পাকুড়ের এসপি-কে মেরেছে এ রাজ্যের মাওবাদীরাই
প্রায় দু’বছর হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ, সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের একচেটিয়া সাফল্য, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ এত কিছুর পরেও জঙ্গলমহল নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কপালের ভাঁজ কিন্তু যাচ্ছে না।
কারণ, পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলের এক ঝাঁক মাওবাদী তরুণ-তরুণীই যে রাজ্যের গা-ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডের দুমকার কাঠিকুণ্ডে পাকুড়ের পুলিশ সুপার অমরজিৎ বলিহার-সহ ৭ পুলিশকর্মীকে হত্যায় মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সম্প্রতি জেনেছেন। ওই খবর পেয়ে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের আশঙ্কা, কিষেণজির হত্যার বদলা নিতে অদূর ভবিষ্যতে জঙ্গলমহলে শাসক দলের কোনও নেতা-মন্ত্রীর কনভয়ে একই কায়দায় হামলা চালাতে পারে মাওবাদীরা। এর আগে মে মাসে ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস নেতাদের উপরে হামলায় নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ার চার তরুণী ছিলেন বলে পুলিশ আগেই জেনেছিল।
গোয়েন্দাদের দাবি, কোনও ছোটখাটো দল নয়, কাঠিকুণ্ডে জনা ৫০ হামলাকারীর ৩৫ জনই ছিল পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলের এবং তাদের অর্ধেকই আবার মহিলা। বাকিরা এসেছিল ঝাড়খণ্ডের গিরিডি, ঘাটশিলা ও দুমকা থেকে। ২ জুলাই দুমকা থেকে ফেরার পথে কাঠিকুণ্ডে মাওবাদী হামলায় নিহত হন পাকুড়ের এসপি বলিহার। পুলিশি তদন্তে বেরোয়, মাওবাদীদের দলটি সেল্ফ লোডিং রাইফেল (এসএলআর) থেকে ১৫ মিনিট ধরে টানা ২০০ রাউন্ডেরও বেশি গুলি চালিয়েছিল। জুন মাসে বিহারের জামুইয়ে ধানবাদ-পটনা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের উপর হামলাতেও পশ্চিমবঙ্গের ওই মাওবাদী ক্যাডাররা ছিলেন বলে গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি।
সে দিন হামলার পর পাকুড়ের এসপি অমরজিৎ বলিহারের গাড়ির ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত বছর পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি, কোতোয়ালি, বেলপাহাড়ি, বাঁকুড়ার বারিকুল ও পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বলরামপুর এবং বাঘমুণ্ডি এলাকা থেকে ওই সব তরুণ-তরুণীকে মাওবাদী অ্যাকশন স্কোয়াডে নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েক জনের নামও জেনেছেন গোয়েন্দারা। এঁরা হলেন, শালবনির রাজু মাহাতো ওরফে বাপি, বেলপাহাড়ির সমীর খামরুই, মণিরাম সিংহ, বারিকুলের পুষ্প সিংহ, বলরামপুরের রাম মাঝি এবং বাঘমুণ্ডির বীরেন ও কল্পনা। গোয়েন্দাদের দাবি, বীরভূম জেলার পুরনো মাওবাদী শ্যামাপদ দাস ও তার স্ত্রী টুম্পাও হামলায় ছিলেন। তা ছাড়া, ঘাটশিলার শম্ভু সিংহ ও দারা সিংহ-ও এসপি-র উপর হামলায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই প্রশিক্ষিত কাডারদের কেউই এখনও বাড়ি ফেরেনি, দণ্ডকারণ্য কিংবা ওড়িশার মালকানগিরিতে তারা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে।
পুলিশ জানায়, মাওবাদী সংগঠনে তাদের নিয়োগের পর প্রথমে ওই জনা পঁয়ত্রিশ তরুণ-তরুণীকে ছত্তীসগঢ়ের দণ্ডকারণ্যে পাঠানো হয়। সেখানে গেরিলা যুদ্ধের কায়দা, হাতিয়ার প্রশিক্ষণ-সহ সংগঠনের অন্যান্য বিষয়ের উপর পাঠ নেন তাঁরা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মার্চ মাসে ঝাড়খণ্ডের বোকারোর ঝুমরা পাহাড়ে তাঁরা শেখেন কনভয়ে সশস্ত্র রক্ষী পরিবৃত কোনও টার্গেটকে কী ভাবে খতম করতে হয়। প্রশিক্ষণ চলে দেড় মাস, যার দায়িত্বে ছিলেন মাওবাদী নেতা প্রমোদ মাঝি ওরফে সমীর।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র এক অফিসার বলেন, “অমরজিৎ বলিহার পাকুড়ের এসপি হন মে-র মাঝামাঝি। তার আগেই কিন্তু ঝুমরা পাহাড়ে মাওবাদীদের ওই প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এসপি-র উপরে ওই হামলা আসলে ছিল প্রশিক্ষণের পর হাতেকলমে পরীক্ষা।”
ওই গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “অমরজিৎ বলিহার এমনিতে যে ওই এলাকায় মাওবাদীদের খুব অপরিহার্য টার্গেট ছিলেন, তা নয়। নতুন ওই ক্যাডারদের প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা কোথায় নেওয়া যায়, তার খোঁজ করছিলেন মাওবাদী নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে এই কাজ করাটা মুশকিল। ইতিমধ্যে মাওবাদীদের কাছে খবর আসে, অমরজিৎ বলিহার অন্ধ্রপ্রদেশের বিশেষ বাহিনী গ্রে-হাউন্ড-এর পরামর্শ নিয়ে পাকুড়ে মাওবাদীদের নিকেশ করতে চাইছেন। তার পরেই অমরজিতকে নিশানা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।”
পাকুড়ের এসপি-র উপরে হামলায় পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী ক্যাডারদের ওই ভূমিকার কথা জানার পরে এ রাজ্যের পুলিশকর্তারাও উদ্বিগ্ন। এক শীর্ষ অফিসারের কথায়, “পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা রাস্তায় কনভয়ে হামলা চালানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস পেয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ৩৫ জন তরুণ-তরুণী। এর পরে এ রাজ্যের শাসক দলের কোনও নেতা-মন্ত্রীর কনভয়েও তাঁরা হামলা চালাতে পারেন।” পুলিশের ওই শীর্ষকর্তা বলেন, “দাদার হত্যার বদলা নিতে কিষেণজির ভাই বেণুগোপাল ও তাঁর স্ত্রী ময়না মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাঁরা জঙ্গলমহলে কোনও বড়সড় হামলা চালিয়ে চমক দিতে চাইছেন। এ কাজে পশ্চিমবঙ্গের এত জন প্রশিক্ষিত ক্যাডার পেলে তো খুবই সুবিধে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.