এত দিন সক্রিয় বর্ষার পিছনে ছিল নিম্নচাপ ও মৌসুমি অক্ষরেখার যৌথ অবদান। রবিবার যোগ দিয়েছে তৃতীয় শক্তি! আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বর্ষার যে এই বাড়বাড়ন্ত, তার কারণ নিম্নচাপ আর মৌসুমি অক্ষরেখার সঙ্গে ঘূর্ণাবর্তের সংযোগ। এই ত্রিশক্তির খোলায় দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টির দাপট বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এই দ্বিমুখী তৎপরতার সঙ্গে তৃতীয় শক্তির মিলনের সূচনা হয়েছিল শনিবারেই। তবে সেই সময় ঘূর্ণাবর্তটি ছিল পশ্চিমবঙ্গের স্থলভূমির উপরে। এ দিন তা সরে গিয়েছে বাংলা-ওড়িশা উপকূলের দিকে। উত্তরপ্রদেশে রয়েছে নিম্নচাপটি। দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়ে বিস্তৃত রয়েছে মৌসুমি অক্ষরেখাও। এর ফলেই রবিবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় জোর বৃষ্টি হয়েছে। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, শনিবার বিকেল থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় ২৮.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক আধিকারিক জানান, সোমবার বৃষ্টি হবে গোটা রাজ্যেই। কোনও কোনও এলাকায় ভারী বৃষ্টিও হতে পারে।
এ বছর নির্দিষ্ট সময়ে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকলেও প্রথম পর্যায়ে তার তেমন জোর ছিল না। ফলে বৃষ্টি-ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। তবে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বর্ষা। ১০ দিনের মধ্যে চার-চারটি নিম্নচাপ তৈরি হয় বঙ্গোপসাগরে। তার জোরেই ছন্দ ফিরে পায় মৌসুমি বায়ু। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই কমবেশি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গেও। দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রের খবর, ১০ অগস্ট পর্যন্ত হিসেবে দেখা যাচ্ছে, স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে গোটা রাজ্যেই।
যদিও কৃষি-আবহবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়ার মতো রাজ্যের ধান উৎপাদনে প্রথম সারির জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এখনও স্বাভাবিকের তুলনায় কম। তবে ত্রিশক্তির দৌলতে এখন যা পরিস্থিতি,
তাতে কয়েক দিনের
মধ্যে ওই জেলায় ঘাটতি মিটে যাবে বলে আশা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা।
রাজ্যের কৃষি দফতরের একটি সূত্রের দাবি, বর্ধমান জেলায় স্বাভাবিকের থেকে কম বৃষ্টি হলেও তা ধানচারা রোয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব ফেলেনি। রবিবার পর্যন্ত ওই জেলায় প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে ধান রোয়ার কাজ শেষ হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাতেও ধানচারা রোয়ার কাজ চলছে পুরোদমে। চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জমিতেই ধান রোয়ার কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে কৃষিকর্তাদের আশা।
জেলার পাশাপাশি বৃষ্টির দাপটে মহানগরেও রবিবার ছিল পুরোদস্তুর ‘রেনি-ডে’। লোকাল ট্রেন চলেছে দরজা-জানলা বন্ধ করে। ভিজে যাওয়ার ভয়ে অটোরিকশার সামনের আসনে বসার লোক মেলেনি। ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় বাস-ট্যাক্সিও ছিল কম। নিতান্ত প্রয়োজনে রাস্তায় বেরোনো মানুষজনকে অল্পবিস্তর নাজেহালও হতে হয়েছে। পুলিশি সূত্রের খবর, পার্ক সার্কাস কানেক্টর, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, মহাত্মা গাঁধী রোড-সহ শহরের কিছু কিছু জায়গায় জল জমেছিল। তবে বিকেলের পর থেকে জমা জল কমতে শুরু করে। |