পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে পর্যালোচনা সিপিএমের
ভরাডুবিতে সাংগঠনিক দুর্বলতা দেখছে পশ্চিম
শুধু সন্ত্রাস নয়, সার্বিক ভাবে সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্যই সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের ভরাডুবি হয়েছে বলে মানছেন দলীয় নেতৃত্ব। শনিবার ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতের ফলাফল পর্যালোচনা করতে সিপিএমের বৈঠক হয় মেদিনীপুরে। এসেছিলেন প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী তথা দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরুপম সেন। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে নিরুপমবাবুই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত। দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার-সহ জেলা কমিটির সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে সকাল দশটা থেকে সন্ধে সাতটা পর্যন্ত ‘ম্যারাথন’ বৈঠক চলে। জানা গিয়েছে, নিজ নিজ এলাকার ফলাফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে অধিকাংশ নেতা স্বীকার করেন, অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের জন্য সাংগঠনিক দুর্বলতা অনেকাংশে দায়ী। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় দলের সংগঠন দুর্বল হয়েছে। দলের হয়ে কাজ করার লোক নেই। এই অবস্থা থেকে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব, বৈঠকে তা নিয়েও আলোচনা হয়।
সিপিএম নেতাদের একাংশের উপলব্ধি, মানুষ তৃণমূলের উপর এখনও আস্থা হারাননি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে তৃণমূল বলেছিল, যারা সরকারে আছে, তাদেরই সমর্থন করুন। তাহলে এলাকায় কাজ হবে। তৃণমূলের এই প্রচার মানুষের কাছে পৌঁছেছে। বৈঠক শেষে জেলা সিপিএমের এক নেতা বলেন “জেলার সর্বত্র সন্ত্রাসের আবহ ছিল না। তাই এই ফলের জন্য সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টিও অস্বীকার করা যায় না। কেউ যদি ভাবে ২০০৮ সালে দল যেমন ছিল, ২০১৩ সালেও তেমনই আছে, তাহলে বড় ভুল করবেন!” একদা ‘লালদুর্গ’ পশ্চিম মেদিনীপুরে সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে বামফ্রন্টের ভোট কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফ্রন্টের প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ৪৪ শতাংশ। সেখানে এ বার প্রাপ্ত ভোট ৩৪ শতাংশ। ৬৭টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে মাত্র ২টি ফ্রন্টের দখলে এসেছে। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে একটিও দখল করতে পারেনি। ফল যে এতটা খারাপ হতে পারে, তার আগাম আঁচও পাননি নেতৃত্ব। আর এখানেও প্রকট হয়েছে সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টিই। জেলা সিপিএমের এক নেতা আত্মসমালোচনা করে বলছেন, “সবচেয়ে নীচের তলার কমিটি অর্থাৎ, প্রাথমিক কমিটিকে জীবন্ত রাখা গেলে তবেই সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে সংযোগ থাকবে। তা না হলে এলাকার প্রকৃত পরিস্থিতি জানা যাবে না। অধিকাংশ প্রাথমিক কমিটিই তো নিস্ক্রিয়।”
বৈঠকে ঠিক হয়, নতুন কর্মীদের সংগঠিত করে তাঁদের আরও বেশি করে দলের কাজে লাগানো হবে। কর্মীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারেও বৈঠকে আলোচনা হয়। নীচুতলার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়। জেলা সিপিএমের এক নেতার কথায়, “আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। একটা সময়ে সন্ত্রাস-বিরোধী সংগ্রামে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদ সংগ্রামে সামিল হয়েছেন। তবে, সর্বত্র কর্মীদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক চেতনা সমান ছিল না। ফলে, সন্ত্রাস বিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কোথাও কোথাও বিরুপতা সৃষ্টি হয়েছে।” ঠিক হয়েছে, দলের মধ্যে শ্রেণি সামঞ্জস্য বাড়ানো হবে। দলের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো দ্রুত সংশোধন করা হবে। বৈঠক শেষে জেলা সিপিএমের এক নেতা মানছেন, “দলকে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে নীচুতলার মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিতেই হবে। পাশাপাশি, একটা সময়ে দলে সর্বক্ষণের কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু, সেই আহ্বান কতটা কার্যকরী করা গিয়েছে, তারও আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন।
না হলে পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হবে না!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.