সম্পাদকীয় ১...
পথ ছাড়িয়া দিন
শ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন যে স্পষ্টবাক, নানা উপলক্ষে তাহার প্রমাণ মিলিয়াছে। উপলক্ষগুলি সাধারণত প্রশাসন তথা রাজনীতি সংক্রান্ত। সম্প্রতি তাঁহার স্পষ্টভাষণের একটি দৃষ্টান্ত মিলিল অন্য উপলক্ষে। অন্য ভূমিকাতেও বটে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য হিসাবে ভাষণ দানের সময় নারায়ণন যাহা বলিয়াছেন তাহার মর্মার্থ: উপাচার্যরা সমাবর্তন সভায় আপন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উজ্জ্বল চিত্র আঁকিয়া থাকেন, কিন্তু তাহা সর্বদা বাস্তবসম্মত নহে, পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, বিশেষত বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়, পঠনপাঠনের মান ভাল বলা চলে না। এই রাজ্যে এবং রাজ্যের বাহিরে বৃহত্তর পরিসরে কর্মরত একাধিক বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ রাজ্যপালের মূল বক্তব্যটিকে সমর্থন করিয়াছেন। তাঁহাদেরও অভিমত, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষায়, বিশেষত বিজ্ঞানশিক্ষায় অনেক পিছনে পড়িয়া গিয়াছে এবং উত্তরোত্তর আরও পিছাইয়া পড়িতেছে। জগদীশচন্দ্র, সত্যেন্দ্রনাথ, প্রফুল্লচন্দ্র আজও প্রাতঃস্মরণীয়, সম্ভবত পরের শতাব্দীতেও তাঁহারাই প্রাতঃস্মরণীয় থাকিবেন।
আচার্য নারায়ণন কেবল সমস্যাটিই চিহ্নিত করেন নাই, তাহার প্রধান কারণটিও তিনি নির্দেশ করিয়াছেন। ভাল শিক্ষকের অভাব। শিক্ষার গুণমানকে সাধারণত পরীক্ষায় ও গবেষণায় ছাত্রছাত্রীদের কৃতিত্ব দিয়াই মাপা হয়। কৃতীর স্বীকৃতির অপর প্রান্তে থাকে অ-কৃতীদের গ্লানি। রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ায় পিছাইয়া পড়িতেছেন এই বাক্যটি একটি ঘটনাকে সূচিত করে, কিন্তু মানুষ তাহার একটি অর্থও মনে মনে তৈয়ারি করিয়া লয়: ভাল ছাত্রছাত্রী পাওয়া যাইতেছে না, কিংবা যাঁহারা ভাল তাঁহারা উচ্চশিক্ষায় আসিতেছেন না। ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য এবং ব্যর্থতার দায় তাঁহাদের উপর আরোপিত হয়। নারায়ণন শিক্ষকদের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া সেই প্রবণতার কিছুটা সংশোধন করিয়াছেন। শিক্ষার সমস্ত স্তরেই শিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সেই ভূমিকা যতটা সহজবোধ্য, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে হয়তো ততটা নহে, কারণ তখন পড়ুয়ারা বড় হইয়া গিয়াছেন। কিন্তু সেই স্তরেও শিক্ষকের গুরুত্ব কোনও অংশে কম নয়, বরং এক অর্থে বেশি তখন কেবল ছাত্রছাত্রীকে হাঁটিতে বা দৌড়াইতে শিখাইলেই চলে না, তাহার মনের গতি বুঝিয়া তাহাকে পথের সন্ধান দেওয়াই তখন শিক্ষকের কাজ। কঠিন কাজ।
কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেকেই এই কাজটিতে ব্যর্থ হইতেছেন, তাহার অনেক কারণ থাকিতে পারে। তবে পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞতা একটি কারণকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করে। শিক্ষার পরিসরে দলীয় আনুগত্যের অনুশীলন। দীর্ঘ বামফ্রন্ট জমানায় এই অনুশীলন ক্রমশই জোরদার হইয়াছে। আনুগত্য উৎকর্ষকে বিনাশ করে, অথবা বিতাড়ন করে। পশ্চিমবঙ্গের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হইতে উৎকৃষ্ট শিক্ষকরা ক্রমে বিতাড়িত হইয়াছেন অথবা সরিয়া গিয়াছেন। আনুগত্য মধ্যমেধাকে লালন করে এবং তাহার দ্বারা লালিত হয়। মধ্যমেধা স্বভাবত নিম্নগামিনী। পশ্চিমবঙ্গের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যমেধা উত্তরোত্তর নিম্নমেধাকে স্থান ছাড়িয়া দিয়াছে। শাসক পরিবর্তনের পরেও যে সেই প্রবণতার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটিয়াছে, দলতন্ত্রের প্রভাব সমূলে বিনাশ করা হইয়াছে, এমনটা বলা যাইবে না আরাবুল ইসলামরা এখনও বিদ্যায়তনে বীরবিক্রমে ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে, যেমন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিছু পরিবর্তনের সুসংকেত মিলিয়াছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাজগতের মানুষদের ভূমিকাকেই কিছুটা প্রাধান্য দেওয়া হইয়াছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী নারায়ণনের অভিমত ‘গভীর ভাবে’ ভাবিয়া দেখিতে চাহেন। গভীর ভাবনা সতত স্বাগত। তবে যদি তাহা সম্ভব না-ও হয়, ক্ষতি নাই, কেবল শিক্ষায় আলিমুদ্দিনের পথটি ছাড়িলেই রাজ্যের মঙ্গল হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.