ষাটের দশকের মাঝামাঝি। যাদবপুরের একটি ক্লিনিক উদ্বোধন উপলক্ষে পাশ্বর্র্বর্তী ময়দানে ডা. বিধানচন্দ্র রায়, অতুল্য ঘোষ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত। ডা. রায়ের বক্তৃতা চলছে। এমন সময় তাঁর ব্যক্তিগত সচিব উপরে এসে নিচু স্বরে কিছু বললেন। ডা. রায় শ্রোতাদের উদ্দেশে দুঃখপ্রকাশ করে দু’এক মিনিটের জন্য নীচে নেমে কিছু একটা কাগজে লিখে তাঁর সচিবকে দিলেন এবং পুনরায় বক্তৃতা শুরু করেন। সচিব মহাশয় কাগজটি নিয়ে রাস্তার উল্টো দিকের একটি ওষুধের দোকানে দেখিয়ে পঞ্চাশ পয়সা মূল্যের দুটি ট্যাবলেট নিয়ে ফিরে গেলেন। দোকানের মালিক ক্ষণিকের জন্য কিংকর্তব্যহীন হলেও পুনরায় নিজের কাজে মন দিলেন। পর দিন বেলা ১০-১১টার সময় হঠাৎ তাঁর দোকানে একটা কালো অ্যাম্বাসাডর এসে দাঁড়াল। আর আগের দিনের সেই ভদ্রলোক দোকানে ঢুকে নিজের অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে ওষুধের দাম মিটিয়ে দেন। প্রসঙ্গক্রমে ভদ্রলোক বলেন যে, সে দিন সকালে ডা. রায় তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ওষুধের দাম মেটানো হয়েছিল কি না। তিনি না-বলাতে কিঞ্চিৎ ভর্ৎসনা করে তখনই ডা. রায় তাঁকে ওষুধের দাম মেটাতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। দোকানের মালিক পরে জানতে পারেন, উনি ডা. রায়ের গাড়ির চালক, আগের দিন হঠাৎ পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল।
প্রশান্তকুমার নাগ। কলকাতা-৪০
|
‘মুখ্যমন্ত্রী নিজের ক্ষতি করে চলেছেন’ (২-৭) সুবোধ সরকার লিখেছেন, ‘মাত্র তিনটে উপন্যাস লিখে পৃথিবী চমকে দিয়ে নোবেল পেলেও ...’ ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে আলবেয়ার কামু চারটি উপন্যাস লিখেছিলেন— A Happy Death, The Plague, The Stranger, এবং The Fall।
সুমিতা পানিগ্রাহী। কলকাতা-৩৭
|
রথীন্দ্রনাথের ডায়েরি ইংরেজিতেই লেখা? |
পুস্তক সমালোচনা বিভাগে ‘রথীন্দ্রনাথের ডায়েরি’ বিষয়ে একটি রিভিউ (‘আবার তিনি স্বভূমিতে ফিরছেন’, অনাথনাথ দাস, ২৭-৭) ছাপা হয়েছে। বইটির সম্পাদক ও সংকলক হিসাবে দুয়েকটি কথা জানাই। প্রথমেই বলতে হয়, এটি রথীন্দ্রনাথের কোনও বাংলা দিনলিপিকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা গ্রন্থ নয়। একটি সম্পূর্ণ ইংরেজি বই। দু’টি সামান্য ছোট অংশ বাদে এর পুরোটাই কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ স্বয়ং ইংরেজিতে লিখেছেন।
রবীন্দ্রভবনের সঙ্গে নিবিড় ভাবে যুক্ত ও এক সময়ের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শঙ্খ ঘোষ ১৯৯৬ নাগাদ এই ইংরেজি ডায়েরিগুলি আমাকে একত্র করে সংকলন করতে অনুরোধ করেন। তার পর এগুলি প্রয়োজনীয় ভূমিকা ও নোট-সহ বিশ্বভারতী রবীন্দ্রভবন থেকে প্রকাশিত ‘রবীন্দ্র বীক্ষা’য় ধারাবাহিক ভাবে আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে (১৪০৩ পৌষ থেকে ১৪০৭ শ্রাবণ পর্যন্ত মোট আটটি সংখ্যায়)। তখন ‘রবীন্দ্র বীক্ষা’র সম্পাদক ছিলেন বর্তমান আলোচক অধ্যাপক অনাথনাথ দাস। তবে তাঁর পরামর্শে ডায়েরির ভূমিকা ও নোটগুলি ‘রবীন্দ্র বীক্ষা’র চরিত্র অনুসারে বাংলায় লিখিত হয়েছিল। তাই এখন রথীন্দ্রনাথের ডায়েরি সম্পর্কে তাঁর মন্তব্যে আমি যারপরনাই বিস্মিত।
পরবর্তী কালে রথীন্দ্রনাথের ডায়েরি গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় ভূমিকা ও নোটগুলি নতুন করে আরও বিস্তারিত আকারে ইংরেজিতে লিখেছি। রথীন্দ্রনাথ উল্লেখিত অনেক ব্যক্তিনামের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিশের দশকে পিতার সফরসঙ্গী হিসাবে পুত্রের লেখা ডায়েরিতে বিদেশের মাটিতে নানান মানুষজনের সঙ্গে কবির যোগাযোগের বিচিত্র ঘটনার কথা বলবার চেষ্টা করেছি অথচ তা আশ্চর্য ভাবে আলোচকের চোখে একেবারেই পড়েনি। তিনি বইয়ের বিন্যাস ও অধ্যায়গুলি নিয়ে একটি কথাও বলেননি। বরং এই ডায়েরির সময়সীমা (১৯০৩ থেকে ১৯২৫ সাল) ও প্রেক্ষাপটের বাইরে কবিপুত্রের ব্যক্তিগত জীবনের নানা প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন শান্তিনিকেতনে ষাটের দশক থেকে বাস করার সুবাদে তা আমাদের অজানা নয়। কিন্তু এই আলোচনায় তা কতটা প্রাসঙ্গিক সে বিষয়ে তর্ক উঠতে পারে। অবশেষে পুনরায় বলি, এটি কোনও অনুবাদ গ্রন্থ নয় একটি স্বতন্ত্র ইংরেজি বই। আর রথীন্দ্রনাথের ডায়েরির ভাষার প্রাঞ্জলতা নষ্ট হওয়ার কোনও সুযোগ এখানে নেই। কারণ, এই ভাষা স্বয়ং কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের।
সুপ্রিয়া রায়। শান্তিনিকেতন
|
লেখকের উত্তর: দ্য ডায়েরিজ অব রথীন্দ্রনাথ টেগোর (কারিগর) সংকলন গ্রন্থটির আলোচনার কোনও কোনও প্রসঙ্গের প্রতিবাদ সম্পর্কে সংক্ষেপে কয়েকটি কথা জানাচ্ছি। এটি যে অনুবাদ তা তাঁর সম্পাদিত বই থেকেই সংকলন করছি
১) সূচনায় স্বীকৃতি অংশে ‘the notes and introduction were in Bangla and Susobhon Adhikari had been persuading me to re-do the whole thing in English for a wider readership. Being rather by nature...’
২) এর পর ভূমিকায় ...‘for this book the Bengali text has been translated into English.’ তা হলে কী করে লেখেন, এটি রথীন্দ্রনাথের কোনও বাংলা দিনপঞ্জিকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা গ্রন্থ নয়, এটি সম্পূণর্র্ ইংরেজি বই?
অন্যত্র আবার, ‘তবে অধ্যাপক দাসের পরামর্শে ডায়েরির ভূমিকা ও নোটগুলি রবীন্দ্র বীক্ষার চরিত্র অনুসারে বাংলায় লিখিত হয়েছিল’। গ্রন্থারম্ভে বা শেষে স্বীকৃতি থাকতে পারে। কিন্তু কোথাও তো শ্রীদাসের নাম নেই। এই স্মৃতি-নির্ভরতা হয়তো বিব্রত করে তোলে। পূর্বস্মৃতি আমার মনে থাকে কম; কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া। এ কথাও মনে রাখা দরকার, বইটি রথীন্দ্রনাথনির্ভর ব্যক্তিবিশেষের স্তুতিমূলক নয়। বিন্যাস ও অধ্যায়গুলি সম্পর্কে সূচনাতেই সাধুবাদ উচ্চারিত-- এ ছাড়া ছড়ানো আছে রথীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আলোচনার মধ্যেও। বার বার ব্যক্তিনাম ও প্রশংসা-অপ্রশংসা করা ব্যক্তিবিশেষের কাছে গ্রহণীয় না-ও হতে পারে। এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই সংকলন গ্রন্থ ও রথীন্দ্রনাথকে কোনও ব্যক্তিবিশেষকে আঘাত করা উচিত নয়, সেটা আমার স্বভাববিরুদ্ধ। রবীন্দ্রশতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ ‘বিশ্বযাত্রী রবীন্দ্রনাথ’ শিরোনামে একাধিক সুসম্পাদিত ও সুমুদ্রিত শোভন সংস্করণ প্রকাশ করে। এই গ্রন্থগুলি সুযোগ্য ব্যক্তিগণ সম্পাদনা করেছিলেন। আলোচ্য সংকলনে প্রকাশকের প্রচারলিপিতে (ব্লার্ব) দেখা যাচ্ছে, অনেকগুলি বই বর্তমান সংকলয়িতা অনুবাদ করেছেন। অনুবাদগুলি সব পড়া সম্ভব হয়নি। আশা করি, তিনি ঋণ স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি। |