টাকা আগলাতে আসরে চিদম্বরম
লতি খাতে বাণিজ্য লেনদেন ঘাটতিতে রাশ টানতে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করল কেন্দ্র। আরও কষে কোমর বাঁধল টাকার পতন রুখতেও।
সোমবার সংসদে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম জানিয়ে দিলেন, যে ভাবে হোক ওই ঘাটতিকে জাতীয় আয়ের ৩.৭ শতাংশে বেঁধে রাখার পণ করেছেন তাঁরা। প্রতিজ্ঞা করেছেন ডলারের সাপেক্ষে টাকার দরের হাল ফেরাতেও। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, এই কারণে অদূর ভবিষ্যতেই তেল, সোনা, রুপো এবং বিভিন্ন অনাবশ্যক পণ্যের আমদানি কমাতে শুল্ক বাড়ানোর পথে হাঁটবে কেন্দ্র। দেশে ডলার আসার পথ প্রশস্ত করতে কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে অনুমতি দেওয়া হবে বিদেশে বন্ড ছাড়ার বিষয়ে। সুগম করা হবে বিদেশ থেকে ধার নেওয়ার রাস্তা। কপাল খুলবে দেশে ডলার পাঠানো অনাবাসী ভারতীয়দের। কারণ, বিদেশি মুদ্রার অ্যাকাউন্টে বেশি সুদ পাবেন তাঁরা।
চিদম্বরমের ঘোষণা অবশ্য এ দিন তেমন স্বস্তি দিতে পারেনি বাজারকে। প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রের পদক্ষেপের আশায় এ দিন বাজার খোলার সময় কিছুটা চাঙ্গা হয় টাকা। ডলারের দাম পৌঁছয় ৬০.৪৫ টাকায়। কিন্তু দিনের শেষে ডলারের কাছে টাকা ফের ‘নকআউট’। আগের দিনের তুলনায় ৩৯ পয়সা বেড়ে মার্কিন মুদ্রার দর দাঁড়ায় ৬১.২৭ টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় তেমন নির্দিষ্ট কিছু না-থাকার হতাশাই এ দিন টেনে নামিয়েছে টাকাকে। চিদম্বরম অবশ্য বার বারই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কোন ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ কী হবে, তা খুব শীঘ্রই সংসদে ঘোষণা করবেন তিনি।
চলতি খাতে বাণিজ্য লেনদেন ঘাটতিতে রাশ টানতে কিংবা টাকার পতন রোখার জন্য অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছে কেন্দ্র এবং রিজাভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু তার সুফল সে ভাবে এখনও পাওয়া যায়নি। যে কারণে অর্থমন্ত্রী এ দিন নিজেও মেনে নিয়েছেন, “আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে।” আর সেই কারণেই তিনি এ দিন একগুচ্ছ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
দাওয়াই
• তেল, সোনা, রুপো এবং বিভিন্ন অনাবশ্যক পণ্যের আমদানি কমাতে শুল্ক বৃদ্ধি
• কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বিদেশের বাজারে বন্ড ছাড়ার অনুমতি
• আরও সুগম করা হবে বিদেশ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির ঋণ নেওয়ার পথ
• বহুজাতিক সংস্থাগুলির ভারতীয় শাখাকেও বিদেশ থেকে ধারে সায়
• অনাবাসী ভারতীয়দের বিদেশি মুদ্রার অ্যাকাউন্টে সুদ বৃদ্ধি
অর্থমন্ত্রী মনে করেন, শুল্ক বাড়ালে আমদানি কমবে। ফলে কমবে ডলারের চাহিদা। উল্টো দিকে, দেশেডলার আসা বাড়াতে তাঁর দাওয়াই তিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে (পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন, ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশন এবং আইআইএফসিএল) বিদেশের বাজারে আধা-সরকারি বন্ড ছাড়ার অনুমতি। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে বিদেশ থেকে ধার নিতে সায়। যে সব বহুজাতিক সংস্থার শাখা এ দেশে রয়েছে, তাদেরও একই অনুমতি। এবং অনাবাসী ভারতীয়দের বিদেশি মুদ্রার অ্যাকাউন্টে সুদের হার বৃদ্ধি। চিদম্বরমের আশা, এই সমস্ত পদক্ষেপে চলতি আর্থিক বছরে অন্তত ১১০০ কোটি ডলার আসবে। ফলে জাতীয় আয়ের ৩.৭%-এই বেঁধে রাখা যাবে চলতি খাতে ঘাটতি। আগের বছর যা ৪.৮ শতাংশের রেকর্ড হারে পৌঁছেছিল এবং মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কেন্দ্র ও শিল্পমহলের কাছে। তা ছাড়া, টাকা নিয়ে উদ্বেগের জায়গা থাকলেও, পরিস্থিতি যে ১৯৯১-এর মতো আশঙ্কাজনক নয়, সেই বার্তাও দিতে চেয়েছেন চিদম্বরম।
তবে চিদম্বরমের প্রতিজ্ঞা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। কারণ, অনেক অর্থনীতিবিদই মনে করছেন, ওই ঘাটতি এতটা কমানো সম্ভব হবে না। বিশেষত বৃদ্ধির হার ঢিমে হওয়ায় আরও মুশকিল হবে ওই লক্ষ্য ছোঁয়া। বাণিজ্য সচিব এস আর রাও বলেন, “টাকার পতন হলে এমনিতে রফতানি বাড়ার কথা। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে টাকা থিতু না-হলে উন্নতি হচ্ছে না রফতানিরও।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.