ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ১৯ এবং ২০ অগস্ট ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বেসরকারি বাসের মালিকেরা। সোমবার সেই ধর্মঘটে সামিল হওয়ার কথা জানিয়ে দিলেন মিনি বাসের মালিকেরাও। অর্থাৎ, আগামী সপ্তাহের প্রথম দু’দিন শহর জুড়ে নিত্যযাত্রীদের চরম ভোগান্তির আশঙ্কা। ওই
সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট টু পরীক্ষা চলবে। ফলে বিপাকে পড়বেন পরীক্ষার্থীরাও।
ভোগান্তি অবশ্য চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। ভাড়া না-বাড়ানোর সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকার অনড় থাকায় বহু বাস, মিনিবাস বসে গিয়েছে। বাস মালিকদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার ডিজেল উপর থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করার পর থেকে গত দশ মাসে অন্তত সাত বার তার দাম বেড়েছে। অন্যান্য খরচও বেড়েছে। কিন্তু বাস ভাড়া বাড়েনি। এক বাস মালিকের কথায়, “এক বার করে ডিজেলের দাম বাড়ে, আর আরও কিছু মালিক বাস বসিয়ে দিতে বাধ্য হন। ক্ষতি করে কেউ বাস চালাবেন কেন!” |
বাসের অপেক্ষায়। ডালহৌসিতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক। |
এ রাজ্যে বেসরকারি বাসের সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার। যার মধ্যে কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় চলে ছ’হাজারের মতো। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “খরচ সামাল দিতে না-পেরে ৪০ শতাংশ বাস ইতিমধ্যেই বসে গিয়েছে। যাঁরা বাস বার করছেন, তাঁদেরও ১৫ শতাংশ অফিসের ব্যস্ত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে বাস তুলে নিচ্ছেন। কারণ অন্য সময়ে বাস চালিয়ে খরচ তোলা যাচ্ছে না।” সেই কারণে রবিবার বা ছুটির দিনে বাসের জন্য হাপিত্যেশ অপেক্ষার অভিজ্ঞতা হচ্ছে রাজ্যবাসীর।
এ দিন ধর্মঘটে যোগ দেওয়া ‘মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’-এর নেতা অবশেষ দাঁ বলেন, “রাজ্যে মিনিবাসের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এর মধ্যে কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় চলে আড়াই হাজারের মতো। কিন্তু ইতিমধ্যেই ৩৫ শতাংশ মিনিবাস বসে গিয়েছে। বাকিরা যে কোনও দিন বসে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।” রাজ্য সরকার কিন্তু ভাড়া না-বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনড়। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “গত বছর অক্টোবর-নভেম্বরে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এখন নতুন করে ভাড়া বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।” বেসরকারি বাস মালিকদের মতো মিনিবাসের মালিকেরাও যে ভাবে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তাতে অসন্তুষ্ট মন্ত্রীর মন্তব্য, “মিনিবাস ধর্মঘটের কথা মালিকরা এখনও আমাকে জানাননি।”
মিনিবাস মালিকেরা জানিয়েছেন, আজ, মঙ্গলবার সংগঠনের তরফে মন্ত্রীকে লিখিত ভাবে ধর্মঘটের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। অবশেষবাবু বলেন, “গত বছর সরকার মুখে বলেছিল, প্রতি পর্যায়ে এক টাকা করে ভাড়া বাড়ছে। কার্যত দেখা গিয়েছে, মিনিবাসের ক্ষেত্রে চারটি পর্যায়ে ভাড়ার হার আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ সরকার আমল দেয়নি।” এ দিন বৈঠকে বসে মিনিবাস মালিকেরা জানিয়ে দেন, ন্যূনতম ভাড়া করতে হবে ১০ টাকা। পরের প্রতিটি স্তরের ভাড়া ৬০ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে। প্রসঙ্গত, এখন মিনি বাসে ন্যূনতম ভাড়া ৬ টাকা।
বেসরকারি বাস মালিকদেরও বক্তব্য, বাস চালানোর খরচ যে হারে বেড়েছে, তাতে ভাড়া এক লাফে অনেকটা বাড়াতে হবে। তা না-হলে তুলে নেওয়া বাস এখনই রাস্তায় নামাবেন না তাঁরা। জয়েন্ট কাউন্সিলের আর এক নেতা সাধন দাস বলেন, “সরকার হুমকি দিক আর অনুরোধই করুক, ধর্মঘট হবেই। সরকারের এই নীতি বজায় থাকলে ভবিষ্যতে বাস আরও কমবে।”
শুধু বেসরকারি বাস নয়, সরকারি বাসের সংখ্যাও প্রতিদিন কমছে। সিএসটিসি সূত্রের খবর, তাদের বিভিন্ন রুটে দৈনিক গড়ে তিনশো বাসও এখন আর চালানো সম্ভব হচ্ছে না। নিগমের এমডি প্রসন্নকুমার মণ্ডল বলেন, “গড়ে ১২ শতাংশ বাস বসে গিয়েছে। এ ব্যাপারে বুধবার সংশ্লিষ্ট অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে বৈঠকে বসব।”
পরিবহণ দফতরের আমলাদের একাংশের বক্তব্য, ভাড়া না-বাড়ায় বাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট অর্থ মিলছে না। পরিবহণ নিগমগুলিকে চাঙ্গা করার জন্য যে সংস্কারের কথা ভাবা হয়েছিল, সেই কাজও বন্ধ। টাকার অভাবে স্বেচ্ছাবসরের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারছে না সরকার। ফল ভর্তুকিও চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
সরকারি বাস যে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বসে যাচ্ছে তা অস্বীকার করেননি পরিবহণমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সরকারি পরিবহণ নিগমগুলিকে শেষ করে গিয়েছে বামফ্রন্ট। বাস রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটির টাকা মেটায়নি। তার দায় আমাদের নিতে হচ্ছে।” |