বাচ্চাটির সাড়াই পাওয়া যাচ্ছিল না। চিকিৎসক তাই ‘রেফার’ করে দিয়েছিলেন বহরমপুর মাতৃসদনে। সে রাতে আর প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার উজিয়ে বহরমপুর যেতে পারেননি খুরশিদা বিবির পরিবার। রাতটা কোনওক্রমে কাটিয়ে দিয়েছিলেন ওই গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বরেই।
অভিযোগ, সেই সময় হাসপাতালের এক কর্মী তাঁদের প্রায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিপত্তি কি ঘটেছিল তাতেই? সোমবার সকালে জেলা সদরে যাওয়ার তোড়জোড়ের সময়েই ওই হাসপাতাল চত্বরেই প্রসব করেন খুরশিদা বিবি। তবে মা ও মেয়ে ভালই রয়েছেন।
ঘটনাটি নওদার আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের। প্রসবের পরেই খুরশিদার পরিবার ওই হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক দায় এড়াতেই তাঁদের বহরমপুর পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন। |
মায়ের সঙ্গে সদ্যোজাত।— নিজস্ব চিত্র। |
ওই চিকিৎসক অবশ্য দাবি করেন, “বাচ্চাটা নড়ছিল না। প্রসব নালিও বন্ধ। সমস্যা বুঝে ওঁদের বহরমপুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। সম্ভবত রাতে হাসপাতাল চত্বরে হাঁটাহাঁটির ফলে সকালেই প্রসব করেন ওই মহিলা।”
তবে প্রসব হওয়ার পর ওই মহিলাকে গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকরাই চিকিৎসা করেন।
রবিবার রাত ১০টার সময় নওদার ত্রিমোহিনী ক্লাব পাড়ার বাসিন্দা খুরশিদা বিবি হাসপাতালে ভর্তি হন। রাত দেড়টা নাগাদ তাঁকে দেখেন চিকিৎসক। এরপরই তাঁকে বহরমপুর মাতৃসদনে ‘রেফার’ করা হয়। পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রসূতি ও তার মা হাসপাতাল চত্বরেই থেকে যান। ছুটে আসেন সিস্টার ও প্রশিক্ষিত ধাত্রীমা। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সন্তান ও মায়ের পরিচর্যা শুরু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রোগীর বাড়ির লোকজন তাদের গালাগালি করে। এমনকী মারতে আসে।
সোমবার দুপুরে নওদার কংগ্রেস বিধায়ক আবু তাহের খানের নেতৃত্বে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান হয়। আবু তাহের বলেন, “যাকে রেফার করা হল, সে সন্তান প্রসব করলো মূল ভবন থেকে দশ হাত দূরে, মাঠের মধ্যে কাদামাখা, নোংরা পরিবেশে, উপস্থিত মহিলারা কাপড় দিয়ে ঘিরে কোনও রকমে কাজ সারলো। এটা মেনে নেওয়া মুশকি। তাই আমরা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি।”
নওদা ব্লক স্থাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, “চিকিৎসকের কোনও ত্রুটি পাওয়া যায়নি। তবে সিস্টার ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।”
জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তী বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওটা একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। তবে সিস্টারদের নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে সিস্টারদের প্রসবের ক্ষেত্রে সক্রিয় হতে হবে। এক মাস দেখে গাফিলতি পেলে সমস্ত রকম শাস্তির কথাও বলা হয়েছে।” |