চার-চারটি নিম্নচাপের হাত ধরে রাজ্যের কৃষিপ্রধান জেলাগুলিতে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে বর্ষা। এমন মেজাজ বজায় থাকলে অগস্টের মাঝামাঝি বীরভূম, নদিয়া, বর্ধমানের মতো কৃষিপ্রধান জেলায় বর্ষার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেই আবহবিদদের আশা। তবে কৃষি-আবহবিজ্ঞানীদের এখনও চিন্তায় রেখেছে মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ওই দুই জেলায় এখনও অনেকটাই বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু এ বছর বর্ষা যেমন মেজাজে রয়েছে, তাতে ওই জেলাগুলিতেও আগামী কয়েক দিনে বৃষ্টির ঘাটতি কমতে পারে বলে আবহবিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
বুধবার স্থলভূমিতে ঢোকা নিম্নচাপটি উত্তরপ্রদেশ ও সংলগ্ন মধ্যপ্রদেশে চলে গেলেও তার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের উপরে মৌসুমি অক্ষরেখা সক্রিয় রয়েছে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে হওয়া একটি নতুন ঘূর্ণাবর্ত-ও। নিম্নচাপ, ঘূর্ণাবর্ত ও মৌসুমি অক্ষরেখার ত্র্যহস্পর্শেই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার মেজাজ চড়তে পারে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ শনিবার বলেন, “আপাতত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি চলবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।” সকালে মধ্য-পূর্ব কলকাতার কোনও কোনও এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হয়েছে জেলাতেও।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ১ জুন অর্থাৎ বর্ষার মরসুমের শুরু থেকে ৭ অগস্ট পর্যন্ত হিসেবে রাজ্যেই গড়ে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। তবে জেলাওয়াড়ি হিসেবে মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে অনেকটাই ঘাটতি রয়েছে। বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়াতেও বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কিছু কম। আবহবিদদের একাংশের মতে, ওই জেলাগুলিতে বর্ষার ঘাটতির পিছনে দায়ী জুলাইয়ের গোড়ার অনাবৃষ্টি। যার ফলে কপালে ভাঁজ পড়েছিল কৃষি বিশেষজ্ঞদের। এক কৃষি-আবহবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘রাজ্যের কৃষি মানচিত্রে বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া গুরুত্বপূর্ণ। ওই জেলাগুলিতে স্বাভাবিক বর্ষা না হলে আমন ধান চাষ ব্যাহত হতে পারে।” সে আশঙ্কা অনেকটাই কাটিয়েছে জুলাইয়ের শেষ থেকে টানা দশ দিনের বর্ষার ঝোড়ো ব্যাটিং। আবহবিদেরা জানান, দশ দিনে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে চার-চারটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। যার জেরে যেমন পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো উপকূলীয় জেলা বৃষ্টি পেয়েছে, তেমনই বেশির ভাগ নিম্নচাপ ওড়িশা হয়ে স্থলভূমিতে ঢোকায় ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিও বৃষ্টি পেয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, গত ক’দিনের বৃষ্টিতে বর্ধমান, বীরভূমে বর্ষার ঘাটতির পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। উত্তরবঙ্গের মালদহ, উত্তর দিনাজপুরেও ভাল বৃষ্টি হয়েছে। কৃষি দফতরের কর্তাদের দাবি, রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই ধানের চারা রোয়ার কাজ চলছে। বৃষ্টির ফলে রোয়ার কাজে সুবিধা মিলছে। আমন ধানের চারা রোয়ার সরকারি সময়সীমা ১৫ অগস্ট। কৃষি-কর্তাদের আশা, বর্ষার এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে সব জেলায় চারা রোয়ার সুযোগ মিলবে। কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, বর্ধমানে প্রায় ৭০% জমিতে ধানের চারা রোয়া হয়ে গিয়েছে। |