দুর্ভোগ, তবু ভিড় হাজারদুয়ারিতে
তিন দিনের জন্য সপরিবার লালবাগে বেড়াতে এসেছেন যাদবপুরের সৌমেন নন্দী। তাঁর কথায়, “পরিবারের অনেকেই আবদার করেছে মুর্শিদাবাদ সিল্ক বা খাগড়ার কাঁসার বাসন নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেই সব জিনিস ঠিক দামে কোথা থেকে কিনব তা জানতে হয়রান হলাম।” পর্যটন দফতরের তথ্য সহায়তা কেন্দ্র নেই কেন সেই আক্ষেপ ঝরে পড়ে তাঁর কথায়।
দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা দিশারী ভট্টাচার্যও এসেছেন লালবাগে ঘুরতে। তাঁর কথায়, “লালবাগে তেমন কোনও মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যার পরে হোটেলের ঘরে টিভি দেখে কাটানোটা খুব বিরক্তির। হাজারদুয়ারিতে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড থাকলে ভাল হতো।”
বৃষ্টির মধ্যেও হাজারদুয়ারি মিউজিয়ামের কাউন্টারের সামনে টিকিটের জন্য পর্যটকদের লম্বা লাইন। ঈদ উপলক্ষে পর্যটকদের সংখ্যা গত দু’দিনে বেড়েছে। হাজারদুয়ারি প্রাসাদ ও মিউজিয়াম দেখতে শনিবার প্রায় ২০ হাজার দর্শক-পর্যটক ভিড় করেন। রবিবারের বৃষ্টি উপেক্ষা করে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতি বছর পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটছে কি?
পর্যটকদের ভিড় হাজারদুয়ারিতে। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি অজয় সিংহ বলেন, “লালবাগের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন হোটেল, পরিবহণ সংস্থা, অটো-টাঙ্গা চালক, মুর্শিদাবাদ সিল্ক, খাগড়ার কাঁসা-শোলা-দারুশিল্প ছাড়াও মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। পর্যটন মরসুমে কত পর্যটকদের সংখ্যার উপরেই নির্ভর করছে ওই সব শ্রেণির মানুষের রোজগার। কিন্তু পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকার বা প্রশাসনের কোনও ভাবনা-চিন্তা নেই।” অজয়বাবুর অভিযোগ, “সবচেয়ে আগে প্রয়োজন জেলার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন। রাস্তার সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। আবার পর্যটক দেখলেই অনেক সময়ই অটো-রিকশা চালকরা চড়া দরে ভাড়া আদায় করেন। তারও সমাধান দরকার।”
ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে খোশবাগ থেকে রানি ভবানির মন্দির-সহ বিভিন্ন স্মারক ঘুরে দেখার জন্য যথাযথ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি এখনও। নেই অন্যান্য জরুরি পরিষেবাও। লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “অনেক জায়গায় শৌচাগার বা পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে অনেক সময়ই সমস্যায় পড়েন মানুষ। প্রশাসন সব অসুবিধার কথা জানলেও কিছুই তো ব্যবস্থা করেনি।” যানজট নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পুলিশি উদাসীনতার অভিযোগও তোলেন তিনি।
হাজারদুয়ারি মিউজিয়ামের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুরাতত্ত্ববিদ নয়ন চক্রবর্তী বলেন, “বিভিন্ন পরিষেবার অভাব থাকা সত্ত্বেও পর্যটকরা প্রতি বছর লালবাগে ভিড় করেন। তাঁরা আসেন মূলত হাজারদুয়ারি, কাটরা মসজিদ বা সিরাজ-উদ-দৌলার সমাধি দেখার টানেই। সঠিক পরিষেবা দেওয়া হলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। এতে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পেশার মানুষ উপকৃত হবেন। জেলার অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে।” পরিকাঠামোর উন্নয়নে কী ব্যবস্থা করছে প্রশাসন? লালবাগের মহকুমাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষ এই বিষয়ে বলেন, “পরিকাঠামোগত যে অভিযোগ রয়েছে, পর্যটন মরসুম শুরুর আগে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হবে। আশা করি অগস্ট মাসের শেষে বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে সেই বৈঠক করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.