নিজস্ব সংবাদদাতা • খয়রাশোল |
বাড়ি ফেরার সময়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হলেন তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ(৫৬)। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে চুড়র-রথতলার হজরতপুর-ভীমগড় রাস্তায়। প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। সন্দেহভাজন দুই যুবককে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ পান্ডবেশ্বর থেকে আটক করেছে পুলিশ। বীরভূম এসপি মুরলীধর শর্মা বলেন, “ট্রেন ধরতে যাওয়ার সময়ে ওই নেতা খুন হন। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অশোকবাবু খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মী। নিহতের স্ত্রী সাঁইথিয়ায় একটি হাসপাতালের কর্মী। তাই কেন্দ্রগড়িয়ায় বাড়ি হলেও সপরিবার সাঁইথিয়ায় থাকেন তিনি। অন্য দিনের মতো এ দিনও কাজ শেষে অশোকবাবু সাঁইথিয়ার ট্রেন ধরতেই মোটরবাইকে করে ভীমগড় স্টেশনে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন অসীম বাউড়ি নামে এক যুবক। অসীমবাবুই বাইক চালাচ্ছিলেন। অসীমবাবু বলেন, “অশোকদাকে প্রতিদিন বাইকে করে স্টেশনে পৌঁছে দিই। এ দিন রথতলার কাছাকাছি আসতেই একটি বাইক দ্রুত গতিতে আমাদের পাশ দিয়ে চলে যায়। তার ঠিক পরেই আর একটি বাইকে তিনজন আমাদের কাছাকাছি এসে দাদাকে পর পর দু’টি গুলি করে। গুলি তাঁর মাথায় ও ডান কানে লাগে। টাল সামলাতে না পেরে দু’জনই পড়ে যাই। ঘটনাস্থলেই মারা যান দাদা।” |
পড়ে রয়েছে অশোক ঘোষের দেহ। খয়রাশোলে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত |
খুনের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় প্রচুর তৃণমূল কর্মী-সমর্থক জড়ো হন। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। খুনের কিনারা না হওয়া পর্যন্ত দেহ ছাড়া হবে না, এই দাবিতে অনড় থাকেন কর্মীরা। বুঝিয়ে দেহ নিয়ে যায় পুলিশ। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অন্ধকারের মধ্যে জটলা। পড়ে রয়েছে অশোকবাবুর নিথর দেহ। নিহতের ভাই দীপক ঘোষ স্পষ্ট কিছু না বললেও এই ঘটনা দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেল ফল বলে মনে করেন এলাকার মানুষ ও তৃণমূলের নীচু তলার কর্মী-সমর্থকেরা। কারণ, খয়রাশোলের বর্তমান ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায় দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। অশোক ঘোষ বিরুদ্ধ গোষ্ঠী তথা সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের। পঞ্চায়েত ভোটের সময় উপর তলার নির্দেশে দুই নেতা এক ছাতার তলায় এলেও, নির্বাচন মিটতেই দ্বন্দ্ব প্রকট হয়। এলাকায় প্রভাব বাড়ছিল নিহত অশোকবাবুর।
তবে এই ঘটনার দায় সিপিএমের ঘাড়েই চাপিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, “খয়রাশোলে আমার বিপুল জয় মোটেই ভাল ভাবে মেনে নেয়নি সিপিএম। এই খুনের পিছনে সিপিএমের দুষ্কৃতীরাই রয়েছে বলে মনে করি।” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “এই ঘটনার পিছনে আমাদের কেউ জড়িত নয়। এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।” |