সচেতনতা শিবিরে অভিজ্ঞতা শোনাল ছাত্রীরা
ভয় না পেয়ে আইনে আস্থা রাখো, পরামর্শ বিচারপতির
“বাবা- মা’ই আমাদের বড় করেন। তাঁরাই যদি সাবালক হওয়ার আগে বিয়ে দিয়ে দেন, কী করব?” প্রশ্ন এক স্কুলছাত্রীর। আর এক ছাত্রী বলে উঠল, “রাস্তায় বেরোলে কত ছেলে খারাপ কথা বলে। বিশ্রী ইঙ্গিত করে। আমরা কিছু করতে পারি না।” অন্য এক ছাত্রী সরাসরি আঙুল তুলল আইন-পুলিশি ব্যবস্থার প্রতি। বলল, “আইনের উপর আমার এতটুকু আস্থা নেই। পুলিশের কাছে গেলে সুবিচার মেলে না। অন্যায় করেও অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়।” ছাত্রীরা যখন এ সব বলছে, শ্রোতার আসনে তখন হাইকোর্টের বিচারপতি থেকে শুরু করে মেদিনীপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক সমর রায়, সিজেএম কল্লোল দাস প্রমুখ। সব শুনে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের মানসিক ভাবে দৃঢ় থাকার পরামর্শ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বললেন, “ভয় পেয়ো না। আইনের উপর আস্থা রাখো।” বস্তুত, এ দিন যে ভাবে স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা এগিয়ে এসে সকলের সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন, নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা সকলকে শুনিয়েছেন, তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বিচারপতিও। তাঁর মন্তব্য, “এত ছাত্রী এগিয়ে এসে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছে। আমরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছি।”
আইনি সচেতনতা শিবিরে নিজেদের সমস্যা জানাচ্ছে ছাত্রীরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
‘স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি’র পঞ্চম আঞ্চলিক সম্মেলন উপলক্ষে দু’দিনের আইনি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল মেদিনীপুরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে। শনি-রবি দু’দিনের শিবিরে দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বিচারকেরা সম্মেলনে যোগ দেন। অথরিটির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান তথা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন প্রমুখ। শনিবার দুপুরে এক আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী-সহ জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। কাজ করতে গিয়ে ঠিক কী কী সমস্যায় পড়তে হয়, পুলিশ-প্রশাসনের কর্মীরা তা জানান। বিচারকেরাও তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। আলোচনাসভায় মূলত তিনটি ঘাটতি উঠে আসে। এক, দফতরের পরিকাঠামো। দেখা যায়, প্রায় সব ক্ষেত্রে কর্মীর অভাব রয়েছে। দুই, সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার হার। ফলে, সর্বস্তরের মানুষ সে ভাবে সমাজ-সচেতন নন। এবং তিন, সরকারি দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয়। সমন্বয়ের অভাবের ফলেও অনেক সময় কাজ ব্যাহত হয়।
রবিবার সচেতনতা শিবিরে চার জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা এতে যোগ দেয়। ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, পণের দাবিতে অত্যাচার, যৌন নির্যাতন, কন্যাভ্রুণ হত্যা, বধূ নির্যাতন নানা প্রসঙ্গ আলোচনায় উঠে আসে। পুরুলিয়ার ডলি হাঁসদা, মেদিনীপুরের পায়েল সেন থেকে বাঁকুড়ার অঙ্কিতা শীট প্রমুখ স্কুলছাত্রী মঞ্চে এসে সকলের সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। বিচারপতিরা বলেন, “যারা এ সব কাজ করে, তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ। ভয় পেলে হবে না। তোমাদের মানসিক ভাবে দৃঢ় হতে হবে।” কিছু ছাত্রী অভিযোগ করে, অনেক সময় পুলিশ অভিযোগ নিতে চায় না। সে ক্ষেত্রে কী করব? বিচারপতির বক্তব্য, “এটা ঠিকই, অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগ নিতে চায় না বলে অভিযোগ ওঠে। কখনও জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ অভিযোগ নিতে না- চাইলে কোর্টে আসবে। কোর্ট পুলিশকে অভিযোগ নিতে বাধ্য করবে।” বিচারপতির কথায়, “পরবর্তীকালে শুনানি হবে। তবে, বক্তব্য জানানোর স্বাধীনতা সকলের আছে।” এমন শিবিরের ফলে ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন শিক্ষকেরা। শিবিরে উপস্থিত শালবনি থানার ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরী বলছিলেন, “স্কুলে স্কুলে এমন শিবির করা জরুরি। তাহলে ছাত্রীরা আরও সচেতন হবে। বুঝতে পারবে, বিভিন্ন ঘটনার ক্ষেত্রে কী ভাবে আইনি সহায়তা পেরে পারে।” মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার নয়াগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ সাঁতরার কথায়, “ছাত্রীরা নিজেদের সুরক্ষা-অধিকার নিয়ে শিবিরে বক্তব্য রেখেছে। নিজেদের কথা জানিয়েছে। এমন শিবিরের ফলে সচেতনতা বাড়বে। সকলে সচেতন হলে অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যাও কমবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.