কাদায় আটকাচ্ছে ভাল ফুটবল
কোথাও বড় বড় ঘাসে ভরে গিয়েছে মাঠ। কোথাও আবার বল দখল করতে গেলে পায়ে বিঁধছে চোরকাঁটা। অনেক জায়গায় ঘাসের ফাঁকে লুকিয়ে গর্ত। বেকায়দায় পা পড়লেই বেশ কয়েক দিন মাঠের বাইরে থাকা প্রায় নিশ্চিত। মাঠের মাঝে থকথকে কাদায় বল পড়লে তো আর কথা নেই। রীতিমতো কসরত করে সেখান থেকে বল উদ্ধার করতেই খেলোয়াড়দের অর্ধেক শক্তি নিঃশেষ।
অগস্টের মাঝামাঝি থেকে এই রকম মাঠেই শুরু হতে চলেছে আসানসোলের ফুটবল লিগ। সে কারণে সরব হয়েছে নানা ফুটবল সংস্থা। মাঠ খেলার উপযোগী করে তোলা না হলে সেরা দল না নামানোর ভাবনা-চিন্তা করা হবে বলেও জানিয়েছে অনেকে। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার অবশ্য আশ্বাস, প্রয়োজন মতো মাঠ সংস্কার করা হবে।
আসানসোলে আইএফএ অনুমোদিত ঘরোয়া ফুটবল লিগের সুপার ডিভিশনে এ বার ১৬টি দল খেলবে। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ১১টি মাঠে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলাগুলি হবে। এর মধ্যে বার্নপুরের ইস্কো স্টেডিয়ামের মাঠ ও পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের মাঠ দু’টি খেলার উপযোগী অবস্থায় রয়েছে। ওই দুই সংস্থার ক্রীড়া বিভাগ নিজেরাই মাঠের দেখভাল ও পরিচর্যা করেন। বাকি মাঠগুলির মধ্যে আসানসোল স্টেডিয়াম, বেলরুই, মিঠানি, ডিসেরগড়, সোদপুর ও মানিকচাঁদ স্কুলের মাঠ খেলার উপযুক্ত নয় বলেই মনে করেন নানা ক্লাবে ও সংস্থার কোচ-কর্মকর্তারা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আসানসোল স্টেডিয়ামের। চোরকাঁটা, বড় ঘাস, গর্তের কারণে খেলোয়াড়েরা ঠিক মতো দৌড়তে পারেন না। বৃষ্টি হলে কাদায় বল আটকে যায়। শরীর ও বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না ফুটবলারেরা।

আসানসোল স্টেডিয়ামে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।
এই পরিস্থিতিতে মহকুমার ফুটবল দলগুলি ঘরোয়া লিগে তাদের সেরা খেলোয়াড়দের নামাতে খানিকটা গররাজি। কোচ, কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, লিগ ছাড়াও তাঁদের সারা বছর নানা প্রতিযোগিতা খেলতে হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই, ভিন্ রাজ্যেও তাঁরা একাধিক টুর্নামেন্ট খেলতে যান। সেই সব প্রতিযোগিতায় বাছাই করা সেরা ফুটবলারদের খেলাতে বেশি আগ্রহী দলগুলি। কিন্তু ঘরোয়া লিগে খারাপ মাঠে খেলোয়ারদের চোট-আঘাত লাগার সম্ভাবনা প্রবল। আর চোট পেয়ে কোনও ভাল খেলোয়াড় দলের বাইরে চলে গেলে টুর্নামেন্ট জেতা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বাছাই খেলোয়াড়দের এই খারাপ মাঠে নামাতে চান না বলে দাবি কর্মকর্তাদের। ফলে, ঐতিহ্যবাহী আসানসোলের ফুটবল লিগ জৌলুসহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেলের ফুটবল বিশেষজ্ঞ তথা ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “খারাপ মাঠের জন্য খেলোয়াড়েরা নিশ্চিন্তে খেলতে পারছেন না। খেলার মানও ভাল হচ্ছে না। তাই মাঠে দর্শকও আসছেন না।” তাঁর প্রস্তাব, শিল্পাঞ্চলের রাষ্ট্রীয় ও বড় বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে ফুটবল মাঠগুলি সংস্কারের জন্য আবেদন করা যেতে পারে। পূর্ব রেলের ডিভিশনাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সমীর রায় জানান, দিন সাতেক আগে আসানসোল স্টেডিয়ামে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালিত একটি টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে তাঁর দলের এক ভাল ফুটবলার গুরুতর চোট পান। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ বছর তিনি আর খেলতে পারবেন না। সমীরবাবু বলেন, “এর পরে লিগে ভাল খেলোয়াড় নামাতে ভরসা পাচ্ছি না। মাঠগুলির সংস্কার খুব জরুরি।” বার্নপুর ইস্কোর ফুটবল দলের কোচ রবিশঙ্কর দাস আবার মনে করেন, মাঠের অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা ভাল হলেও খেলার মান বাড়াতে আরও উন্নত করা দরকার।
আসানসোল স্টেডিয়াম-সহ বিভিন্ন মাঠগুলি খেলাধুলোর জন্য যে বিশেষ উন্নত নয়, তা স্বীকার করেন মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল সম্পাদক দেবপ্রসাদ সরকার। তিনি বলেন, “আমরা মাঠগুলিকে খেলার উপযোগী করে তুলতে চেষ্টা করছি।” তিনি জানান, আর্থিক সমস্যাই বড় বাধা। কী ভাবে তা মেটানো যায়, সর্বস্তরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অমল সরকার আবার বলেন, “সারা বছর যে ভাবে মাঠের উপরে চাপ পড়ে তাতে আসানসোল স্টেডিয়াম তো খারাপ হবেই। এই মাঠকে রক্ষা করতে আমরা নির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি।” লিগ শুরুর আগে মাঠের সংস্কার করে দেওয়া হবে, আশ্বাস তাঁর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.