নিকাশিতে ফাঁক, জলে ডুবল অফিস
স্ত একটা অফিস জলের তলায়। না, কোনও পাড় ভেঙে নদীর জল ঢুকে এই পরিণতি হয়নি। হয়নি অতি বৃষ্টির ফলেও। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ডাকা হয়েছিল দমকলকেও। কিন্তু তারাও পরিস্থিতির সামাল দিতে না পেরে ফিরে গিয়েছেন ব্যর্থ হয়েই।
তিন দিন বন্ধ থাকার পরে সোমবার পা রাখতেই নলহাটি পুর এলাকায় অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের (নলহাটি প্রকল্প) অফিসের এমন দশা দেখতে পান কর্মীরা। এই বেহাল দশার জন্য অবশ্য নিকাশি নিয়ে পুরসভার নজরদারির অভাবকেই দায়ী করছেন ওই অফিসের কর্মীরা। প্রকল্প আধিকারিক মহম্মদ আলি মল্লিকের অভিযোগ, “অফিসের পূর্ব দিকে জাতীয় সড়কের ধারে পুরসভার মহানালা। মহানালা বন্ধ করে দোকানদারেরা ব্যবসা করছেন। এর ফলে জল নিকাশি নালা দিয়ে বেরতে পারছে না। নালার জল বাইরে বেরতে না পেরে অফিসে ঢুকে পরছে।”
দিনভর জলে পা ডুবিয়েই কাজ সারলেন কর্মীরা।
গত বৃহস্পতিবার অফিস বন্ধ করে চলে যান কর্মীরা। শুক্রবার ঈদের ছুটি ছিল। শনি-রবিবারও অফিস বন্ধ। শনিবার অবশ্য প্রকল্প আধিকারিককে অফিসে জল ঢোকার খবর দেন নৈশ প্রহরী ওসমান গণি। সোমবার অফিসে এসে জল থৈ থৈ অবস্থার মধ্যে পড়েন কর্মীরা। প্রকল্প আধিকারিক মহম্মদ আলি মল্লিক বলেন, “গত ৩৫ বছর ধরে এখানে অফিস আছে। এ রকম ভাবে কোনও দিন অফিসের ভিতরে তিনফুট উচ্চতায় জল ঢোকেনি! তবে গত বছর থেকে জল ঢুকছে। আর এ বার যে ভাবে জল ঢুকেছে তা গত বছরও দেখিনি। অফিসের ক্ষতিও হয়েছে।”
জল থৈ থৈ অবস্থার কথা বলতে গিয়ে অফিসের জুনিয়র অ্যাকাউন্ট্যান্ট গোপাল পাইক জানান, অফিসের ক্যাশ সেকশন, অ্যাকাউন্টস সেকশন, প্রকল্প আধিকারিকের অফিস-সহ ১৬টি ঘর জলমগ্ন। ৮টি আলমারিতে জল ঢুকেছে। জলমগ্ন এলাকার চাষি এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘরটিও। ৬০০ কুইন্ট্যাল ধান মজুত থাকতে পারে এমন ৩টি বড় মাপের গোডাউনের ভেতরেও জল ঢুকেছে। বাদ পড়েনি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রাখার গোডাউনটিও। জল ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান মজুত করার জন্য একটি গোডাউনে রাখা দশ হাজার বস্তা।
পশ্চিমবঙ্গ সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের সেই অফিস।
এ দিন অফিস জলমগ্ন অফিসেই কাজকর্ম সারতে হয়েছে অফিসে আসা ২৫ জন কর্মীকেই। অফিস ঢুকতেই জল থৈ থৈ অবস্থার মধ্যেই জল নিকাশির জন্য দমকল থেকে পুরসভা, রামপুরহাট মহকুমাশাসক থেকে অফিসের প্রশাসনিক সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও বিকেল পর্যন্ত অফিসের জল অফিসেই থেকে গিয়েছে। খবর পেয়ে রামপুরহাট থেকে দমকল কর্মীদের পরিস্থিতি দেখে জল বের করতে না পেরে ফিরে আসতে হয়েছে। রামপুরহাটের দমকল বিভাগের অফিসার ইনচার্জ স্বপন দত্ত বলেন, “বিশাল এলাকা জুড়ে জল আবদ্ধ হয়ে আছে। নিকাশি নালা বন্ধ করে স্থায়ী দোকান হয়ে গিয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ। জমাজলে এলাকা বিশাল জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। তাই অত জল মেরে ফেলা সম্ভব নয়।”
এলাকায় বিকেলে যান পুরসভার পূর্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর অশোক ঘোষ। সঙ্গে যান পুরসভার সাব অ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র চিরঞ্জিৎ সাহু। তাঁরা পরিস্থিতি দেখে সন্ধ্যায় মাটি কাটার যন্ত্র নিয়ে জল নিকাশির ব্যবস্থা করেন। অশোকবাবু বলেন, “নিকাশি নালার উপরে অবৈধ দোকানদাররা তো আছেই, সেই সঙ্গে জল নিকাশির পথে স্থায়ী বাড়িও তৈরি হয়ে গিয়েছে। আপাতত জল বের করার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। পরে দোকানদারদের সরানোর ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে।” এ দিকে অফিসে জল ঢোকার খবর যায় অফিসের কলকাতা স্থিত প্রশাসনিক কার্যালয়ে। দফতরের প্রশাসনিক সচিব গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, “খবর পেয়েছি। অফিসের কর্মীরা আছেন, তাঁরা সব দিক দেখছেন।” অন্য দিকে, নলহাটি পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে জল নিকাশির জন্য প্রয়োজনে যা কিছু করার করতে হবে।” এ দিনের অভিজ্ঞতার পরে অফিসের কর্মীরা কিন্তু বলতে শুরু করেছেন, “যা অবস্থা দেখছি, তাতে এবার থেকে গামছা পড়ে অফিসে ঢুকতে হবে!”

ছবি: সব্যসাচী ইসলাম



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.