নওয়াজ শরিফের ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ‘নতুন সূচনা’র ডাকে সাড়া দিল নয়াদিল্লি। আজ ইসলামাবাদে পাক প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যে তাঁর বক্তব্যকে স্বাগত জানান বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন। সমস্ত বকেয়া দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে নয়াদিল্লি যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা জানানোর পাশাপাশি সেই আলোচনার জন্য ইসলামাবাদের সামনে কিছু শর্তও রেখেছে ভারত।
রাতের দিকে অবশ্য একটি সংবাদসংস্থা দাবি করে, শরিফের ওই বিবৃতি আসলে পুরনো। নির্বাচনের আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ভারতকে উদ্দেশ করে যে মৈত্রী-বার্তা দিয়েছিলেন, তারই ফুটেজ আজ ফের সম্প্রচার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভারত বা পাক সরকার কেউই কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে শোনা গিয়েছে, পাক চ্যানেলে শরিফের ওই ফুটেজ আর দেখানো হচ্ছে না।
পাক প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি পুরনো কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে। তবে ওই বিতর্কে না ঢুকে অনেকেই বলেছেন, গত দেড় সপ্তাহ ধরে নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা, দফায় দফায় পাক সেনার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন এবং ভারতীয় জওয়ানদের হত্যার ঘটনার মধ্যেও দু’দেশের সরকারের মধ্যে যে ট্র্যাক-টু কূটনীতি বজায় রয়েছে, দু’দেশের বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি তা স্পষ্ট করে দিল। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বরাবরই মনে করেন, পরিস্থিতি প্রশমিত করতে কূটনৈতিক আলোচনা ছাড়া পথ নেই। নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার পথ বন্ধ করে দিলে নিজেদের ক্ষোভ জানানোর পথ বন্ধ করার পাশাপাশি কট্টরপন্থীদেরও প্রশ্রয় দেওয়া হবে। সাউথ ব্লকের বক্তব্য, আলোচনার টেবিলই একমাত্র জায়গা, যেখানে সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে ইসলামাবাদের উপর চাপ তৈরি করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পর ভারত সম্পর্কে যেটুকু ইতিবাচক বার্তা নওয়াজ দিয়েছেন, এই সঙ্কটের সময় তাকেই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মুখ্য বিষয়সূচি করে তোলার কৌশল নিচ্ছে নয়াদিল্লি। আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও আগামী কাল পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সে দেশের প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এই উপলক্ষে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
নওয়াজ ওই বিবৃতিতে বলেছেন, “খোলা মনে আলোচনার টেবিলে বসা প্রয়োজন। আমাদের ভাল বন্ধু হতেই হবে।” এর ভিত্তিতে নয়াদিল্লির বক্তব্য, শুধু কথা নয়, এ বার কাজেও করে দেখাতে হবে ইসলামাবাদকে। আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে আজ মূলত তিনটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন ভারতীয় মুখপাত্র।
এক, নিয়ন্ত্রণরেখার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে হবে কারণ এটাই দু’দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আস্থাবর্ধক মাপকাঠি।
দুই, পাকিস্তানের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস পাচার বন্ধ করতে হবে। এবং
তিন, মুম্বই হামলায় অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ভারতের মতোই কথা চালানোর পাশাপাশি চাপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া জারি রেখেছে পাকিস্তানও। নওয়াজের বিবৃতির দিনই সে দেশের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নিয়ন্ত্রণরেখায় ‘ভারতীয় সেনার আগ্রাসন’ নিয়ে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ হয়েছে। |