সিম কার্ড, গাড়ির কাগজপত্র।
বেশ কিছু জাল টাকাও মিলেছে। পুলিশ তার চার চারটি মোটরবাইক আটক করেছে। বাপির বাড়ি থেকে পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ওই ময়না তদন্তের রিপোর্ট তার কাছে এল কী করে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.