টিউশন থেকে ফেরার পথে ডাম্পারের চাকায় পিষে মৃত্যু হল একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর। আর তার জেরেই উত্তাল হয়ে উঠল দুর্গাপুরের মায়াবাজার এলাকা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ছাত্রীর নাম রানিকুমারী মণ্ডল (১৭)। ওয়াড়িয়া স্টেশনের পাশেই তার বাড়ি।
অন্য দিনের মতোই সোমবার সাড়ে ১১টা নাগাদ বন্ধুদের সঙ্গে সাইকেলে টিউশন থেকে ফিরছিল রানি। আচমকা মায়াবাজার রেলগেটের কাছে দুর্গাপুর তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের (ডিটিপিএস) ফ্লাই আশবোঝাই ডাম্পারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। সামনের চাকা পেরিয়ে যাওয়ার পরে ডাম্পারের পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় পানাগড় হিন্দি হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ওই কিশোরী। দুর্ঘটনার পরেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করতে তাঁদেরও বাধা দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে দুর্গাপুর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। |
ষাটের দশকে দু’টি ৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট দিয়ে যাত্রা শুরু ডিটিপিএস-র। পরে ১৯৬৬ সালে একটি ১৪০ মেগাওয়াট এবং ১৯৮২ সালে ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দু’টি ইউনিট গড়ে ওঠে। ১৯৮৫ সালে আগুন লেগে অবশ্য প্রথম দু’টি ইউনিট বসে যায়। এই তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের ছাই নিয়ে গিয়ে দামোদরের ধারে অ্যাশপন্ডে ফেলা হয়। এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে ছাইবোঝাই ডাম্পারগুলি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকাটি জনবহুল। অথচ লরি ও ডাম্পারগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে যাতায়াত করে। বারবার বারণ করেও কোনও লাভ হয় না। যাতায়াত করাটাই ভয়ের হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালের অক্টোবরেও ডিটিপিএসের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যারাকের সামনে একটি মালবোঝাই লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় পূজা দাস (১৩) নামে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে লরির সামনের চাকার তলায় পিষ্ট হয়ে যায় ওই কিশোরী। দুর্ঘটনার পরে উত্তেজিত বাসিন্দারা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে পুলিশের আটক করে রাখা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাঁদের ছোড়া ইটে তিন পুলিশকর্মী জখমও হন। ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশ ব্যারাকে।
সোমবার পরিস্থিতি ততটা উত্তপ্ত না হলেও বিক্ষোভ চলে প্রায় ঘন্টাখানেক। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। অবিলম্বে এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করে বেপরোয়া ভারি গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় বিশ্বেশ্বর মণ্ডল, বিভূতি মণ্ডলেরা বলেন, “বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ তা রুখতে কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এবারও কিছু না করা হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।” তাঁরা জানান, সমস্যার কথা লিখিত ভাবে প্রশাসনকে জানাবেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, ডাম্পারটিকে আটক করা হয়েছে। ডাম্পারের চালক ও খালাসি পলাতক। বাসিন্দাদের আর্জি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। |