সারদা-ধাঁচে ফের প্রতারণা রাজ্যে। একই রকম ভাবে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে প্রাপকদের প্রাপ্য না মিটিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া। তবে এ বার পুঁজি স্বল্প সঞ্চয় নয়। শিক্ষা।
সারদা-কান্ডের সুদীপ্ত সেন-দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের মতোই এ বার সুব্রহ্মণ্যম আর এবং রমা দুবে ‘এ টু বি টিউটোরিয়াল’ নামে একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সামনে রেখে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা ওই টিউটোরিয়ালের ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়ার বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ লক্ষ করে টাকা নিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী, টিউটোরিয়াল চালু হওয়ার পর ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ছিল সুব্রহ্মণ্যমের। কিন্তু তা তিনি দেননি।
টিউটোরিয়ালে পড়ানোর জন্য রীতিমতো ইন্টারভিউ নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। তাঁদের নিয়োগ পত্রও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের কেউ কেউ কয়েক মাস প্রতিশ্রুত অর্থ পেলেও বাকিরা এক বারও তা পাননি। শিক্ষকদের বেতন বন্ধ মে মাস থেকে। প্রথম দিকে সুব্রহ্মণ্যমের তরফে প্রাপ্য মেটানোর আশ্বাস দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ২২ জুলাইয়ের পর থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক এবং শিক্ষকরা। বেনিয়াপুকুর থানা এলাকায় ১৮৭, পার্ক স্ট্রিটের সুরাইয়া কোর্টে ওই টিউটোরিয়ালের প্রধান কার্যালয় ছিল। ভুক্তভোগীরা ২২ জুলাই সেখানে গিয়ে দেখতে পান, দরজায় তালা ঝুলছে।
বেনিয়াপুকুর থানায় সুব্রহ্মণ্যমের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন আট শিক্ষক। তাঁদের অভিযোগ, টিউটোরিয়ালের প্রশাসনিক পদাধিকারী রমা দুবে এবং সুব্রহ্মণ্যমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুরজিৎ রায় ও কুশলজিৎ চক্রবর্তীর সাহায্যেই প্রতারণা হয়েছে। এক শিক্ষক আক্রম বাকশের অভিযোগ, “রমা দুবের সঙ্গে সুব্রহ্মণ্যমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে রমা টিউটোরিয়ালের হর্তাকর্তা হয়ে ওঠেন। এখন দু’ জনেই বেপাত্তা।” তিনি জানান, গত এক বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে পার্ক স্ট্রিট, শিয়ালদহ, পিকনিক গার্ডেন, বেহালা, বাটানগর, হাওড়া-সহ রাজ্যের নানা জায়গায় ওই টিউটোরিয়ালের ৩২টি কেন্দ্র খোলা হয়। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপন দেখেই শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা আগ্রহী হন।
টিউটোরিয়ালের পিকনিক গার্ডেনের কেন্দ্রটির তরফে বর্ণিকা রায় জানান, তাঁদের কেন্দ্র চালু হয়েছিল এপ্রিল মাসে। ৩০ লক্ষ টাকা সুব্রহ্মণ্যমকে দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী, একটি মাসেও ১ লক্ষ টাকা পাননি। শিক্ষকরা ২৭ মে এক বার আংশিক বেতন পেয়েছিলেন। তার পর আর বেতন পাননি তাঁরা। বর্ণিকাদেবী বলেন, “মাঝখান থেকে পড়ুয়ারা মুশকিলে পড়ে গেল!” পড়ুয়াদের স্বার্থে নিজেরাই টিউটোরিয়ালটি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু এ ভাবে কতদিন চালানো যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে তাঁর।
ডিসি (ইএসডি) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরে স্থানীয় স্তরে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।” অভিযোগ প্রসঙ্গে সুব্রহ্মণ্যম, রমা, সুরজিৎ এবং কুশলজিতের প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁদের মোবাইলে ফোন করা হয়। কিন্তু প্রত্যেকের ফোনেই শোনা যায়, ‘দ্য নাম্বার ইউ আর কলিং ইজ আইদার সুইচড অফ অর নট রিচেবল্’। |