বাছাই করা ৩৯টি স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে পঠন-পাঠন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। ঠিক হয়েছিল এক-একটি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমের জন্য গড়ে চার জন করে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার প্রায় তিন বছর কেটে যাওয়ার পরেও ইংরেজি মাধ্যমের জন্য স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় পঠনপাঠন চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে স্কুলগুলি।
সমস্যার কথা পৌঁছেছে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কানেও। তিনি বলেন, “এই স্কুলগুলোতে শিক্ষকের সমস্যা আছে বলে আমরা জানি। শিক্ষকের অভাবে কোনও স্কুলেই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা বন্ধ হবে না। স্কুল সার্ভিস কমিশনের এ বারে যে পরীক্ষা হয়েছে, তা থেকেই ওই স্কুলগুলির জন্য শিক্ষক বেছে নেওয়া হবে।”
২০১০-এর গোড়ায় ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালাতে আগ্রহী সরকারি অনুদান পাওয়া স্কুলগুলিকে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন করতে বলা হয়। আবেদনপত্রগুলি খতিয়ে দেখে এবং স্কুলগুলির পরিকাঠামো সরেজমিন পরিদর্শন করার পরেই স্কুল শিক্ষা দফতর উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ৩৯টি স্কুলকে বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে পঠন-পাঠন চালানোর অনুমতি দেয়। স্কুলগুলি পঠনপাঠন চালু করলে স্কুল শিক্ষা দফতর নিজে থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কাছে ইংরেজি মাধ্যমকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য আবেদন করে। সংসদ প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিয়ে দেয়।
২০১০-এর ২০ অগস্ট সংসদ ৩৯টি স্কুলের কর্তৃপক্ষকে বৈঠকে ডাকে। সেখানে তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালাতে গেলে কত জন করে শিক্ষক লাগবে। আলোচনার পরে ঠিক হয়, প্রতিটি স্কুলের জন্য গড়ে চার জন করে শিক্ষক দেওয়া হবে। সংসদ প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন জানায়। সংসদের কাছ থেকে এই আবেদন পাওয়ার পরে স্কুল শিক্ষা দফতর পদগুলিতে নিয়োগ অনুমোদন করে। একই সঙ্গে স্কুল শিক্ষা দফতর প্রতিটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়, তাঁরা যেন প্রয়োজনীয় শিক্ষক চেয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শকের মাধ্যমে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে আবেদন জানান। হাওড়ার পাঁচলার গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন বিভাগ চালু করার জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ তৈরি করতে হয়েছে। সরকারি অনুদান মেলেনি। পাওয়া যায়নি ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালানোর জন্য স্থায়ী শিক্ষক। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে সন্তোষ দাস বলেন, “আমাদের ইংরেজি মাধ্যমের জন্য চার জন শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দেয় স্কুল শিক্ষা দফতর। আমরা জেলা স্কুল পরিদর্শকের মাধ্যমে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে শিক্ষক চেয়ে আবেদন করি। কিন্তু এখনও শিক্ষক পাইনি।” তিনি জানান, অস্থায়ী ভাবে শিক্ষক নিয়োগ করে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠ ন চালাতে হচ্ছে। তাঁর ক্ষোভ, “এক বার শিক্ষক চেয়ে আবেদন করলে তিন বছর পর্যন্ত সেই আবেদন কার্যকর থাকে। আমাদের স্কুলের ক্ষেত্রে তিন বছরের মেয়াদ শেষ হতে আর দেরি নেই। তার মধ্যে যদি শিক্ষক না পাই ফের পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে। বিষয়টি জটিল হয়ে যাবে।” এ প্রসে ঙ্গ স্কুল শিক্ষা দফতরের সচিব অর্ণব রায় বলেন, “ওই স্কুলগুলিতে কেন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, খোঁজ নিয়ে দেখব।”প্রথম বছরে পাঁচলার স্কুলটিতে ইংরেজি মাধ্যমে ১৯ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিল। রীতিমতো বাছাই করা পড়ুয়াদেরই নেওয়া হয়েছিল বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি। ২০১২ সালে প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দেয়। ১৮ জন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। সন্তোষবাবু বলেন, “পরবর্তীকালে আমরা ইংরেজি মাধ্যমে বেশি ছাত্রছাত্রী পাইনি। আমাদের ধারণা, ইংরেজি মাধ্যমের জন্য স্থায়ী শিক্ষক না থাকাই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। নিজেদের উদ্যোগে কোনও মতে পঠনপাঠন চালানো হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে তো চলতে পারে না।” প্রায় একই বক্তব্য উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজি মাধ্যম চালু করা বেশির ভাগ স্কুলের। |