স্কুলের পোশাকেই বাড়ি ফিরে এল পাহাড়ের পড়ুয়ারা
ড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় রাত সওয়া ৮টা। কলকাতা স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস। অধীর আগ্রহে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন দাদু-দিদা। কামরার দরজায় এসে নাতি স্বপ্নদীপ তাদের দেখে এক লাফ দিয়ে দাদুর কোলে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন দাদু চিকিৎসক বি আর পালও। অবশেষে নির্বিঘ্নে ফেরত এসেছে তাঁদের নাতি। নাতিকে সঙ্গে নিয়ে বলেন, “আপাতত বন্ধ শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। পড়াশোনা তো মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। বন্ধ মিটলে কী করা হবে, তা ঠিক করব।”
শুধু স্বপ্নদীপই নয়, দার্জিলিং থেকে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে হলদিবাড়ি এক্সপ্রেসে ঘরে ফেরত এল সেন্ট জোশেফ নর্থ পয়েন্ট স্কুলের ৩১ পড়ুয়া। ট্রেন থেকে নেমে তারা জানায়, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অনুমতি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ সকাল পাঁচটায় টুরিস্ট বাসে তুলে দিয়েছিলেন ৩১ পড়ুয়াকে। সে জন্য ভোর ৪টেয় ঘুম থেকে তুলে দিয়ে পড়ুয়াদের ‘রেডি’ করে দিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষকেরাই।
ঘরে ফিরে। কলকাতা স্টেশনে বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
বারো ক্লাসের ছাত্র শুভ্র বসু এবং প্লেনেটের তত্ত্বাবধানে ভোর পাঁচটায় ওই ৩১ পড়ুয়া রওনা হয়ে যায়। নিউ জলপাইগুড়ি এসে হলদিবাড়ি এক্সপ্রেসে সবাইকে একসঙ্গে বি-৪ কামরায় তোলে শুভ্ররাই। ওখানে অবশ্য বেশ কয়েক জন পড়ুয়ার অভিভাবক পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাঁরাও সাহায্য করেন। পথে মালদহে নেমে যান শুভ্র। তবে কলকাতা অবধি সবাইকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে এসেছে প্লেনেট। তিনি বলেন, “আমাদের কিছু করার ছিল না। তাই আমরা যারা সিনিয়র ছিলাম, তারাই দায়িত্ব নিলাম। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও নিজেরাই করে নিয়েছি।” তবে কেউ যাতে দলছুট হয়ে না যায়, সে জন্য সবাই স্কুল-ড্রেস পরেই পাহাড় থেকে রওনা দিয়েছিল। সাদা শার্ট, ছাই রঙা প্যান্ট, নীল-আকাশি টাই আর নীল ব্লেজার।
ক্লাস ফোরের ছাত্র সৌম্যজিৎ দে বলে, “আমরা একটুও ভয় পাইনি। সিনিয়র দাদারা ছিল। ওরাই সব ম্যানেজ করে নিয়ে এসেছে।” রাজারহাটের বাসিন্দা সৌম্যজিতের মা ইন্দ্রানীও জানান, বেশির ভাগ পড়ুয়ার কাছেই মোবাইল ছিল। আমরা কিছু সময় অন্তর ফোনে খবর নিচ্ছিলাম। তিনি বলেন, “নামিয়ে আনা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় ছিল না। ওখানে তো পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল। আশা করছি, তাড়াতাড়িই বন্ধ উঠে যাবে। তার পরে শীতের ছুটি কমিয়ে নিশ্চয়ই স্কুলে সিলেবাস মেক-আপ করার ব্যবস্থা করা হবে।” হিন্দমোটরের বাসিন্দা মনোজ ঘোষ জানান, তাঁর ছেলে সৃজন ঘোষ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। এ বছরই নর্থ পয়েন্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তাঁর কথায়, “এ বছর ভর্তি হওয়ার পরে ওখানে আমার পরিবারের থাকার ব্যবস্থাও করতে হয়েছে। এখন এই ঘটনা ঘটলে কী করব! তাই পাততাড়ি গুটিয়ে নেমে আসতেই হল। এ ভাবে তো আর চলতে পারে না।”
মোর্চার ডাকা বন্ধ শুরু হওয়ার পরে হস্টেলে থেকে যাওয়া ছাত্র ছাত্রীদের রবিবার থেকে বাড়ি পাঠাতে শুরু করেছে দার্জিলিঙের বিভিন্ন স্কুল কতৃর্পক্ষ। দার্জিলিঙের তিন মহকুমা মিলিয়ে মোট ২৮টি আবাসিক স্কুল রয়েছে। সেন্ট জোশেফ স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্যান্টি ম্যাথ বলেন, “স্কুলের হস্টেলে থাকা ২৭০ জন ছাত্রকে এ দিন সকালে বাড়ি ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকি ১০৫ জন ছাত্রকে আগামী ১৫ অগস্ট বন্ধ শিথিলের দিনে ফেরৎ পাঠানো হবে। তাদের পরিবারের সদস্যদের খবর পাঠানো হয়েছে।” স্কুল সূত্রে খবর, এ দিন যে ছাত্রদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তারা ভূটান, বাংলাদেশ, কলকাতা এবং নেপালের বাসিন্দা। যারা এখনও হস্টেলে রয়ে গিয়েছে তাদের মধ্যে তাইল্যান্ড ও বিহারের কিছু বাসিন্দাও রয়েছে। কার্শিয়াঙের হিমালি বোর্ডিং স্কুলও তাদের ছাত্রদের এ দিন ফেরত পাঠিয়েছে। বাকি স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৫ অগস্ট ছাত্রদের ফেরত পাঠাবে। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিলভেস্টার সাইমন বলেন, “হস্টেলে এখন ১৬০ জন পড়ুয়া রয়েছে। কেউ থাকতে চাইলে আমাদের আপত্তি নেই। যারা ফেরত যেতে চায়, তাদের ১৩ থেকে ১৮ অগস্ট ফেরত পাঠানো হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.