কাছাকাছি ভদ্রস্থ হাসপাতাল হুগলির ম্যাপে নেই। ১০-১২ কিলোমিটার উজিয়ে যেতে হয় বর্ধমানের কালনায়। না হলে ৪৫ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয় জেলা সদর চূঁচুড়ায়। চিকিৎসা দূরের কথা, হাসপাতালে পৌঁছতেই রোগীর প্রাণ যাওয়ার জোগাড়। নাভিঃশ্বাস ওঠে বাড়ির লোকের।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে গুপ্তিপাড়ার মানুষের দাবি ছিল গ্রামীণ একটি হাসপাতালের। নতুন ভবন হলও। কিন্তু এখন সেই হাসপাতালের নতুন ভবন চালুর দাবিতেই পথে নামতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শাসকদলের নেতাদের একাংশ। কবে ওই ভবন চালু হবে, তার সদুত্তর মেলেনি প্রশাসনের কর্তাদের কাছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, গুপ্তিপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেশ পুরনো। এক সময় সেখানে প্রসূতি বিভাগে ১০টি শয্যা ছিল। এখন আর রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা হয় না। শুধু বহির্বিভাগ চলে। তা অবশ্য নামমাত্র। পুরনো ওই ভবন অনেক বছর ধরেই জীর্ণ। অথচ গুপ্তিপাড়া ১, গুপ্তিপাড়া ২, সোমড়া, চরকৃষ্ণবাটি, বাকুলিয়া-ধোবাপাড়া-সহ আশপাশের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের হাজার হাজার মানুষ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। গঙ্গার ওপারে নদিয়া থেকেও মানুষ আসেন। গ্রামবাসীদের অভিজ্ঞতা, মাত্র এক জন চিকিৎসক রয়েছেন। তা-ও ঘণ্টা দু’য়েকের বেশি পাওয়া যায় না তাঁকে। রাতবিরেতে গ্রামবাসীদের ছুটতে হয় কালনা মহকুমা, চুঁচুড়া হাসপাতালে।
কয়েক বছর আগেই অবশ্য গ্রামবাসীরা ভেবেছিলেন, সমস্যার সুরাহা হবে অনেকটাই। বর্তমান ভবনের পাশেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন একটি ভবন তৈরি করা হয় ২০১১ সালে। কর্মী-আবাসনও হয়। কিন্তু আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও ভবনের তালা খোলেনি। |
পরিষেবার দাবিতে ধর্না চলছে।—নিজস্ব চিত্র। |
গত সোমবার থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে রীতিমতো মঞ্চ বেধে বিক্ষোভ শুরু হয় তৃণমূলের নেতৃত্বে। রবিবারেও ধর্না চলেছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, নতুন ভবনের দখল জেলা পরিষদের হাতে। ফলে নতুন জেলা পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ভবনের হস্তান্তরের প্রশ্নই নেই।
তা ছাড়া, অন্তর্বিভাগে দু’জন চিকিৎসক, ৬ জন নার্স, দু’জন ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করার কথা। কিন্তু তার কতটা পূরণ করা এই মুহূর্তে সম্ভব, জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা তা নিয়ে সন্দিহান। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তনিমা মণ্ডল বলেন, “ওই ভবন এখনও আমাদের হাতে হস্তান্তর হয়নি। হলে চালু হবে। তবে আমাদের লোকবল কম। পরিকাঠামো উন্নয়নের চেষ্টা করা হবে।”
আন্দোলনকারীদের তরফে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সনাতন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আগের জেলা পরিষদ গ্রামবাসীদের নিয়ে ছেলেখেলা করেছে। এ বার যাতে খুব দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি উপযুক্ত পরিকাঠামো-সহ পুরোদমে চালু হয় সেই দাবিতেই আমাদের আন্দোলন। কয়েক মাস আগেও জেলাশাসক থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছিলাম। কাজ হয়নি।” বিধায়ক অসীম মাঝির বক্তব্য, “ওখানে বহির্বিভাগ অত্যন্ত ভাল ভাবে চলছে। অন্তর্বিভাগও খুব শীঘ্রই চালু হবে। সিপিএম ডাক্তার, নার্স, আয়া, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কোনও কিছুই নিয়োগ করেনি। আমরা করব।”
তৃণমূল শিবিরের খবর, আন্দোলনকারীরা দলের বিক্ষুব্ধ অংশ বলে পরিচিত। গুপ্তিপাড়া ২ পঞ্চায়েতের যে জায়গায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অবস্থিত, সেখানেও গ্রামসভায় নির্দলের টিকিটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন তৃণমূলের গৌতম দাস। ব্লক তৃণমূলের একাংশের অভিমত, দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই এই আন্দোলন। অবস্থান মঞ্চেও দলের বিধায়ক অসীম মাঝির বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসাদ রায় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙানো হয়েছে। আন্দোলনকারীদের অবশ্য দাবি, তাঁরা তৃণমূলেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েই তাঁদের আন্দোলন। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। বিধায়কের মন্তব্য, “যারা ওখানে আন্দোলন করছে, তাঁরা আমাদের দলের কেউ নন।”
রাজনীতির কাজিয়া নয়, গ্রামবাসীরা চাইছেন পরিষেবা। |