সম্পাদক সমীপেষু...
দুর্নাম শুধু শালিকের
বিশ্বনাথ বণিকের ‘দুইটি শালিক ঝগড়া করে...’ (কলকাতা, ১৬-৭) চিত্রটি দেখে মুগ্ধ হলাম। তবে, প্রকাশিত চিত্রটি কিন্তু ‘ঝগড়া’ নয়, প্রগাঢ় অপত্যস্নেহের। ক্ষুধার্ত শাবকের জন্য চঞ্চুপুটে খাবার নিয়ে শত্রুর আক্রমণের আশঙ্কায় পক্ষিমাতা বেজায় উদ্বিগ্ন।
ঝগড়াঝাঁটি অনেক পাখিই করে, অথচ যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় শুধু শালিকেরই বদনাম। আসলে এই ভ্রান্ত ধারণার মূলে রয়েছে অদ্ভুত এক মনস্তাত্ত্বিক কারণ। তা হল, শৈশবে ‘সহজপাঠ’-এ পড়ে আসা
তিনটি শালিক ঝগড়া করে
রান্নাঘরের চালে
’।
এই পংক্তিটি সবার স্মৃতিতে আজও সমুজ্জ্বল।
চুদুরবুদুর
সুজিষ্ণু মাহাতোর ‘এ বার বিপণনে বিতর্কে চুদুরবুদুর’ (২৬-৭) পড়ে পুলকিত হলাম। আমাদের শৈশবে বহুব্যবহৃত এক আঞ্চলিক শব্দের সংসদ কাঁপানোর বার্তা এবং পরবর্তী কালে অদ্বিতীয় কলকাতা নগরে সেই শব্দেরই বহুমানপ্রাপ্তি— আমাদের কাছে সানন্দ চমকই বটে। শ্রদ্ধেয় ভাষাবিদ পবিত্র সরকার শব্দটি সম্পর্কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেছেন এবং জানতে পেরেছি, শব্দটি যে ঢাকা বাংলা একাডেমী প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’-এ রয়েছে, এর আগে অন্যত্র সে কথাও বলেছেন। পণ্ডিতপ্রবর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রধান সম্পাদকরূপে বহুজনের সহায়তায় ১৯৬৫-তে দু’খণ্ডে এক হাজার আটান্ন পৃষ্ঠায় অভিধানটি সম্পন্ন করেন। সেখানে ‘চুদুরবুদুর’ শব্দটির লিপিরূপ ও ব্যবহারচিত্রটি এ রূপ:
চু’দুর্ বুদুর্=(সি, পা)— ক্রি. বিণ.. বাড়াবাড়ি¶ (অনু.)।
২ =(ম, ব, ঢা)— বি.গড়িমসি¶...
৩ =(পা)— বি. এক প্রকার খেলা¶
(প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় মুদ্রণ, পৃ-৩০১)
প্রসঙ্গত, সি-পা-ম-ব-ঢা— এরা বিভিন্ন জেলানামের মুণ্ডমাত্র।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সূত্র ধরে বলি, ‘চুদুরবুদুর’-এর চেয়ে ‘নো চুদুরবুদুর’-এর অভিক্রিয়া বেশি। এ হল কড়া হুকুম: গড়িমসি করা বা বাগড়া দেওয়া চলবে না— একেবারে সোজাসাপ্টা কাজের নির্দেশ। বহু দিন ধরে গুয়াহাটিবাসী বলে অচর্চিত শব্দটি ঘুমিয়ে পড়েছিল। অনেক দিন পর হঠাৎ সে দিন সাড় পেল। সিনেমার পোস্টারের পাখিটির মতো দেখি ডানাও মেলল।
মনে পড়ছে শৈশবে ব্যবহৃত আরও কতগুলো দুরন্ত প্রয়োগের শব্দ। তাদের অন্যতম ‘চুকুমবুদাই’। সিলেট-কাছাড় অঞ্চলে শব্দটির বহুল প্রচার ছিল। এখনও নিশ্চয়ই আছে। উল্লিখিত আঞ্চলিক অভিধানে সিলেট জেলার আঞ্চলিক শব্দরূপেই এটি গৃহীত। এর অর্থ: চুক অর্থাৎ রাগ/ফালতো রাগ/ত্যাড়া মেজাজ আছে কিন্তু বোধবুদ্ধি কম, এমন জন। চুক্ আছে বুদ্ নাই ইতি চুকুমবুদাই।
‘চুকুমবুদাই’রা সিলেট-কাছাড়ের বাইরেও মোটেই দুর্লভ নন, এঁরা সব জেলাতেই বর্তমান, অভিধা-ভেদে। শব্দটির গর্ভে তেজ, রস দুই-ই আছে। এক দিন এই শব্দটিরও যদি বিখ্যাতি হয়, আশ্চর্য হব না। ষাট বছর ধরে ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক বিমিশ্রণের প্রতিক্রিয়ায় শব্দের প্রব্রজন স্বাভাবিক বাস্তব। প্রক্রিয়াটি প্রায়শ ঘটে নীরবে, হয়তো হঠাৎ সরবও।
আবার বলি, (নো) চুদুরবুদুর-এর এই নাগরিক-অভ্যর্থনা বেশ লাগছে। ভাল লাগছে এ কথা ভেবে যে, নিত্য সমস্যার মধ্যেও বাঙালিমন এখনও তেমনই —‘...তবু রঙ্গভরা’।
রানিকুঠি
সঞ্জীব রাহা বলেছেন, ‘মংপু রবীন্দ্রভবনের সংস্কার জরুরি’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১০-৬)। আর একটি রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত ভবন কৃষ্ণনগরের ‘রানিকুঠি’। এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরাদেবী চৌধুরানির নাম জড়িত। কৃষ্ণনগর ডাকবাংলো মোড়ে বাড়িটি কিনেছিলেন পাবনার হরিপুরের জমিদার দুর্গাদাস চৌধুরী। পরিবারের তৃতীয় পুত্র প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ হয় ইন্দিরাদেবীর। সেই সূত্রে রবীন্দ্রনাথ এই বাড়িতে আসেন ও কিছু দিন থাকেন। পরে বাড়িটি নদিয়ার রাজা কিনে নেন। নাম হয় রানিকুঠি। বাড়িটি ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.