শিখরে যে দিন ভারতীয় ক্রীড়াবিদ
সম্মোহিত জাতীয় নির্বাচক বললেন, জন্মে এ রকম ইনিংস দেখিনি
প্রিটোরিয়ায় শিখর ধবনের ব্যাটের শাসন।
আর কয়েক হাজার মাইল দূরে মস্কোয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বিকাশ গৌড়ার পদকের দৌড়ে পৌঁছে যাওয়া। সোমবার দিনটা ছিল ভারতীয় ক্রীড়াবিদদেরই।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ডিসকাস থ্রোয়ের ফাইনালে বিকাশের ওঠার আগেই অবশ্য শিখরের ব্যাটে রানের ফুলঝুরি শুরু হয়ে যায়। যা শেষ হল ২৪৮-এ। ১৫০ বলে এমন এক অতিমানবীয় ইনিংসের খবর পেয়ে প্রিটোরিয়ার এলসি ডেভিলিয়ার্স ওভালে ছুটে আসে গ্রেম স্মিথের দেশের তামাম মিডিয়া। ম্যাচের শেষে এক দিকে যখন স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করছিল শিখরের মহাকীর্তির পরিসংখ্যান, তখন তাঁর সামনে সে দেশের এক ঝাঁক সাংবাদিক। এমন অসাধারণ ইনিংস যাঁর, তাঁর ‘বাইট’ নেওয়ার হুড়োহুড়ি তো থাকবেই।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় শিবিরে ফোন করে জানা গেল, শিখর সাংবাদিকদের বলেছেন, “এমন একটা ইনিংস খেলতে পারলে তো ভাল লাগবেই। নিজের ইনিংসের চেয়েও বেশি ভাল লাগছে টিমকে ফাইনালে তুলতে পেরে। আজ ব্যাট করতে নামার আগেই ভেবে রেখেছিলাম, উইকেটে থাকব। আউট হব না। রান যা আসার আসবে। দেখলাম রানও সহজেই আসছে, উপভোগ করতে পারছি। তাই আর কোনও সমস্যা হয়নি।” এটাই কি সেরা ইনিংস? শিখর বলেন, “মোহালিতে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরিটাই সবচেয়ে ভাল। তবে এটাও মনে রাখার মতো।” শিখর আরও বলেন, “বছর কয়েক আগে ইমার্জিং ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৮৪ রান করেছিলাম। এক দিন দুশো করব, এই বিশ্বাসটা তখন থেকেই ছিল।”
প্রিটোরিয়ায় শিখর
১৫০ বলে ২৪৮। ,
স্ট্রাইকরেট
সওয়া তিন ঘণ্টা ধরে ৩০টি বাউন্ডারি ও সাতটি ওভার বাউন্ডারির ফোয়ারায় রীতিমতো সম্মোহিত তাঁর সতীর্থ ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাপোর্ট স্টাফ, কর্মকর্তারাও। শিখরের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ও ম্যাচ জিতে ভারতের টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার আনন্দ মিশে গেল টিমের স্পিনার শাহবাজ নাদিমের জন্মদিনের সেলিব্রেশনের সঙ্গে। ম্যাচের পর যে ড্রেসিংরুমে কেক কাটা হবে, তা আগে থেকেই ঠিক ছিল। জয় ও শিখরের সাফল্য তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ করল।
আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে দলের ম্যানেজার সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরে শিখর বলেন, “আমার স্ত্রী বাঙালি। আবার আপনি আমার লাকি ম্যানেজার, বাংলার লোক। মনে হচ্ছে বাংলার ছোঁয়ায় আমার ভাগ্য খুলে যায়।” প্রিটোরিয়া থেকে ফোনে এই ঘটনা জানিয়ে সুবীরবাবু বলেন, “আমার পাশে বসেছিল জাতীয় নির্বাচক বিক্রম রাঠৌর। ও তো থাকতে না পেরে বলেই ফেলল, ‘দাদা, জিন্দেগি মে অ্যায়সা ইনিংস ম্যায়নে নেহি দেখা’। চার দিনের বিশ্রাম পেয়েই ছেলেটা কেমন চার্জড হয়ে গেল।”
যার মধ্যে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও পড়ে, সেই লিস্ট ‘এ’ ক্যাটেগরি ক্রিকেটে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানের সঙ্গে ‘এ’ দলের ক্রিকেটের কোনও তুলনা না হলেও রেকর্ড বইয়ে ‘লিস্ট এ’-র তালিকায় কিন্তু শিখরের এই ইনিংস সচিনের দুশো ও সহবাগের ২১৯-এর ওপরেই থাকবে।
‘এ’ দলের ম্যাচ হলেও প্রোফাইলের দিক থেকে বিপক্ষের বোলাররা কেউই কিন্তু কম যান না। পেসার রাস্টি থেরন এবং বাঁহাতি স্পিনার ফান ডার মারওয়ে দু’জনেই আইপিএল খেলেন। দু’জনই জাতীয় দলের ক্রিকেটার। হার্ডাস ভিলোয়েন গত দু’ম্যাচে পাঁচ উইকেট পেয়ে ফর্মে। তাঁদের পিটিয়েই এমন অতিমানবীয় ইনিংস খেললেন ২৭ বছরের এই দিল্লিওয়ালা।
এ দিন শিখর ৫০-এ পৌঁছন ৩১ বল খেলে। ১০০-র গণ্ডি ছুঁতে নেন ৮৬ বল। দুশো পূর্ণ করেন আর মাত্র ৪৬ বল খেলে। যখন মনে হচ্ছিল, ইংলিশ কাউন্টিতে ১১ বছর আগে হওয়া অ্যালিস্টেয়ার ব্রাউনের ২৬৮ রানের নজির হয়তো ভেঙে যাবে, তখনই রাস্টির বল শিখরের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় স্টাম্পের পিছনে দাঁড়ানো ডেন ভিলাসের গ্লাভসে। বিশ্বরেকর্ডের ২০ রান আগে থেমে যেতে হল শিখরকে।
এমন এক অতিমানবীয় ইনিংসের জন্য চাপা পড়ে গেল অধিনায়ক চেতেশ্বর পূজারার ৯৭ বলে ১০৯ রানের ইনিংসও। এই দুই ইনিংসে ভর করে ভারত ‘এ’ ৪৩৩ তুলে ফেলে। তার পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৯৪-এ অল আউট করে দিয়ে ৩৯ রানে ম্যাচ জিতে নেয়। ফাইনালে সামনে এ বার অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দল।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.