প্রবল বাম জমানাতেও জেলার ৬টি পুরসভাই নিজেদের দখলে রেখেছিল কংগ্রেস। তৃণমূল আমলে তার ৫টিই গিয়েছে শাসক দলের হাতে। এ বার কংগ্রেসের শক্তঘাঁটি বলে পরিচিত সাঁইথিয়া পুরসভার দখলও নিতে চলেছে তৃণমূল। সোমবার রাতে বোলপুরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে পৌঁছে তৃণমূলে যোগ দিলেন কংগ্রেসের ছ’জন-সহ সাঁইথিয়া পুরসভার ৯ কাউন্সিলর। ফলে ১৬ সদস্যের সাঁইথিয়া পুরসভায় তৃণমূলের সদস্য এখন ১০। অনুব্রত বলেন, “আমরা খুব তাড়াতাড়িই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে সাঁইথিয়া পুরসভা দখল করব।”
এ দিকে বেগতিক পরিস্থিতি দেখে এ দিনই দলীয় নেতৃত্বের কাছে পুরপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন বীরেন্দ্রকুমার পারেখ। বীরেন্দ্রবাবু বলেন, “আমি অনেকদিন থেকেই অসুস্থ। তাই পুরপ্রধানের পদ থেকে সরে যেতে চেয়েছি।” এ দিনই দল তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে। যদিও মহকুমাশাসক (সদর) চন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী বলেন, “সরকারি ভাবে আমার কাছে এখনও সাঁইথিয়া পুরপ্রধানের ইস্তফা এসে পৌঁছয়নি।” |
তৃণমূলে যোগ দেওয়া কাউন্সিলরেরা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী |
গত ভোটের পরে ১৬ সদস্যের ওই পুরসভার বিন্যাস ছিল কংগ্রেস ১২, তৃণমূল ১, সিপিএম ১, ফরওয়ার্ড ব্লক ১ ও বিজেপি ১। এ দিন সিপিএম, ফব ও বিজেপি কাউন্সিলরও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে সেই বিন্যাস দাঁড়িয়েছে তৃণমূল ১০ ও কংগ্রেস ৬-এ। কংগ্রেসেরই একটি সূত্রের খবর, বেশ কিছুদিন ধরেই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের একাংশের। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাঁইথিয়া পুরসভা দখলে নেমে পড়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত ভোট মিটতেই তারই তোড়জোড় শুরু করে তৃণমূল। অবশ্য বিপদের আঁচ বুঝতে পেরে সমস্যা মেটাতে ময়দানে নামেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা নীহার দত্তের ছেলে তথা জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক সব্যসাচী দত্ত। রবিবার রাতে সাঁইথিয়ার দলীয় কার্যালয়ে এ নিয়ে একটি বৈঠকও হয়। সেখানে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন কয়েক জন কাউন্সিলর। বৈঠকে অবশ্য বীরেন্দ্রবাবু উপস্থিত ছিলেন না। ওই বৈঠকে কোনও সমাধান সূত্র না মেলার পরে এ দিনও পুরপ্রধানকে ছাড়াই ফের বৈঠকে বসেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তখনই জানা যায় শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বীরেন্দ্রবাবু পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। বৈঠকেই প্রয়াত কংগ্রেস নেতা নীহার দত্তের ছোটছেলে, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিপ্লব দত্তকে পুরপ্রধান করার দাবি ওঠে। বিপ্লববাবু অবশ্য দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন।
সব্যসাচীবাবুদের এত উদ্যোগ সত্ত্বেও বরফ যে গলেনি, তা বোঝা গেল সন্ধ্যার পরেই। কারণ, এ দিনের বৈঠকের পরেই সিপিএম, ফব ও বিজেপি কাউন্সিলরদের নিয়ে পুরসভার একমাত্র তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু রায়ের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে দেখা গেল কংগ্রেসের ৬ কাউন্সিলরকেও। সেই বৈঠকের পরেই তাঁরা ছুটলেন বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের কাছে।
এ দিকে কংগ্রেসের সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিনের বৈঠকে সব্যবসাচীবাবুও শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। এর আগে বীরভূমে পঞ্চায়েত ভোটগ্রহণের ঠিক পরের দিনই পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সব্যসাচীবাবুর আর এক ভাই (কাকার ছেলে), কংগ্রেসের শহর সভাপতি পিনাকী দত্তও। ১৯৮৭ সালে পুরসভা ঘোষণা হয়। ১৯৯৪ সালে ১৫ প্রথম মে নির্বাচন হয়। তখন থেকেই সাঁইথিয়া কংগ্রেসের দখলে ছিল। সেই পুরসভা তৃণমূল দখল করলে, তা কংগ্রেসের পক্ষে একটা বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। মাত্র কয়েক দিন আগে দুবরাজপুর পুরসভার কংগ্রেস পুরপ্রধানকেও নিজেদের দলে টেনেছে তৃণমূল। পরপর এই ধাক্কায় দলীয় কর্মীদের মনোবল অনেকটাই ভেঙে পড়ছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। যদিও কংগ্রেসের জেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “বিষয়টি এখনও আমার কাছে পরিষ্কার নয়।” |