শুধু খুবসুরত নন
ত দিন ছিল বাবা অনিল কপূরের সঙ্গে তুলনা।
সিনেমা করেও তাঁর মূল পরিচয় আটকে থেকেছিল এক ফ্যাশনদুরস্ত অভিনেত্রী হিসেবে।
যিনি প্রত্যেক বছর কান-য়ে যান এক কসমেটিকস কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে।
আর যাঁর স্টাইলের সেন্স এতটাই তুখোড় যে অন্যান্য অনেক অভিনেত্রী তাঁর কাছে সহজেই টিপস নিতে পারেন।
এ সবের মধ্যে মুক্তি পেয়েছে সোনম কপূরের দু’টো সিনেমা। ‘রাঞ্ঝনা’ আর ‘ভাগ মিলখা ভাগ’। আর অনেকেই বলছেন যে এই সিনেমাতে তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা কিছু সমীকরণ পালটে দিয়েছে।
আগে যাঁরা সোনমকে শুধু স্টাইল ডিভা বলে তাচ্ছিল্য করতেন, তাঁরাই এখন নড়েচড়ে বসছেন। বলছেন অভিনয়ের দক্ষতা আস্তে আস্তে বেশ রপ্ত করছেন সোনম।
কান-য়ে গিয়ে বেশ কিছু এক্সপেরিমেন্ট করেছেন নিজের পোশাক-আশাক নিয়ে। করেছেন ম্যাগাজিনের জন্য দুঃসাহসী সব ফোটোশ্যুট। তা হলে কি এক নতুন সোনম কপূরের অভিষেক হচ্ছে ফিল্ম দুনিয়ায়? যিনি স্টাইল আইকন হিসেবে যতটা দুঃসাহসী, সিনেমার পরদায় চ্যালেঞ্জ নিতেও ততটাই তৈরি।
‘ভাগ মিলখা ভাগ’য়ে স্ক্রিনে সোনম ছিলেন মাত্র ১৫ মিনিট। “কিন্তু দর্শকের মধ্যে তাতেই কী সাঙ্ঘাতিক প্রভাব! এটাই তো একজন অভিনেতার সব চেয়ে বড় সাফল্য যে দর্শক পরদায় তাঁর আরও বেশি উপস্থিতি চাইছে,” বলছেন পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা।
ডিজাইনার অনামিকা খন্না সোনম কপূরের সঙ্গে প্রচুর সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছেন। বলছেন, “শুধু সিনেমা নয়, আমি প্রতিদিন ওর সঙ্গে কাজ করি। সোনম শুধু যে সুন্দরী তা নয়। ও বুদ্ধিদীপ্ত। প্রচুর জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য অনেক কিছু সম্পর্কে বেশ স্পষ্ট ধারণাও আছে ওর। খুব সেনসিটিভ আর কেয়ারিং। ওকে আমার একজন পরিপূর্ণ মানুষ মনে হয়। ফ্যাশন সম্পর্কে ও ওয়াকিবহাল। ও জানে ওর শরীরের গঠনের সঙ্গে কোন পোশাকটা মানাবে। খুব আত্মবিশ্বাসী। রিস্ক নিতে জানে। আর সেই কনফিডেন্সটা আছে বলেই ও সাহসী পোশাক পরেও সাবলীল ভাবে নিজের কাজটা করতে পারে। অন্যকে দেখে তাঁদের মতো করে সাজার চেষ্টা ও কখনওই করে না। নিজের কমফর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে অনেক পরীক্ষা করার সাহস রাখে।”
সেই সাহসটাই কি আজকাল সোনমের অভিনয়ের মধ্যেও প্রকাশ পাচ্ছে? “একেবারে ঠিক। ফ্যাশনের দুনিয়ায় যে সাহসটা সোনম দেখায়, সেটাই আজকাল ওর সিনেমার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি,” জানালেন অনামিকা।
আর সেটাই সোনম করেছিলেন ‘রাঞ্ঝনা’তে। অভিনয় করেছিলেন এক মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের মেয়ের ভূমিকায়। ‘রাঞ্ঝনা’র পরিচালক আনন্দ এল রাই। বলছেন, “আমি স্টাইল সম্পর্কে একদম অজ্ঞ। জিন্সের সঙ্গে কী পরা উচিত তাই বুঝতে পারি না। ফিল্মটি করার আগে সোনমের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিল কোথাও যেন ও বেশ ক্লান্ত এই স্টাইল ডিভা আখ্যাটা নিয়ে। অবশ্য ও সেটা আমাকে কোনও দিন বলেনি, কিন্তু আমি টের পেয়েছিলাম।”
আনন্দ সোনমের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেছেন। “বুঝেছি ওর মধ্যে লুকিয়ে আছে একটা মধ্যবিত্ত মেয়ে। যাঁরা ওকে ওর বাড়িতে দেখেছেন তাঁরা এটা জানেন। শুধুমাত্র ফ্যাশন নিয়েই ও আটকে থাকতে চায় না। ও ভাল অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত হতে চায়,” বলছেন আনন্দ। ‘রাঞ্ঝনা’ করার সময় সোনমকে আনন্দ ওঁর কমফর্ট জোন’ থেকে বের করে এনে অভিনয় করিয়েছিলেন। পরিচালকের মতে সোনম এখন একটা সন্ধিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। “পেশাগত দিক দিয়ে তো বটেই, মানসিক দিক দিয়েও ও এখন পরিণত। আশা করি ‘রাঞ্ঝনা’র পরের ফিল্মে সেই বোধটা দেখা যাবে,” বলছেন আনন্দ।
সোনমের খুব কাছের মানুষ রাকেশ। বলছেন, “আমি চাই যে সোনম এ ভাবেই যেন ফ্যাশন আইকন হয়ে থাকে। যে ভাবে ও আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ায় নিজের একটা জায়গা করে নিয়েছে সেটা খুব সহজ নয়। তবে মানুষ যেন ওর এই ফ্যাশন আইকন ইমেজটার সঙ্গে ওর অভিনীত চরিত্র গুলিয়ে না ফেলেন। সোনমের সঙ্গে পরপর দু’টো সিনেমা করে বুঝেছি যে ওর মধ্যে ভাল অভিনয় করার খিদে মারাত্মক ভাবে চাগাড় দিয়ে উঠেছে। একটা সময় ছিল যখন ওর চারপাশে অনেক কিছু বলা হত, ‘এটা করো’, ‘সেটা কোরো না’। সোনম হ্যাজ টেস্টেড ব্লাড। কিন্তু পাঁচ বছর এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ওর নিজের ভেতরের আওয়াজটা শোনার সময় এসেছে।”
সামনের নভেম্বর মাস থেকে সোনম কাজ শুরু করছেন ‘খুবসুরত’য়ের রিমেকে। হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় ছবিটি ছবিটি বানিয়েছিলেন ১৯৮০তে। রেখা সেই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিলেন। রেখার সেই চুলবুলি চরিত্রে থাকছেন সোনম। রিমেকটির পরিচালক এক বাঙালি। শশাঙ্ক ঘোষ। বিজ্ঞাপন জগতের কেষ্ট-বিষ্টুদের মধ্যে একজন শশাঙ্ক। ‘ইয়েহি হে রাইট চয়েজ বেবি’-লাইনটি তাঁরই রচিত। এর আগে দু’টি অন্য ঘরানার ছবি বানিয়েছেন তিনি। একটি ‘আল্লাহ কে বন্দে’ খ্যাত ‘ওয়্যসা ভি হোতা হে পার্ট টু’। অন্যটা ‘কুইক গান মুরগন’।

হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘খুবসুরত’য়ের রিমেকে অভিনয় করছেন সোনম
রিমেকটির গল্প অবশ্য মূল ছবির থেকে আলাদা। স্ক্রিপ্টটি লিখেছেন সোনমের ছোট বোন, ছাব্বিশ বছর বয়সী রিয়া কপূর। “আমি চেয়েছিলাম এক মহিলা স্ক্রিপ্টটি লিখুন। রিয়ার বয়স আমার অর্ধেক। প্রথমে আমি ভাবিওনি ওর মতামত আমাকে এতটা প্রভাবিত করবে। কিন্তু ওর সঙ্গে কাজ করে দেখছি যে ও সিনেমাটা বেশ ভাল বোঝে। সোনম আর রিয়া দুই বোনের রসবোধ প্রশংসনীয়। আর দু’জনেই বেশ মাটির কাছাকাছি থাকে, যদিও ওদেরকে না চিনলে হয়তো এটা বোঝা যায় না,” শশাঙ্ক জানাচ্ছেন।
রিমেকের স্ক্রিপ্ট নিয়ে যখন মিটিং চলে, তখন সোনম নাকি প্রায়ই সেখানে উপস্থিত থাকতে চান। কিন্তু শশাঙ্ক মানা করে দেন। পরিচালকের ধারণা বেশি লোক মাথা ঘামালে ব্যাপারটা ছড়িয়ে যেতে পারে। অরিজিনাল সিনেমাতে রেখার চরিত্রের নাম ছিল মঞ্জু। তবে এই সিনেমাতে সোনমের নাম পালটে দেওয়া হয়েছে। মনে আছে রেখার কণ্ঠে সেই ‘সারে নিয়ম তোড় দো’ গানটি? রিমেকে অবশ্য সোনমের লিপে পঞ্চমের গানটা থাকছে না। তার বদলে থাকছে নতুন গান।
পুরনো ছবিটিকে নতুন ভাবে সাজানো হচ্ছে। “অরিজিনাল সিনেমাতে একটা মূল্যবোধের সংঘাত দেখানো হয়েছিল। আশির দশকের গোড়ার দিকের ছবি এটি। তখন বাবা-মায়েরা বলতেন সিরিয়াস হও, নিয়মানুবর্তিতা শেখো। আমাদের রিমেকটি দুই ধরনের মূল্যবোধের সংঘাত নিয়েই তৈরি। তবে গল্পটা এখনকার সময়ের,” বলছেন পরিচালক।
আর সোনম?
শশাঙ্কের ধারণা খুব সহজাত ভাবেই সোনমকে চরিত্রে মানিয়ে যাবে। বলছেন, “সারা ক্ষণ ওর একটা খুশি খুশি মেজাজ। ও এতটাই হাসিখুশি যে অনেকে ওর সিরিয়াস দিকটা মিস করে যায়। একদম সাবলীল ভাবেই জীবনের খুব গভীর কথা বলে দিতে পারে সোনম। আমি জানি কেউ কেউ
ওকে শুধুমাত্র স্টাইল আইকন বলেন। তাঁদের গলায় খানিকটা তাচ্ছিল্যের সুরও থাকে। তবে ‘রাঞ্ঝনা’র পরে সেই ধারণাটা পালটেছে। ও চায় ভাল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে।” শশাঙ্কের সঙ্গে থাকলে সোনমকে নাকি সব সময় পরিচালককে বলতে হয় শান্ত হতে। “ও শুধু বলে আমাকে ভাল কাজ দাও। ওর ধারণা ওই চরিত্রের জন্য ওকে অনেক প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি অবশ্য চাই না ও বেশি প্রস্তুতি নিক। রেখার সঙ্গে তুলনা হবে কি না সে নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাচ্ছি না,” বলছেন শশাঙ্ক।
এই তুলনাকে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ তরন আদর্শ বেশি গুরুত্ব দিতে চান না। তাঁর মতে সোনমকে এখন দর্শক অন্য ভাবে দেখতে শুরু করেছে। বলছেন, “আমি বহু বার ‘খুবসুরত’ দেখেছি। সোনমকে চিনি বহু বছর ধরে। প্রত্যেক পরিচালকই তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ছবি বানান। আশা করছি সোনম এই ছবিতে ভাল করবে। কোনও তুলনামূলক আলোচনায় না গিয়ে দর্শক ওর অভিনয় দক্ষতা নিয়েই কথা বলবে।”
‘খুবসুরত’য়ের রিমেকে কাজ করার কথা হয়েছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। অরিজিনাল ‘খুবসুরত’ ছবিটিতে শ্বশুর-শাশুড়ির চরিত্রে ছিলেন অশোককুমার এবং দীনা পাঠক। দীনার চরিত্রটি ছিল এক অতি স্ট্রিক্ট মহিলার। কিন্তু কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে রিমেকে শ্বশুরের চরিত্রটি সেই আদলে লেখা হচ্ছে। এও শোনা গিয়েছিল যে সোনমের শ্বশুরমশাইয়ের চরিত্রেই দেখা যাবে প্রসেনজিৎকে। ছবিটি শেষ পর্যন্ত করছেন কি না সে বিষয়ে কথা না বলতে চাইলেও, সোনমের প্রসঙ্গে কথা বলতে আপত্তি নেই তাঁর। “ও বেশ খাটছে। ওর বাবা অনিল কপূর অসাধারণ অভিনেতা। এই জেনারেশনের অভিনেতাদের কাছে অনিলের কাজ অনুপ্রেরণা জোগায়। সোনম নিজেকে প্রমাণ করছে। ও হল গিয়ে বাপ কি বেটি।”
তরন অবশ্য জোর দিচ্ছেন সোনমের আজকাল চরিত্র পছন্দের দক্ষতার উপর। বলছেন, “ও যে ধরনের চরিত্র পছন্দ করছে সেগুলো গুণমানের দিক থেকেও যথেষ্ট উন্নত। ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ আর ‘রাঞ্ঝনা’র পরে ওর অভিনয় নিয়ে কথা বলছে। নুপূর আস্থানামের সঙ্গে সোনম যশরাজের একটা ছবি করেছে। আশা করব ওটাতেও সোনম ভাল কাজ করবে।”
রাকেশ বলছেন, “সোনমকে দেখে আজকাল আমার মনে হয় খোলস ছেড়ে একটা প্রজাপতি সদ্য বেরিয়ে আসছে। আস্তে আস্তে ডানা মেলছে। রঙিন সব পলকা ডটের আঁকিবুকি দেখতে পাওয়া যায় তখন। এ বার সোনমের অভিনয়ের জগতে ডানা মেলার পালা। আমার পরের সিনেমা ‘মির্জা সাহিবা’তে ওর ভাইকে কাস্ট করেছি। সোনম নেই তাতে। তবে ভবিষ্যতে কোনও ভাল চরিত্র পেলে ওকে নিশ্চয়ই কাস্ট করব।”
সত্যিই সোনমকে হয়তো আর ‘খুবসুরত’ তকমায় আটকে রাখা যাবে না। শুধুই স্টাইলের জন্যই আর শিরোনামে তাঁকে আসতে হবে না। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের তালিকাতেও সুরক্ষিত জায়গা করে নেবেন তিনি।

সোনমকে দেখে আজকাল আমার মনে হয় খোলস ছেড়ে একটা প্রজাপতি সদ্য বেরিয়ে আসছে। আস্তে আস্তে ডানা মেলছে
রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা
সোনম খুব আত্মবিশ্বাসী। রিস্ক নিতে জানে। ফ্যাশনের দুনিয়ায় যে সাহসটা ও দেখায়, সেটাই আজকাল ওর সিনেমার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি
অনামিকা খন্না
পেশাগত দিক দিয়ে তো বটেই, মানসিক দিক দিয়েও ও এখন পরিণত। আশা করি ‘রাঞ্ঝনা’র পরের ফিল্মে সেই বোধটা দেখা যাবে
আনন্দ এল রাই



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.