নাট্যমেলা থেকে নৃত্যানুষ্ঠান, গানের আসর থেকে আবৃত্তি-সন্ধ্যা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে বহরমপুর আগামী শীতে বঞ্চিত হতে চলেছে।
বহরমপুরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রবীন্দ্রসদন সংস্কারের কাজ এখনও শেষ হয়নি। শম্বুক গতিতে চলতে থাকা ওই মেরামতি কবে শেষ হবে তা নিয়ে সংশয়ে জেলার সাংস্কৃতিক মহলও। সদন সংস্কার করে কবে ফের সকলের জন্য ‘দুয়ার খুলবে’ তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। দফতরের আধিকারিক করুণাময়ী ভৌমিক বলেন, “সংস্কারের জন্য সদন পূর্ত দফতরের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওঁরা কবে সদন হস্তান্তর করবেন তা ওঁরাই বলতে পারবেন।” পূর্ত দফতরও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। বহরমপুর রবীন্দ্রসদন আধুনিকীকরণের দায়িত্বে রয়েছেন পূর্ত বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার আজফার আলি। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট আর বর্ষার জন্য কাজে গতি আসেনি। মনে হয়, সদনের আধুনিকীকরণের কাজ শেষ হতে ডিসেম্বর হয়ে যাবে।” |
চলছে রবীন্দ্র সদন সংস্কার।—নিজস্ব চিত্র। |
ফলে নভেম্বরে ৭ দিন ধরে বহরমপুর ‘রঙ্গাশ্রম’-এর ‘নাট্য সমারোহ’, ডিসেম্বর মাসের ১৪ দিন ধরে বহরমপুর ‘ঋত্বিক’-এর ‘দেশ বিদেশের নাট্যমেলা’, বা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ‘ছন্দিক’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৮ দিন ধরে নাট্যোৎসব এ বার কেবল অনিশ্চিত নয়, সম্ভবত বন্ধও।
রঙ্গাশ্রমের সন্দীপ ভট্টাচার্য বলেন, “দেশের নানান রাজ্য থেকে ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন নাট্যদলকে অন্তত মাস ছয়েক আগে থেকে দিনক্ষণ জানিয়ে আমন্ত্রণ জানাতে হয়। সেই মতো সদন পাওয়ার জন্য গত কয়েক মাসে আবেদন করেও স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।”
ঋত্বিকের ১৩তম বর্ষের ‘দেশ বিদেশের নাট্যমেলা’র সম্পাদক মোহতিবন্ধু অধিকারী বলেন, “দেশ ছাড়াও বিদেশের বেশ কিছু নাট্যসংস্থা আমাদের নাট্যমেলায় বরাবর অংশ গ্রহণ করে। তার জন্য ভিসা-সহ বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার ঝামেলা রয়েছে। সে সব কারণে হাতে সময় দরকার। তাই রবীন্দ্রসদন চেয়ে গত ক’মাসে একাধিক বার লিখিত ভাবে আবেদন করা হয়েছে। জবাবই মেলেনি।” ছান্দিকের ৪৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৮ দিনের নাট্যোৎসবের অনিশ্চয়তার প্রসঙ্গ ছাড়াও সংস্থার কর্ণধার শক্তিনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “বহরমপুরের প্রতিটি নাট্যসংস্থা আন্তরিক ভাবে চায় রবীন্দ্রসদন সংস্কার হোক, আধুনিকীকরণ হোক। কিন্তু সেই কাজ করার আগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে রবীন্দ্রসদন কর্তৃপক্ষ আলোচনা করলে ভাল হত।”
৫২ বছর আগে ১ লক্ষ ১২ হাজার ৬৭৯ টাকার তহবিল নিয়েই বহরমপুর রবীন্দ্রসদনের শিলান্যাস হয়। ৭২০ আসনের ওই রবীন্দ্রসদনের শীততাপ নিয়ন্ত্রণ, আলো, আসন ও সাউন্ড সিস্টেমের আধুনিকীকরণের জন্য কেন্দ্রের সংস্কৃতি দফতর ২ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে। বছর খানেক ধরে সেই টাকা পড়ে রয়েছে সরকারি কোষাগারে, আর বহরমপুর জেলের বন্দিদের অভিনীত নাটক নিয়ে চলতি অগস্ট মাসে ৪ দিন ধরে নাট্যোৎসব করতে হল স্কুলের মেঝেয় তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে। বহরমপুর রেপার্টরির কর্ণধার প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “রবীন্দ্রসদন ছাড়া ও শহরে নাট্যানুষ্ঠানের দ্বিতীয় প্রেক্ষাগৃহ নেই। ফলে কয়েদিদের অভিনীত ৪টি নাটকই মঞ্চস্থ করতে হল স্কুলের অসর্ম্পূণ অস্থায়ী নাটমঞ্চে। ফল দর্শক ও কুশীলব সবাই অখুশি। |