পাঁচ ঘণ্টা হেঁটে সমতলে
ট দিন ধরে বন্ধ এলাকার দোকানপাট। জীবনযাত্রার ন্যুনতম সুবিধাটুকু পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়িতে শেষ জমানো রসদও শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। পাহাড় ছেড়ে সমতলে নামা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। কিন্তু সমতলে নামাও তো প্রায় অসম্ভব। রাস্তায় জিপ-বাস বা কোনও ছোট গাড়িও নেই। ব্যক্তিগত গাড়িও যাতায়াত করতে পারছে না মোর্চার ফতোয়ায়। ফলে হাঁটাই শেষ ভরসা।
যানবাহন নেই। কার্শিয়াং থেকে হেঁটেই নেমে আসছেন বাসিন্দারা। সুকনার গাড়িধুরায়।
এইভাবে রবিবার দুপুরে কার্শিয়াং থেকে হেঁটে সমতলের সুকনা লাগোয়া গাড়িধূরায় নেমে এলেন মোট ১৬ জনের একটি দল। দলটিতে পাঁচজন মাত্র পূর্ণবয়স্ক। বাকিরা সকলেই নাবালক। সবচেয়ে ছোট যে সদস্য তাঁর বয়স ৬। প্রায় ৫ ঘণ্টার বেশি হেঁটে তাদের তখন কথা বলার অবস্থা নেই। তাঁদেরই মধ্যে শুধু একবার জানতে চাইলেন শিলিগুড়ি আর কত দূর? যখন শুনলেন হেঁটে গেলে আরও ঘন্টা দুয়েক। সেখানেই বসে পড়লেন কয়েকজন। তাঁরা জানালেন আরও কয়েকজন একই ভাবে কোনও হেঁটেই নেমে আসছেন সমতলে। উদ্দেশ্য, সমতলে নিজেদের জন্য নিরাপদ আস্তানা খুঁজে নেওয়া। এঁরা প্রত্যেকেই বিহারের বাসিন্দা। মহম্মদ ইয়াসিন, রুস্তম আলিরা পড়ে কার্শিয়াঙের পুস্পরানি হিন্দি হাইস্কুলে। তাঁদের বাবা আক্রাম খান কার্শিয়াঙের ধোবিখোলায় একটি দর্জির দোকান চালান।
বন্ধে কাজ নেই। বসে রয়েছেন মালবাহকেরা।
দার্জিলিঙের চকবাজারে।
কার্শিয়াঙের পানিঘাটায়
মোর্চার মিছিল।
মহম্মদ ইয়াসিন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সে বলল, “স্কুল প্রায় ৮ দিন বন্ধ। খুলবে আশা করে এতদিন বসেছিলাম। কিন্তু বাড়িতে আর খাবার মজুদ নেই। বাবা আর পারছেন না। এবার শিলিগুড়ি থেকে বিহারের ভাগলপুর যাব।” আক্রাম খানের বক্তব্য, “কোনও গাড়ি নেই, তাই হেঁটেই নেমে এসেছি। বাচ্চাদের এত খাটনি কোনওদিনই করাইনি। নিজেরই চোখে জল এসে যাচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই। তাই বিহারের ভাগলপুরে দেশে ফিরে যাচ্ছি। পাহাড়ে থাকলে কি হবে জানি না। এসব করে কার কি লাভ হচ্ছে তাও বুঝতে পারছি না। সাধারণ মানুষের হয়রানি হচ্ছে।”
বিহারেরই আরারিয়ার বাসিন্দা রাখি ঠাকুরও ছিলেন ওই দলে। তিনিও বললেন, “ঘড়ে আনাজপাতি কিছু নেই। বাচ্চাদের দু’দিন আধপেটা খাইয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিমল গুরুঙ্গও নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। পাহাড়ের কি হবে আমরা জানি না। জানতেও চাইনা। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।” বলবীর ঠাকুরের দুই ছেলেমেয়ে ছয় বছরের রাখি ও আট বছরের সুমিত আলফানসো স্কুলের ছাত্রছাত্রী। কখনও হেঁটে আবার বাবার কাঁধে চেপে তারা গাড়িধূরা পর্যন্ত পৌঁছেছেন। রাখি অবশ্য শুধু জানে, স্কুলে দিদিমণিরা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। তাই সে ঘুরতে যাচ্ছে। গাড়ি পায়নি তাই হেঁটেই বিহারে যাবে। বলবীরও জানায়, এখন ছুটি পরে পাহাড়ে যাব।
কার্শিয়াং থেকে গাড়িধুরা হলে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। কিন্তু পাহাড়ি পথে চড়াই যতটা কঠিন, উতরাই ততোধিক কষ্টসাধ্য। ফলে অতটুকু পথ নামতে দলগুলির প্রায় ৫ ঘন্টা সময় লেগে গিয়েছে। রাস্তায় জিরিয়ে নিয়েছে দলগুলি। তাঁরা জানিয়েছে, শিলিগুড়ি জংশন থেকে রাতে বিহারের বাস ধরতে হবে। তাই বিকালের মধ্যে শিলিগুড়ি যাতে ঢোকা যায়, সেই ভাবেই ভোরে কার্শিয়াং থেকে রওনা দিয়েছিলেন।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে রবিবার পানিঘাটায় মিছিল করেন মোর্চার কর্মী সমর্থকরা। লোহাগড়, এমএম তরাই, পানিঘাটা, খাপরাইল,পাঙ্খাবাড়ি সহ একাধিক এলাকা থেকে প্রায় এক হাজার লোক এ দিন মিছিলে যোগ দেয়। পানিঘাটা মোড় থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ মিছিল করে তাঁরা পানিঘাটা বাজারে পানিঘাটা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এসে জমা হন। বক্তব্য পেশ করেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সন্তোষ রসাইলি, জিটিএ সদস্য চম্পা বিবর প্রমুখ। তবে মিছিলে পানিঘাটা এলাকার কাউকে যোগ দিতে দেখা যায়নি। সকলেই বাইরে থেকে মিছিলে যোগ দিতে দেন। বনধের ফতোয়া সত্বেও পানিঘাটা এলাকার বহু দোকান ঝাঁপ অর্ধেক খুলে ব্যবসা করেছেন। পাহাড়ে ঢোকার সমস্ত রাস্তায় দুপুরের পর থেকে বিশেষ তল্লাশি চালানো হয়। পাহাড়ে ঢোকা এবং বেরনোর সময় সমস্ত গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। শালুগাড়া, গাড়িধূরা, সুকনা, খাপরাইল সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করতে দেখা গিয়েছে সিআরপি এবং পুলিশদের।
রবিবার ছবি তুলেছেন সন্দীপ পাল ও রবিন রাই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.