ইস্তাহারের ভূরিভোজে লাগাম নাপসন্দ সব দলেরই
ক’মাস পরেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট ও তার পর লোকসভা নির্বাচন। তার আগে নির্বাচনী ইস্তাহারে নিয়ন্ত্রণ কায়েমের বিরুদ্ধে সমস্বরে গর্জে উঠল রাজনৈতিক দলগুলি! সংসদে যতই সংঘাত থাকুক, নির্বাচন কমিশনের কনফারেন্স রুমে আজ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বড় ছোট মিলিয়ে ২০টি রাজনৈতিক দল জানিয়ে দিল, ইস্তাহারে ঢালাও ঘোষণার পূর্ণ অধিকার রয়েছে তাদের। তাতে হস্তক্ষেপের এক্তিয়ার না আছে নির্বাচন কমিশনের, না আছে সর্বোচ্চ আদালতের।
রাজনীতির ময়দানে যতই শত্রুতা থাক, কংগ্রেস-বিজেপি, তৃণমূল-সিপিএম, এডিএমকে-ডিএমকে এই ক্ষেত্রে সবাই এককাট্টা। দক্ষিণের আঞ্চলিক দলগুলি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইস্তাহারে শুধু চাল, গম বা কাজের প্রতিশ্রুতি কেন, টিভি, ফ্রিজ, গরু, ছাগল সব ঘোষণাই চলতে পারে। এ ব্যাপারে কোনও বাধাই মানতে বাধ্য নয় তারা। ব্যতিক্রম শুধু ৩টি দল। মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি, নাগা পিপলস ফ্রন্ট এবং মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট!
দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে ইস্তাহারে জনমোহিনী নীতির বল্গাহীন ব্যবহার হয়ে আসছে বহু দিন ধরেই। কিন্তু বছর দুই আগে তামিলনাড়ুর বিধানসভা ভোটে তা যেন সব রেকর্ড ছাপিয়ে যায়। টুজি বিতর্কে বেকয়দায় পড়ে করুণানিধি সে বার রাতারাতি ঘোষণা করে দেন, জিতলে মহিলাদের মিক্সার বা গ্রাইন্ডার দেবে ডিএমকে, কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হবে ল্যাপটপ, গরিব পরিবারকে বিনামূল্যে মাসে ৩৫ কেজি চাল, মেয়ের বিয়ের জন্য ৩০ হাজার টাকা ইত্যাদি। তাঁকে টেক্কা দিতে জয়ললিতা তাঁর ইস্তাহারে মিক্সার-গ্রাইন্ডারের সঙ্গে জুড়েছিলেন সিলিং ফ্যান, এগারো ক্লাসের ছেলেমেয়েদের জন্য ল্যাপটপ, গরিব ঘরের মেয়ের বিয়েতে সোনার মঙ্গলসূত্র, ৬ হাজার গ্রামের জন্য ৬০ হাজার গরু, গ্রামের মানুষের জন্য তিনশো বর্গফুটের পাকা বাড়ি ইত্যাদি।
পপুলিজম-এর এই প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার রায়ে সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালত জানায়, ভোটের ইস্তাহারে এই ধরনের ঘোষণা করে আদতে লুব্ধ করা হচ্ছে ভোটারদের। এবং তা অবাধ নির্বাচনের পরিপন্থী। কমিশনকে তাই ইস্তাহারের উপরে কী রকম বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় তার একটি তৈরির রূপরেখা তৈরি করতে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার ভিত্তিতেই আজ সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিল নির্বাচন কমিশন।
বৈঠকে কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক অজয় মাকেন বলেন, “ইস্তাহারে কী ঘোষণা করা হবে তা রাজনৈতিক দলের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। তা ঠিক না বেঠিক, বা সীমা লঙ্ঘন করছে কি না, তা নির্ধারণের দায়িত্ব মানুষের বিবেচনার উপরেই ছেড়ে দেওয়া ভাল। এর ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েমের পক্ষে নয় কংগ্রেস। বিজেপি-র রবিশঙ্কর প্রসাদও বলেন, “দেশের সামনে নিজ-নিজ মতাদর্শ ও নীতি তুলে ধরার অধিকার আছে দলগুলির। বিনামূল্যে ল্যাপটপ, সাইকেল, ওষুধ দেওয়ার মতো জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে গরিব মানুষের উপকারই হচ্ছে। কমিশনের বরং ভোটে অর্থ ও পেশি শক্তির ব্যবহার রোখার দিকে আরও নজর দেওয়া উচিত।”
ইস্তাহার-নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে সরব বামেরাও। সর্বদল বৈঠকের পর সিপিএম পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে বলেছে, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অন্যতম শর্ত হল, রাজনৈতিক দলগুলির মত, পথ ও কর্মসূচি ঘোষণা করার অধিকার সুনিশ্চিত করা। এতে কোনও রকম হস্তক্ষেপে আপত্তি রয়েছে সিপিএমের। তাদের মতে, ভোটের ইস্তাহারে কে কী ঘোষণা করবে, সেটা সম্পূর্ণ সেই দলের ব্যাপার। বিশ্বের কোনও গণতান্ত্রিক দেশে ইস্তাহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় না।
সর্বদল বৈঠকের এমন পরিণতি অবশ্য মোটেই অপ্রত্যাশিত ছিল না। জাতপাত, ধর্ম-সম্প্রদায়ের সাত-সতেরো সমীকরণের মধ্যে ইস্তাহারকে বরাবরই রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে দলগুলি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বরূপ বদলেছে ইস্তাহারের। গ্রাম ও শহরের মনস্তত্ত্ব নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করছে দলগুলি। সে জন্য মার্কেট রিসার্চ প্রতিষ্ঠানগুলির মতামত নেওয়া হচ্ছে। মানুষের আস্থা পেতে নির্বাচনী ইস্তাহারের গুরুত্ব কতটা, কংগ্রেস-বিজেপির প্রস্তুতি থেকেও তা বেশ স্পষ্ট। লোকসভা ভোটের জন্য ইতিমধ্যেই যুযুধান দুই পক্ষ তাদের ইস্তাহার কমিটি তৈরি করে ফেলেছে। অতিশয় গোপনীয়তা রক্ষা করে দফায় দফায় তার বৈঠকও চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, মায়াবতী আপত্তি করছেন কেন? কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, গত বিধানসভা ভোটে সমাজবাদী পার্টি ল্যাপটপ, সাইকেল-সহ বহু কিছু দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। মুলায়মের ওই কল্পতরু অবতার আশঙ্কায় ফেলে দেয় মায়াবতীকে। বসপা নেতৃত্ব সম্ভবত মনে করছেন, সপা-র ঢালাও ঘোষণায় লুব্ধ হয়ে তাঁদের দলিত ভোট ব্যাঙ্কে ক্ষয় হয়েছে। মনভোলানো প্রতিশ্রুতির ধাক্কায় যদি দলিত আবেগও লঘু হয়ে যায়, তা হলে বসপা-র তো বিপদ বটেই!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.