স্কুলপড়ুয়া অনেক শিশু-কিশোরই হৃদযন্ত্রের গুরুতর সমস্যায় ভুগছে। সেই সব ছেলেমেয়েকে চিহ্নিত করে নিখরচায় চিকিৎসা দেবে সরকার। প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারেরও ব্যবস্থা করা হবে সরকারের তরফে। কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থসাহায্যে ‘শিশুবন্ধু’ নামে এই প্রকল্প ২১ অগস্ট, রাখিপূর্ণিমার দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হতে চলেছে। সোমবার মহাকরণে এ কথা জানান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
মন্ত্রীর হিসেব, রাজ্যে প্রায় আট হাজার শিশু-কিশোর হৃদযন্ত্রের জটিল সমস্যায় ভুগছে। এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। সাধারণের পক্ষে চালানো মুশকিল। তাই মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছেন বলে জানান চন্দ্রিমাদেবী।
হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভোগা ওই সব স্কুলপড়ুয়ার চিকিৎসা কোথায় হবে? স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, যে-সব সরকারি হাসপাতালে হৃদ্রোগ বিভাগ আছে, সেই সব জায়গায় তো এই চিকিৎসা হবেই। সেই সঙ্গে তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে এই ধরনের রোগে আক্রান্ত স্কুলপড়ুয়াদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, “ওই তিনটি বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হল দুর্গাপুর মিশন হাসপাতাল, আরএন টেগোর এবং বিএম বিড়লা হাসপাতাল। ১৮ বছর পর্যন্ত সব আর্থিক স্তরের শিশু-কিশোরেরা এই সুবিধা পাবে।”
হৃদ্রোগে আক্রান্ত পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা হবে কী ভাবে?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, স্কুল স্বাস্থ্য প্রকল্পের অধীনে চিকিৎসকদের নিয়ে কিছু ‘মোবাইল টিম’ বা ভ্রাম্যমাণ দল তৈরি করা হয়েছে। তারা স্কুলে স্কুলে ঘুরে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। যে-সব পড়ুয়ার হৃদ্যন্ত্রে গুরুতর সমস্যা ধরা পড়বে, তাদের নামের তালিকা পাঠানো হবে জেলা প্রশাসনের কাছে। প্রশাসনিক কর্তারা তখন এই প্রকল্পে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে অথবা এই রোগের জন্য নির্দিষ্ট তিনটি বেসরকারি হাসপাতালের কোনও একটিতে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। পেসমেকার বসানো বা স্টেন্ট লাগানোর দরকার হলে, অ্যাঞ্জিওগ্রাম বা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির প্রয়োজন হলে সবই নিখরচায় করা হবে। পরবর্তী পর্যায়ে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীরাও।
স্কুলছাত্রদের চিকিৎসার প্রকল্পটি এই মুহূর্তে কী অবস্থায় আছে?
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের স্কুল স্বাস্থ্য বিভাগের নোডাল অফিসার পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, “গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকেই সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের স্ক্রিনিং শুরু হয়ে গিয়েছে। এ-পর্যন্ত প্রায় সাত লক্ষ শিশু-কিশোরকে পরীক্ষা করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। মনে করা হচ্ছে, প্রতি বছর অন্তত পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রী পাওয়া যাবে, যাদের হৃদরোগের চিকিৎসা প্রয়োজন।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, স্কুলের বাইরে নিজের থেকে কোনও অভিভাবক কোনও শিশু বা কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এই প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা দাবি করলে তিনি তা পাবেন না। নিয়ম অনুযায়ী একমাত্র স্কুলে স্কুলে বিশেষ ভ্রাম্যমাণ দলের মাধ্যমে বাছাই করা ছাত্রছাত্রীরাই এই সুবিধা পাবে। |