ঘণ্টা তিনেক বৃষ্টি হলেই দাঁড়িয়ে যায় হাঁটুজল। কিন্ত সেই জল নামতে রাত পেরিয়ে যায়। এমনই দশা কালনা শহরের নিকাশির। বছরের পর বছর ধরে নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় জল জমার সমস্যায় জেরবার হতে হয় বলে অভিযোগ শহরবাসীর।
পুরনো শহর কালনার নিকাশি ব্যবস্থা মূলত দ্বিমুখী। একটি ভাগীরথী ও অন্যটি বেহুলা নদীর দিকে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরে এক সময়ে দেড়শোরও বেশি পুকুর ছিল। এই সমস্ত পুকুরগুলির সঙ্গেও নিকাশি নালার সংযোগ ছিল। ফলে, বৃষ্টির জল তাড়াতাড়ি নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু বর্তমানে সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে অধিকাংশ পুকুরই। অভিযোগ, প্রশাসনিক উদাসীনতায় বহু পুকুর বুজিয়ে সেখানে মাথা তুলেছে বাড়ি। এ সবের সঙ্গে শহরে লোকসংখ্যা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও উন্নত হয়নি নিকাশি ব্যবস্থা।
টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড, বৈদ্যপুর মোড়, কামারশালা গলি, মেডিসিন কমপ্লেক্স, মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বর, আদালতগামী রাস্তা, মহিষমর্দিনী গার্লস ইনস্টিটিউশনের কাছাকাছি রাস্তা-সহ বহু এলাকায় জল জমে যায়। ফলে, ভারী বৃষ্টি হলেই বাড়ির বাইরে বেরোনো সমস্যা হয়ে পড়ে। শহরের বধূ আলপনা মল্লিকের বক্তব্য, “কিছু জায়গায় এত জল জমে যায় যে রাস্তায় নামতে ভয় করে। ছেলেমেয়েরাও জল পেরিয়ে স্কুলে যেতে চায় না।” শহরের বাসিন্দা রবিন মণ্ডলের কথায়, “রাস্তায় জল জমার সমস্যা বহু বছর ধরেই দেখে আসছি। দোকান, বাজারে যাওয়ায় মুশকিল হয়ে পড়ে। এই অবস্থা কবে পাল্টাবে জানি না।” রবিবার দুপুরে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে শহর। সব থেকে বেশি জল জমে যায় নতুন বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার মুখে এসটিকেকে রোডে। কোমর সমান জল পেরোতে সমস্যায় পড়েন বহু মানুষ। সোমবার সকাল পর্যন্ত জল জমে ছিল। |
পুরসভার চলতি বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে জল জমার সমস্যা দূর করতে একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরির কথা জানিয়েছিল। মূলত পরিকল্পনা ছিল, মাটির তলা দিয়ে নিকাশি নালা তৈরি করে শহরের জল বাইরের বড় জলাশয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলা। এ জন্য বরাদ্দ হয় ৬০ লক্ষ টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা পুরসভা গ্রহণ করেনি। বরাদ্দ টাকা খরচ করা হয় নতুন রাস্তা তৈরিতে। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, এর আগে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মাটির তলায় নর্দমা তৈরি করতে গিয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়। সেই কাজের জন্য মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে মাটি খোঁড়ায় এলাকাবাসী সমস্যায় পড়েন। শহরজুড়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে হলে বাসিন্দাদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না বলে পুরসভার আশঙ্কা।
জল জমার সমস্যার কথা মেনে নিয়ে কালনার পুরপ্রধান তথা তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে পুরনো যে পদ্ধতিতে জল নিষ্কাশন হয় তা আরও উন্নত করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। সে জন্য পুরনো নর্দমাগুলি সংস্কারের পাশাপাশি নতুন কিছু নর্দমা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে দাঁতনকাঠিতলা থেকে ভাগীরথীর দিকে একটি নিকাশি নালা তৈরি করা হচ্ছে। খরচ হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। বৈদ্যপুর মোড় থেকে ওমরপুর গ্রামের বেহুলা নদী পর্যন্ত একটি পাকা নর্দমা তৈরি করে নিকাশির সমস্যা আরও কিছুটা মেটানোর চেষ্টা চলছে।”
মজে যাওয়া পুকুরগুলির জলধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া শহরের সমস্যা বাড়িয়েছে, স্বীকার করেন বিশ্বজিৎবাবু। তিনি জানান, সেচ দফতরের কাছে শহরের মজে যাওয়া পুকুরগুলি সংস্কারের ব্যাপারে জানানো হয়েছে। ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে যেমন গ্রামের মজা পুকুর সংস্কার করা হয়, তেমনই কোনও পরিকল্পনায় শহরের পুকুরগুলি সংস্কারের আবেদন জানানো হয়েছে। দফতরের তরফে পুকুরের দাগ, খতিয়ান নম্বর দিয়ে লিখিত আবেদন জানাতে বলা হয়েছে বলে জানান পুরপ্রধান। |