লোকসভা ভোট আসন্ন। তার আগে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামোন্নয়নের জন্য এক ধাক্কায় ১৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্পে অনুমোদন দিল কেন্দ্রের মনমোহন সিংহ সরকার।
পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হতে না হতেই গত ৩১ জুলাই রাজ্যের গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ খাতে ৫২৩ কোটি টাকার প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়েছিল ইউপিএ সরকার। আজ আবার একই খাতে আরও ৮২২ কোটি টাকার প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হল। মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে গৃহীত এই দুই সিদ্ধান্তের কথাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
আপাত ভাবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক ঠিকই। কিন্তু সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সাফল্য এবং কংগ্রেসের ফলাফল বিচার করে এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মধ্যেও রাজনীতি দেখছেন অনেকে। যদিও এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সনিয়া-রাহুল ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা জয়রাম বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের কারণে নির্বাচনী আচরণবিধি বলবৎ ছিল রাজ্যে। সেই কারণে কেন্দ্র কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেনি। ভোট শেষ হতেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জানানো হল রাজ্যকে।” পাশাপাশি জয়রামের এ-ও বক্তব্য, “এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছি, উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার সংকীর্ণ রাজনীতি করে না। আজও সেই কথাই বলব।” রাজনৈতিক বার্তার প্রসঙ্গটি জয়রাম এড়াতে চাইলেও কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের অনেকের মত, রাজনীতিতে কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলই দেখিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের রাজনৈতিক দাপট কতটা। কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতার ছবিটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। লোকসভা ভোট পর্যন্ত রাজ্যে রাজনৈতিক শক্তির বিন্যাস যদি এমনই থাকে, তা হলে কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই তৃণমূল এখনকার থেকে বেশি আসন পেতে পারে। বরং আসন কমতে পারে কংগ্রেসের।
তাঁর এই বক্তব্যকে আরও বিশ্লেষণ করে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের ওই নেতা বলেন, এটা ঠিকই যে রাজ্যে অধিকাংশ কংগ্রেস নেতাই তৃণমূলের সঙ্গে জোট চান না। তাঁদের যুক্তি, জোট হলে তৃণমূল আসন বাড়িয়ে নেবে। তুলনায় কংগ্রেসের আসন বাড়বে না। উল্টে ভোটের পর বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে পারে তৃণমূল। কিন্তু কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের মতে, পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের পর রাজ্য কংগ্রেসের সেই বক্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। তাঁদের আশঙ্কা, তৃণমূল একার ক্ষমতায় আসন বাড়িয়ে ফেললে কংগ্রেস রাজ্যে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে। অনেকের মতে, বিজেপি যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে নরম মনোভাব নিয়ে চলছে, তখন তৃণমূল নেত্রীকে এ ভাবেই বার্তা দিতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সাম্প্রতিক কালে কামদুনি কাণ্ড থেকে শুরু করে একাধিক ঘটনা নিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূলের সমালোচনা হলেও, বিজেপি নেতৃত্ব কৌশলে নীরবতা বজায় রেখেছেন। কাল কলকাতা যাওয়ার কথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা বরুণ গাঁধীর। কিন্তু সূত্রের খবর, তৃণমূলের সমালোচনা থেকে তাঁকে বিরত থাকার ব্যাপারেই পরামর্শ দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এই অবস্থায় কংগ্রেসের তরফেও তৃণমূলকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। গত ৩১ জুলাই সার্বিক ভাবে রাজ্যের জন্য ৫২৩ কোটি টাকার গ্রাম সড়ক প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়েছিল কেন্দ্র। এর মধ্যে দার্জিলিংয়ের জন্য ৩০ কোটি টাকার প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়। আর আজ বাঁকুড়ার জন্য প্রায় ২৮০ কোটি টাকা, পুরুলিয়ার জন্য প্রায় ৪১ কোটি টাকা, এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য ৫০১ কোটি টাকার প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, কংগ্রেস মুখপাত্র মীম আফজল আজ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় স্বাভাবিক নিয়মেই কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে এখনই জোট বার্তা খোঁজাটা অর্থহীন। বরং কেন্দ্র যে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কী ভাবে এবং কতটা অর্থ বরাদ্দ করছে, তা নিয়ে রাজ্য কংগ্রেস নেতারাও এখন প্রচার করতে পারবেন।” |