গ্রামের একদিকে ঝলমলে আলো অন্যদিকে আঁধার। এক অংশে বহু দিন আগেই বিদ্যুৎ এসে গিয়েছে, আর অন্য অংশে সার সার দাঁড়িয়ে তারবিহীন খুঁটি। বুদবুদের দেবশালা গ্রামের নতুনবাঁধ এলাকা আজও পড়ে অন্ধকারেই। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, বছরখানেক আগে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থও জমা দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বিদ্যুৎ আসেনি।
বাসিন্দারাই জানান, দেবশালা গ্রামের সব পাড়াতেই বহুদিন আগে থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু নতুনবাঁধ। আদিবাসী অধ্যুষিত এই পাড়ায় ৩০টি পরিবার বাস করেন। তাঁদের অভিযোগ, একই গ্রাম অথচ সন্ধ্যা নামলেই আঁধারে দিন কাটান তাঁরা। এলাকারই একজন গুপিন মুর্মু জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়ে দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, এলাকায় অন্তত ১০ জন গ্রাহক দরকার। |
পড়াশোনার জন্য এখনও ভরসা লণ্ঠনের আলো। |
গুপিনবাবু বলেন, “আমরা তার থেকেও বেশি সংখ্যক পরিবার ৭২০ টাকা করে জমা দিয়েছিলাম। কিছুদিন পরে বিদ্যুতের খুঁটিও পোঁতা হয়। কিন্তু ওই টুকুই। বিদ্যুতের দেখা মেলেনি আজও।” তাঁর দাবি, বিদ্যুৎ দফতরে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গেলে বলা হয়, এখন তার নেই, তার এলেই বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই আশ্বাস পূরণ হয়নি এখনও। গ্রামের মোহন মূর্মূ, কবিরাজ মাড্ডিরা বলেন, “একই গ্রামের অংশ হয়েও আমরা এখনও অন্ধকারে পড়ে আছি। সন্ধ্যা নামলে গ্রামের বাকি অংশ বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করে। আর আমরা হ্যারিকেনের আলোয় ঘরে বসে থাকি।” তাঁদের আরও অভিযোগ, একে তো সংস্কারের অভাবে এলাকার রাস্তাঘাট বেহাল। তার উপর বর্ষায় সেই রাস্তার আশপাশ জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। ফলে বিদ্যুতের আলো না থাকায় রাতে আতঙ্কে ভুগছেন তাঁরা। |
বেশ কয়েক মাস আগে খুঁটি পোঁতা হলেও তার, ট্রান্সফর্মারের দেখা নেই। |
নতুনবাঁধে একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র আছে। এলাকার অনেক ছেলেমেয়ে সেখানে পড়াশোনা করে। স্থানীয় সোহাগী মাড্ডি, মাইনো মাড্ডিরা জানান, তাঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা অনেকে দেবশালা উচ্চ বিদ্যালয়েও পড়তে যায়। অথচ রাতে পড়াশোনা করার একমাত্র ভরসা হ্যারিকেন অথবা লন্ঠন। তাঁদের আক্ষেপ, রেশনে যে পরিমাণ কেরোসিন তেল মেলে তাতে সারা সপ্তাহ চলে না। তেলের অভাবে প্রয়োজন মতো হ্যারিকেন বা লন্ঠন জ্বালানো যায় না। ফলে বিঘ্ন ঘটে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায়। অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়া শ্রীমতি মাড্ডি বলে, “দিনে স্কুলে যাই। রাতে হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করি। কিন্তু তেলের অভাবে মাঝে মধ্যেই পড়াশোনা বন্ধ রাখতে হয়।”
নতুনবাঁধের এই সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দেবশালার নবনির্বাচিত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য শ্যামল বক্সি জানান, কেন এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও আসেনি সে বিষয়ে তাঁরা খোঁজখবর করবেন। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সংযোগের চেষ্টা করা হবে। |