সম্পাদকীয় ১...
সংযম আবশ্যক
ম্মু ও কাশ্মীরের কিস্তওয়ার জেলায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জের এখনও অব্যাহত। ঘটনার পাঁচ দিন পরেও রাজ্যের আট জেলায় কার্ফু বা সান্ধ্য আইন বলবৎ। সেনা-টহল চলিতেছে, কোথাও কোথাও সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজও। লক্ষ্য: উভয় সম্প্রদায়েরই জনসাধারণের মনে ভরসা ও আশ্বাস জোগানো। গত শুক্রবার ঈদের শোভাযাত্রায় দুই হিন্দু মোটরবাইক আরোহী যুবকের ঢুকিয়া পড়ার মতো অকিঞ্চিৎকর ঘটনাকে উপলক্ষ করিয়া যখন এমন হানাহানি, অগ্নিসংযোগ ও উত্তেজনা হইতে পারে, তখন কাশ্মীরে সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক কী বিস্ফোরক স্পর্শকাতরতার উপর দাঁড়াইয়া আছে, তাহা সহজেই অনুমেয়। হয়তো এই কারণেই, রাজ্যের ন্যাশনাল কনফারেন্স সরকার ও তাহার মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা দাঙ্গা-উত্তর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখিতে গিয়া হয়তো কিছুটা বাড়াবাড়ি করিয়া ফেলিয়াছেন। তিনি কার্ফু রদ করেন নাই, কিস্তওয়ার শহরে ঘটনার সময় উপস্থিত রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজ্জাদ কিচলুর সন্দেহজনক ভূমিকার এবং সমগ্র ঘটনাপরম্পরার বিচারবিভাগীয় তদন্তও শুরু করিয়াছেন। এ সকলই দরকারি পদক্ষেপ। কিন্তু প্রবীণ বিরোধী নেতাদের কিস্তওয়ারে যাইতে না দেওয়া কিংবা গণমাধ্যমকে উত্তেজনার এলাকা হইতে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত প্রশ্নাতীত নয়।
বিজেপির রাজ্যসভার নেতা অরুণ জেটলি পরিস্থিতি সরজমিনে খতাইয়া দেখিতে ঘটনার অব্যবহিত পরেই কিস্তওয়ার যাত্রা করিয়াছিলেন। তাঁহার এই সফরের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা ছিল, সন্দেহ নাই। জম্মু এমনিতে হিন্দুপ্রধান হইলেও কিস্তওয়ার অঞ্চলে জনসংখ্যার ষাট শতাংশ মুসলিম। রাজ্যের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকা-ত্যাগ ইত্যাদি প্রশ্নে বিজেপির অবস্থানের কথা মাথায় রাখিলে দাঙ্গাপীড়িত কিস্তওয়ারে এই দলের নেতাদের সফর এই সময় হয়তো খুব দায়িত্ববোধের পরিচায়ক নয়। কিন্তু অন্য দিকে, গণতন্ত্রে সব দলেরই এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরজমিন সফরের অধিকার শিরোধার্য। বস্তুত, বিরোধী দলকে না আটকাইয়া বরং তাহাদের তথা সমস্ত দলকে সঙ্গে লইয়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় শান্তিপ্রতিষ্ঠায় মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হইতে পারিতেন। তাহাই হইত সদর্থক গণতন্ত্রের অনুশীলন। ওমর সরকারের অন্য বিচ্যুতি হইল, গণমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা। ইন্টারনেট বাহিত সোশাল নেটওয়ার্কিং এই ধরনের বিস্ফোরক পরিস্থিতিতে যদি বা গুজব ছড়ানোর মতো বিপজ্জনক দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে সে কথা প্রযোজ্য নয়। গণমাধ্যমই জনসাধারণকে প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে, এক জেলা বা এলাকার অবস্থা সম্পর্কে অন্য জেলা বা এলাকার মানুষদের বিভ্রম ও প্রমাদ ঘুচাইয়া সত্যকার চিত্রটি তুলিয়া ধরে। তাহাতে গুজব ছড়ানো বন্ধ হয়, গুজবের শক্তি কমিয়া যায়। ওমর আবদুল্লার এই নিষেধাজ্ঞা অতএব প্রাজ্ঞতার পরিচায়ক নয়।
তবে কিস্তওয়ার-সহ জম্মুর অন্যত্রও সরকারি কড়াকড়িতে ফল মিলিয়াছে। সুপ্রিম কোর্টও বলিয়াছে, রাজ্য সরকার অন্তত ঘুমাইয়া থাকে নাই, করণীয় পদক্ষেপ করিয়াছে। উত্তেজনার এলাকাগুলিতে নাগরিক সমাজ সংগঠিত হইয়া পথে নামিয়াছে। দুই সম্প্রদায়েরই বিশিষ্ট ও মান্য ব্যক্তিরা শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা লইয়া মহল্লায় ঘুরিতেছেন। হুরিয়তের নেতাদের মধ্যে যাঁহারা অকুস্থলে যাইবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছিলেন, সরকার তাঁহাদেরও স্বগৃহে অন্তরিন রাখিয়া পরিস্থিতির অবনতি রুখিয়াছে। সংসদে দাঁড়াইয়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অসুস্থ সুশীলকুমার শিণ্ডের তরফে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাইয়াছেন, ১৯৯০ সালের মতো কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাশ্মীর ত্যাগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কিছুতেই ঘটিতে দেওয়া হইবে না। সকল পক্ষ সংযত থাকিলে শান্তি দ্রুত ফিরিতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.