সম্পাদকীয় ২...
ব্যবসার শর্ত
লিকাতার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সহিত রাজ্য সরকারের সওয়াল-জবাব শুরু হইয়াছে। সরকারের বক্তব্য, এই হাসপাতালগুলির জন্য সরকার কম দামে জমির ব্যবস্থা করিয়াছিল, কথা ছিল সেখানে দরিদ্রের চিকিৎসার জন্য শয্যা সংরক্ষণ করা হইবে অথবা লাভের অংশ সরকারকে দিতে হইবে, কিন্তু অনেকেই সেই শর্ত পালন করে নাই। সরকারের সতর্কবাণী: শর্ত না মানিলে লাইসেন্স বাতিল হইবে। কয়েকটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলিয়াছেন, তাঁহারা বাজারদরেই জমি কিনিয়াছিলেন, সুতরাং শর্ত তাঁহাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নহে। কাহারও বা বক্তব্য: তাঁহারা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সুপারিশে রোগীদের সুলভে চিকিৎসা করিয়া থাকেন, বিভিন্ন উপলক্ষে চাঁদাও দিয়া থাকেন, আবার বিশেষ সুবিধা দিতে হইবে কেন? হাসপাতাল বা নার্সিং হোমের নিরাপত্তা, বিশেষত অগ্নিনিরোধ বন্দোবস্ত লইয়া ইতিপূর্বে সরকার নির্দেশ জারি করিয়াছিল। সেই নির্দেশ যে নিছক কথার কথা নহে, তাহাও দেখা গিয়াছিল। এ বারেও সেই তৎপরতা দেখা যাইবে কি?
কোন হাসপাতালের ক্ষেত্রে কোন শর্ত প্রযোজ্য বা প্রযোজ্য নহে, কোন হাসপাতাল কোন শর্ত কতটা পালন করিয়াছে বা করে নাই, তাহার বিচার সরকারের কাজ। আশা করা যায়, সেই কাজ তাহারা নিষ্ঠা ও তৎপরতার সহিত সম্পাদন করিবে, বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া ঘটিবে না। অনেক বেসরকারি হাসপাতালকে কেন শর্ত পূরণের নির্দেশ হইতে ছাড় দেওয়া হইয়াছে, সেই প্রশ্নও উঠিয়াছে। কাহারও প্রতি যাহাতে কোনও পক্ষপাতিত্ব দেখানো না হয়, তাহা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য। এই রাজ্যে অনিয়মই দস্তুর, সুতরাং নিয়মের শাসন জারির এই উদ্যোগ বিশেষ আবশ্যক। জন-পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য যদি সুলভ জমির আয়োজন করিয়া বা অন্য উপায়ে সরকার বিশেষ সুবিধা দিয়া থাকে, তবে সেই প্রতিষ্ঠানে দরিদ্রের জন্য পরিষেবার বিশেষ সুযোগ সরকার চাহিতেই পারে। যে প্রতিষ্ঠান কোনও বিশেষ সুবিধা লয় নাই, বাজারদর মানিয়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সব কিছু করিয়াছে, তাহার ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য নহে। তবে ‘বাজারদর’ সত্যই বাজারদর ছিল কি না, আপাত-বাণিজ্যিক উদ্যোগে প্রচ্ছন্ন সরকারি সহায়তা বা ভর্তুকি নিহিত আছে কি না, তাহা বিচার করাও জরুরি।
অন্য দিকে, দরিদ্রের জন্য চিকিৎসা সংরক্ষণের যে শর্ত, তাহা পূরণের সুনির্দিষ্ট এবং সম্পূর্ণ স্বচ্ছ নীতি ও ব্যবস্থা থাকা দরকার। কোন হাসপাতালে দরিদ্রের জন্য কয়টি শয্যা সংরক্ষিত আছে, চিকিৎসার অন্য কী বিশেষ সুযোগ আছে, তাহা সকলকে জানানো দরকার, সেই সুবিধা বণ্টনে সমস্ত নিয়ম যথাযথ ভাবে অনুসরণ করা দরকার। কোন দরিদ্র (বা না-দরিদ্র) রোগী কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির সুপারিশে সুবিধা পাইয়াছেন, কোন ক্লাবের উৎসবে কত টাকা চাঁদা দেওয়া হইয়াছে, তাহা এ ক্ষেত্রে বিচার্য হইতে পারে না। সত্য, বেআইনি রাজনৈতিক প্রভাবের লীলা ব্যাপক এবং গভীর। সেই লীলা দমন করিতে রাজনৈতিক দল এবং সরকারের নিশ্চয়ই তৎপর হওয়া উচিত। অন্য দিকে, ইহাও অনস্বীকার্য যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই আইন-বহির্ভূত বন্দোবস্তের সুযোগ লইয়া থাকে। কিন্তু অন্যায়ের দায়ভাগ যাহার যতটাই হউক, কোনও অবস্থাতেই কেহ এই যুক্তি দিতে পারেন না যে, ‘আমরা তো চাপে পড়িয়া নানা সুবিধা দিয়া থাকি, তাহা হইলে আবার সুবিধা দেওয়ার নির্ধারিত শর্ত মানিব কেন?’ সরকার নীতি ও ব্যবস্থা পরিষ্কার করুক, অনেক আস্তাবল সাফ হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.