|
|
|
|
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে পর্যালোচনা সিপিএমের |
তৃণমূলের সন্ত্রাসেই খারাপ ফল, দাবি পূর্বে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
নন্দীগ্রামের হার তো আছেই, পূর্ব মেদিনীপুরে দু’বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনের তুলনাতেও এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট কমল বামফ্রন্টের। জেলায় এ বার বিধানসভা ভোটের নিরিখে তাদের ভোট কমেছে প্রায় ২ শতাংশ। তা ছাড়াও কমেছে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসনের সংখ্যাও।
কেন এই বিপর্যয়?
বামেদের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় এমন শোচনীয় পরিস্থিতির জন্য অবশ্য তৃণমূলের ব্যাপক সন্ত্রাসকেই দায়ী করা হয়েছে। তবে সিপিএমের তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, “জেলায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়েছে। সে জন্যই সিপিএম ও কংগ্রেস পুর্ননির্বাচনের দাবি করা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন তা খারিজ করে দিয়েছে। জেলার মানুষ এ বারও বামেদের প্রত্যাখ্যান করেছে।”
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জেরে বামেদের জনসমর্থন কমতে শুরু করেছিল। তারপর ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে হার হয়েছিল বামফ্রন্টের। ২০০৯ সালের লোকসভা ও ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও জেলায় সব আসনে পরাজয় হয় তাদের। যদিও ২০০৯ সালের লোকসভার চেয়ে বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় বামেদের ভোটপ্রাপ্তির হার বেড়েছিল। কিন্তু এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফের বামেদের ভোট প্রাপ্তির হার কমেছে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা ভোট পেয়েছিল ৪৩.৩২ শতাংশ। এ বার তা কমে হয়েছে ৪১.৪১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২ শতাংশ ভোট কমেছে। তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি পূর্ব মেদিনীপুরে এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম নেতৃত্ব ঘুরে দাঁড়ানোর যে ডাক দিয়েছিলেন, তা যে পুরোপুরি ব্যর্থ পঞ্চায়েতের এই ফলেই তা স্পষ্ট হয়েছে। গত বারের মতো এ বারও জেলা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল। পাশাপাশি অধিকাংশ পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতেও নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রেখেছে তারা।
পঞ্চায়েত ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে জেলা সিপিএম নেতৃত্বের অভিমত, সুতাহাটা, নন্দকুমার কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী, পাঁশকুড়া ও তমলুক ব্লকে এ বার ভোটের হার বেড়েছে। জেলার ২৫টি ব্লকের মধ্যে নন্দীগ্রাম ১ ও ২, খেজুরি ১,২, ভগবানপুর ১, পটাশপুর ১ ও ২, কাঁথি ১, ২ ও ৩এই দশটি ব্লক সন্ত্রাস কবলিত থাকায় তাদের ভোটের হার কমেছে। জেলার বাকি ১৫টি ব্লকে তুলনায় স্বাভাবিক ভোট হওয়ায় কয়েকটি ব্লকে ভাল ফল হয়েছে। এর মধ্যে তৃণমূলের দখলে থাকা সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতি এ বার বামফ্রন্টের দখলে এসেছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মধ্যে বামেদের সব থেকে শোচনীয় ফল হয়েছে নন্দীগ্রামে। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের তিনটি জেলা পরিষদ আসনে ২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে বামেরা। তুলনায় কিছুটা ভাল ফল হয়েছে নন্দীগ্রাম ২ ব্লকে। সেখানে বামেরা পেয়েছে ৩৯.৮৫ শতাংশ ভোট। অন্য দিকে, তৃণমূল জেলায় গড়ে ভোট পেয়েছে প্রায় ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে প্রায় ৫৭ শতাংশ ও ২ ব্লকে প্রায় ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহির কথায়, “জেলার যে সব এলাকায় স্বাভাবিক ভাবে ভোট হয়েছে সেখানে আমাদের ভোট বেড়েছে। কেবল সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় ভোট কমেছে। নন্দীগ্রামেও সেই কারণেই ভোট কমেছে।” তিনি জানান, “ফলাফল পর্যালোচনা করে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” |
|
|
|
|
|