দলের পতাকা না থাকলেও কাঁকসার আকন্দারায় এসারের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের আন্দোলনে বরাবরই পুরোভাগে ছিলেন তৃণমূলের লোকজন। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে-পরে পাল্টে গিয়েছে নেতৃত্বের মুখ। সোমবার রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এসারের কাজ বন্ধের সমস্যা নিয়ে বৈঠক করতে দুর্গাপুরে এলে কাঁকসার মলানদিঘি, আকন্দরায় দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে বলে দলেরই একটি সূত্রে খবর। যদিও পার্থবাবু কোনও দ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি।
তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই সব এলাকায় দলের কাজকর্ম দেখেন কেবু চট্টোপাধ্যায়। অতীতে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে এসারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ বার মলানদিঘি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থীও হন তিনি। কিন্তু পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করলেও কেবুবাবু পরাজিত হন। এর পরে রবিবার এসারের বিরুদ্ধে এলাকায় উন্নয়নের কাজ না করার অভিযোগে যে বিক্ষোভ-অবরোধ হয়, সেখানে তাঁকে দেখা যায়নি। |
সে দিন আকন্দারার শ’খানেক বাসিন্দা বিক্ষোভে যোগ দেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, বর্ষায় ভারী গাড়ি ও ডাম্পার চলায় ভেঙে পড়ছে গ্রামের রাস্তা। প্রকল্পের দূষিত জল বয়ে যাওয়ায় আশপাশের জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেওয়া, ঠিকা কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখেননি সংস্থা কর্তৃপক্ষ। ঘণ্টা চারেক পরে পুলিশি মধ্যস্থতায় বিক্ষোভ উঠে গেলেও সে দিন আর কোনও কাজ হয়নি। ওই বিক্ষোভ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন, তৃণমূলের ব্লক কিষাণ খেতমজুর কমিটির সভাপতি আজিজুল মিদ্যা।
তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কেবুবাবু দলীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেছেন, পঞ্চায়েত ভোটে আজিজুল দলবিরোধী কার্যকলাপ ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজকর্ম করেছেন। তাঁর হারের পিছনেও সেটিই প্রধান কারণ বলে দাবি করেছেন কেবুবাবু। আজিজুল আবার রবিবার সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ গ্রামবাসীর চেয়ে এসার সংস্থার স্বার্থ দেখতে বেশি আগ্রহী। সোমবারের বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী তাঁদের দু’জনকেই ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। বৈঠকের পরে পার্থবাবু বলেন, “সংবাদমাধ্যমের সামনে এমন কথা বলে আজিজুল মোটেও ঠিক কাজ করেননি। তাঁর উচিত ছিল বিষয়টি দলকে জানানো।” তবে দ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে পার্থবাবুর মন্তব্য, “বাসন মাজতে গেলে একটির সঙ্গে অন্যটির ঠোকাঠুকি হয়। তা বলে কি বাসন ভেঙে যায়!”
এ দিন এসারের সমস্যা মেটাতে বৈঠকে পার্থবাবু ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা নেতা মলয় ঘটক, এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সম্পাদক দেবদাস বক্সী, কাঁকসার স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। এসার অয়েলের পক্ষে ছিলেন প্রজেক্ট ডিরেক্টর অপূর্ব রঞ্জন ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স দফতরের আধিকারিক দেবজিত্ কর। বৈঠক শেষে পার্থবাবু বলেন, “অসন্তোষ আলোচনার টেবিলে বসেই মিটবে। গ্রামোন্নয়নের প্রয়োজনীয় কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এসার।” এসার কর্তৃপক্ষও জানান, সন্তোষজন আলোচনা হয়েছে। পার্থবাবু এ দিন জানান, ৩১ অগস্ট অন্ডাল বিমাননগরী থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবার সূচনা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে চালু হবে বিমান যোগাযোগও। |